মোঃ নূরুল ইসলাম, চাটমোহর (পাবনা) প্রতিনিধি ঃ
গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য এবং গ্রামের মানুষের ফসলী জমিতে উৎপাদিত পণ্য ক্রয় বিক্রয়ের প্রধান মাধ্যম হাটের সেই পুরনো জৌলুস আর নেই। গ্রাম গঞ্জের মধ্যে ছোট ছোট বাজার, হাটে যাওয়া আসার যোগাযোগ মাধ্যমের রাস্তাগুলোর দূরবস্থা, হাটে আগত মানুষের নিরাপত্তার অভাবসহ হাট ইজারাদার লোকদের লাগামহীন খাজনা আদায় হাটের দুরবস্থার প্রধান কারণ।
পাবনার চাটমোহর রেলবাজার (অমৃতকুন্ডা) হাট জেলার মধ্যে অন্যতম ও ঐতিহ্যগত ভাবে শত বছরের পুরাতন একটি হাট। এ হাটে কাঁচা তরিতরকারি থেকে শুরু করে গরু মহিষসহ সর্ব প্রকারের ফসলাদী ক্রয় বিক্রয় হয়ে থাকে। সপ্তাহে একদিন রবিবার ভোর থেকে শুরু হয় ভিন্ন ভিন্ন পণ্য সামগ্রীর সারাদিন ব্যাপি কেনা বেচা। কাগজে কলমে ৫ একর ৩০ শতকের বিশাল এই হাটের পরিধি থাকলেও অবৈধ দখল আর উপজেলা প্রসাশনের জায়গা লিজ দিয়ে দোকান বরাদ্দ দেয়ায় ক্রমশ হাটের জায়গা সংকুচিত হয়ে পড়েছে। প্রায় কোটি টাকার সরকারি রাজস্ব দিয়ে হাটটি ইজারা গ্রহণ করা হলেও হাটের জায়গার সংকীর্ণতা ও দখলদারদের ক্রমশ দখলদারিত্বে আকার অনেকটা ছোট হয়ে গেছে। এছাড়া হাটের সমস্ত এলাকা জুড়েই সংষ্কারের অভাবে ও অবস্থাপনায় ক্রেতা বিক্রেতাদের অভিযোগের অন্ত নেই।
এক যুগ আগেও এই হাটে ক্রেতা বিক্রেতাদের আগমনে থইথই করতো মানুষ। সপ্তাহে রবিবার হাটের দিনে আশপাশের ৩/৪ কিলোমিটার দুর থেকেও হাটে আগত মানুষের গুম গুম শব্দ শোনা যেতো। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা এই হাটকে কেন্দ্র করে সকল কর্ম ব্যস্ততা ফেলে এদিন ব্যবসায়ীক কাজে নিয়জিত হয়ে উৎবৃত্ত টাকা উপার্জন করতে দিন ব্যাপী ব্যস্ত সময় পার করতো। কিন্তু কালের বিবর্তনে নানা প্রতিকুলতায় আজকের এই ঐতিহ্যবাহী হাটটি ক্রমশ স্থিমিত হয়ে পড়েছে। এখন হাটে আর নেই সেই আগের মতো মানুষের পদচারনা, নেই হাটের সেই জৌলুস।
জগতলা গ্রামের হাটে আগত মোঃ আশরাফ আলী বলেন, আগের সেই জমজমাট রেলবাজারের (অমৃতকুন্ডা) হাট আর নেই। ছোট বেলায় বাবা যখন হাটে আসার জন্য বাড়ি থেকে রেব হতেন, সে সময় তার সাথে হাটে আসার জন্য কান্না কাটি করতাম। বাবা বাধ্য হয়ে আমাকে হাটে নিয়ে আসতেন। হাটে আসার পরে একটি বারের জন্যও তিনি চোখের আড়াল করতেন না আমাকে। কারণ এতো ভীরের মধ্যে যেন হারিয়ে না যাই। আর এখন হাটের মধ্যে হারিয়ে যাওয়া তো দুরের কথা ভিতরে ফুটবল খেলা যায়।
হাটের এমন দুরবস্থার নিয়ে হাট ব্যবসায়ীরা বলেন, আজকাল গ্রামে গঞ্জের মধ্যেও ছোট ছোট বাজার ও বড় হাটের বিপরীতে আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় ছোট ছোট হাটের উৎপত্তি হওয়ার কারণে এই হাটের দূরবস্থা। তাছাড়া হাটের মধ্যে প্রবেশ পথ বেড়োনের রাস্তা স্বল্পতায় বাইরের অনেক ব্যবসায়ীরাই এই হাটে আসতে অনীহা প্রকাশ করছে। হাটের উন্নয়নে বরাদ্দকৃত অর্থ সঠিক ভাবে উন্নয়ন কাজে ব্যবহার না হওয়ায় বর্তমানে হাটের যে অবস্থা তাতে করে হাটে আগত ছোট বড় ব্যবসায়ীরা এই হাট বিমুখ হচ্ছে। এছাড়াও গ্রামে উৎপাদিত ফসলাদী কৃষক সরাসরি শহরের মিল কিংবা বড় ব্যবসায়ীদের আড়তে গিয়ে বিক্রি করায় তারা হাটে নিয়ে আসে না। সব মিলে বিশেষ কোন পণ্য ক্রয় বিক্রয় করতে যা কিনা হাট ছাড়া সম্ভব নয় এমন কিছু পণ্যর জন্যই মানুষ হাটে আসেছে।