নাজিম হাসান,রাজশাহী থেকে :
কোহিনুর,বিলকিস, আয়শা ময়না বাগমারার প্রত্যন্ত এলাকা থেকে এসেছে বাগমারা মেডিকেলে বিভিন্ন অসুখ বিসুখ নিয়ে। মাত্র ৩ টাকার টিকিট কেটে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের ব্যবস্থা পত্র সাথে ফ্রি ওষধ পেয়ে ওরা এখন বেজাই খুশি। এই সব হতদরিদ্র নারীদের মত প্রত্যন্ত এলাকার পুরুষ রোগিরাও এসেছেন বিভিন্ন রোগ বালাই নিয়ে। ডাক্তার, কর্মচারীর সংকট, চাহিদা অনুয়ায়ী ওষধের স্বল্পতা, যন্ত্রপাতি সংকট ও বিকল সহ নানান সমস্যা ও সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে বাগমারা মেডিকেলের ডাক্তাররা রোগিদের চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করে তুলছেন এবং জটিল ও কঠিন রোগিদের পাঠাচ্ছেন জেলা সদর হাসপাতালে। বাগমারা মেডিকেলে কর্মরত ডাক্তার ও চিকিৎসা প্রত্যাশি রোগিদের সূত্রে জানা গেছে, প্রতিদিন সকাল নয়টায় এই মেডিকেল খুলে রোগি দেখা শুরু করেন ডাক্তাররা । টানা দুপুর দেড়টা দুইটা পর্যন্ত রোগি দেখা চলে এই মেডিকেলে। সর্দ্দিজ্বর, কাশি, গ্যাস, বিভিন্ন বাঁথা, পাতালা পায়খানা, চর্ম রোগ সহ নানান রোগ বালা নিয়ে এই মেডিকেলে প্রতিদিন হাজির হন প্রায় পাঁচশতাধিক রোগি। তারা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে মাত্র ৩ টাকার টিকিট কাটেন। এই টিকিট দিয়েই তারা বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের ব্যবস্থা পত্র ও বিনা মূল্যে ওষধ পেয়ে থাকেন। উপজেলার মাড়িয়া থেকে এসেছেন ছাহেরা বিবি(৬০)। তিনি পেটে গ্যাস ও মাজার বাঁথা জনিত রোগে এসেছেন। ডাক্তার দেখিয়েছেন। ওষধ নেওয়ার জন্য লাইনে অপেক্ষা করছেন। তিনি জানান, এর আগেও তিনি একই রোগে এখান থেকে চিকিৎিসা ও ওষধ নিয়ে ভালই সুস্থ হয়েছেন। এখন আবার এসেছেন। তবে প্রচন্ড ভীড় হওয়ায় লাইনে দাঁড়িয়ে কিছুটা কষ্ট হলেও ডাক্তারের সুন্দর ব্যবহার ও ফ্রি ওষধ পেয়ে তিনি খুব খুশি হয়েছেন। প্রায় একই মন্তব্য করে হামিরকুৎসার রাহেলা বেওয়া(৭০) জানান, রাজশাহী মেডিকেল থেকে পেটে আলসার জনিত অপরেশন করে এসেছেন। তার পর থেকে যে কোন সমস্যায় এখানে এসে চিকিৎসা ও ওষধ নিয়ে তিনি মোটমুটি সুস্থ আছেন। এছাড়া এখানে রয়েছে কমিউনিটি ভিশন সেন্টার। সেখানে বিনা মূল্যে সমন্বিত উন্নত চক্ষু সেবার ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়া সরকার নির্ধারিত মূল্যে বিভিন্ন প্রকার রক্ত পরীক্ষার ব্যবস্থা। এবং রয়েছে সার্বক্ষনিক এ্যম্বুলেন্সের ব্যবস্থা। যার ভাড়া মূল্য অতি সামান্য। বাগমারা থেকে জেলা সদর রাজশাহী যাওয়ার ভাড়া মাত্র নয়শ টাকা। তবে এখানকার এক্্র-রে মেশিনটি দীর্ঘদিন যাবৎ অকেজ হয়ে পড়ে রয়েছে। ফলে রোগিরা এই সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। আগে স্বল্প মূল্যে সিজারিয়ান অপারেশনের ব্যবস্থা থাকলেও এখন ডাক্তারের অভাবে তা বন্ধ রয়েছে। তবে কিছু রোগির স্বজনরা বলেছেন এটি ডাক্তাররা ক্লিনিক মালিকদের সাথে যোগসাজসে ইচ্ছাকৃত ভাবেই বন্ধ রেখেছেন। কারণ মেডিকেলের তুলনায় ক্লিনিকে সিজারিয়ান অপরেশন করলে ডাক্তারদের বেশি লাভ। এই মেডিকেলের শিশু বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বদরুল আলম জানান, আমাদের মোট জনবলের অর্ধেকও এখানে কর্মরত নেই। তারপরও আমরা নিরলস ভাবে রোগিদের সেবা দিয়ে যাচ্ছি শুধু বিবেকের তাড়নায়। মাঝে মাঝে রোগির চাপ এত বেড়ে যায় তখন আমরা সামান্য সময় টুকু রেষ্ট নিতে পারিনা। তার মতে, এখানে চাহিদা মত ডাক্তার কর্মচারীর সংখ্যা বাড়ালে এবং এক্্র-রে মেশিনটি চালু করা গেলে আরো বেশি রোগিদের সেবা দেওয়া সম্ভব হবে। এসব বিষয়ে জানতে চাইলে বাগমারা মেডিকেলরে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ আনোয়ারুল কবীর ডাক্তারসহ অন্যান্য জনবল সংকটের কথা উল্লেখ করে বলেন, আমরা বিভিন্ন শূন্য পথে লোক নিয়োগের জন্য মন্ত্রনায়লে চিঠি পাঠানো হয়েছে। এছাড়া এক্্র-রে মেশিনের বিষয়ে একই ভাবে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তার মতে , এখন সরকারি ভাবে ওষধের বরাদ্দের পরিমান বাড়ানো হয়েছে তাই এখানে রোগিদের পরিমান বৃদ্ধি পেয়েছে।