মশাহিদ আহমদ, মৌলভীবাজার ঃ মৌলভীবাজারে গ্রাহকের সময়মত কিস্তি পরিশোধের পরও মেয়াদশেষে বিভিন্ন অজুহাতে গ্রাহকের দাবি (পলিসি নং- ১৬৩/০৭) পূরণে গড়িমসি করছে মেঘনা লাইফ ইনসুরেন্স কোম্পানী লিমিটেড। সর্বশেষ ভুক্তভোগী বীমা গ্রাহক বাহরাইন প্রবাসী মোঃ নুরুল ইসলাম-এর পক্ষে তাঁর স্ত্রী হেলেনা আক্তার জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ (নং-৮২৪২, তারিখঃ ১১/০৯/১৯ইং) দায়ের করেছেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের তথ্য ও অভিযোগ শাখার সহকারি কমিশনার (ভারপ্রাপ্ত) গত ১৯ সেপ্টেম্বর ( স্মারক নং-০৫.৪৬.৫৮০০. ০১৬. ১৩. ০০১.১৮-৬৫ তারিখঃ ১৯/০৯/২০১৯) সংশ্লিষ্ট মেঘনা লাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানী লিমিটেড এর মৌলভীবাজার শাখার ইনচার্জকে গ্রাহকের দাবি পরিশোধের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য নির্দেশ প্রদান করেছেন। জানা গেছে, কোম্পানীর সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধিরা নানা প্রলোভনে গ্রামে গ্রামে মাঠকর্মী নিয়োগ দিয়ে আকষর্ণীয় অফারের প্রলোভন দেখিয়ে বীমা গ্রাহক তৈরী করতে থাকেন। বীমার নির্ধারিত মেয়াদ (অর্থাৎ ম্যাচিউরিটিপূর্ণ ) শেষ হলেও অনেকেই অফিসে মাসের পর মাস ঘুরেও দাবীকৃত টাকা না পেয়ে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। গ্রাহকদের লক্ষ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে গড়িমসি করছে বছরের পর বছর। সীমাহীন দুর্ণীতি-অনিয়ম এখানে নিয়মে পরিণত হয়ে আসছে। অফিসে প্রতিদিন অসংখ্য বীমা গ্রাহক আসলেও শাখা, সংশ্লিষ্টরা গ্রাহকদের সাথে অসদাচরণ করে তাড়িয়ে দেন। মেয়াদোত্তীর্ণ বীমা দাবি পরিশোধ না করার কারণে গ্রাহকদের মধ্যে চরম অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। তদন্তে দেখা গেছে, উক্ত অফিসের ইনচার্জ মাসুক মিয়া অনেক গ্রাহকদের কাছ থেকে কিস্তির টাকা রসিদের মাধ্যমে গ্রহন করে হিসাবে জমা না দিয়ে আত্মসাৎ করেন। কিন্তু কোম্পানি উক্ত টাকা আদায় না করে মাসুক মিয়াকে বরখাস্ত করলে মাসুক মিয়া অন্য একটি ইনসুরেন্স কোম্পানীতে চাকরি নিয়ে বহাল তবিয়তে আছেন। সমাধানের লক্ষ্যে কোম্পানির এমডিসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে রসিদের কপিসহ লিখিতভাবে অবহিত করা হলেও তারা কোন কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহন করতেছেন না। ফলে কোম্পানির প্রতি গ্রাহকদের আস্থা নষ্ট হচ্ছে। বীমা আইন ২০১০-এর ৭২ ধারার বিধান অনুসারে দাবি উত্থাপন হওয়ার পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে বীমা গ্রাহকদের পরিশোধের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু কোম্পানি এ আইন ধারাবাহিকভাবে লঙ্ঘন করে গ্রাহকদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছে। ভুক্তভোগী বীমা গ্রাহক বাহরাইন প্রবাসী নুরুল ইসলাম এর স্ত্রী হেলেনা আক্তার জানান- তাঁর স্বামী মেঘনা লাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানী লিমিটেড-মৌলভীবাজার শাখায় গত ০৮/০৮/২০০৭ সালে তিন লক্ষ টাকার বীমা করেন। প্রবাসে থেকেও অনেক কষ্ট করে নিয়মানুযায়ী কিস্তি জমা দিয়ে আসছেন। সর্বশেষ কিস্তির টাকা জমা দিতে অফিসে গেলে তাদের অফিসার ইনচার্জ কম্পিউটার নষ্টের কথা বলে হাতে লিখা রসিদ প্রদান করে কিস্তির টাকা গ্রহন করেন। কিন্তু, মেয়াদ শেষে কর্তৃপক্ষ সর্বশেষ কিস্তির টাকা ( ৩০০০০ হাজার টাকা ) জমা হয়নি মর্মে বীমার দাবীকৃত টাকা থেকে (৮০,০০০/-) কম দিয়ে ২, ২০,১৭৪ টাকা প্রদানের পত্র প্রদান করে। বিষয়টি বীমা কোম্পানীর উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে রসিদসহ লিখিতভাবে অবহিত করার পরও টাকা পরিশোধের কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। তিনি আরো বলেন- সাধারন মানুষের পক্ষে ভালো ও মন্দ বীমা প্রতিষ্ঠান বুঝে বীমা করা বেশ কঠিন। গুটি কয়েক বীমা কোম্পানীর সেবার মান নিম্নমানের হবার কারনে অনেক ভালো ভালো বীমা কোম্পানীও সাধারন মানুষের আস্থা অর্জন করতে ব্যর্থ হচ্ছে। গ্রাহকদের আস্থা নষ্ট করা বীমা কোম্পানীকে সঠিক রাস্তায় নিয়ে আসতে না পারলে হুমকির মুখে পরবে।