নওগাঁ প্রতিনিধি: নওগাঁর নিয়ামতপুরে থানা বিএনপির আহবায়ক কমিটি গঠন নিয়ে বিরোধের জেরে দু’গ্রুপের সংঘর্ষে আহত ইউপি মেম্বার ওয়াহেদ আলী (৪৫) মারা গেছে। সোমবার সকালে রাজশাহী পপুলারে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। এ ঘটনায় আরেক মেম্বার জাকির হোসেনসহ কমপক্ষে ২০ জন আহত হয়েছে। রোববার বিকেল ৫টার দিকে উপজেলার বাহাদুরপুর ইউনিয়নের খঁড়িবাড়ি বাজারে এ ঘটনা ঘটে। ওয়াহেদ আলী বাহাদুরপুর ইউনিয়নের ৭নম্বর ওয়ার্ড মেম্বার ও থানা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির ৩১নম্বর সদস্য এবং চকমনসুর গ্রামের মৃত- তমির উদ্দিনের ছেলে। এ ঘটনায় ডা: সালেক চৌধূরীর সমর্থক থানা বিএনপির সাবেক সাধারন সম্পাদক ছাদরুল আমিন চৌধূরী বাদী হয়ে ৩২ জনের নাম উল্লেখসহ কয়েকজন অজ্ঞাতনামাদের আসামী করে মামলা করেন।
বিএনপির নেতাকর্মী ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নিয়ামতপুর উপজেলায় নওগাঁ-১ (নিয়ামতপুর-পোরশা ও সাপাহার উপজেলা) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ডা: সালেক চৌধূরী ও জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমানের দু’টি গ্রুপ আছে। গত ১০/০৮/১৯ ইং তারিখে ইছাহাক আলীকে আহ্বায়ক করে ৩৩ সদস্য বিশিষ্ট থানা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। যা একটি বির্তকীত কমিটি। প্রথম বিরোধ প্রকাশ্যে রূপ নেয় গত ১৬ আগষ্ট ডা: সালেক চৌধুরীর নেতৃত্বে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানববন্ধনের মধ্য দিয়ে।
রোববার (গত ২২ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৫টার দিকে বাহাদুরপুর ইউনিয়নের খঁড়িবাড়ি বাজার সেডে ইউনিয়ন বিএনপির কমিটি ভেঙে দিয়ে আহ্বায়ক কমিটি গঠনের প্রস্তুতি চলছিল। সেখানে উভয় পক্ষের (ডা: সালেক চৌধূরী ও মোস্তাফিজুর রহমান) কর্মীসমর্থরা উপস্থিত ছিল। এক পর্যায়ে দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। এসময় স্থানীয় ইউপি মেম্বার ওয়াহেদ আলীর মাথায় লোহার রড দিয়ে আঘাত করা হলে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। এতে তার কান ও নাক দিয়ে রক্ত ঝরা শুরু হয়। স্থানীয়রা তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (রামেক) নেয়। অবস্থা খারাপ হওয়ায় সেখান থেকে ওয়াহেদ আলীকে অনত্র নিতে বলা হয়। এরপর রাতেই রাজশাহী পপুলারে নেয়া হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার সকাল ৮টার দিকে তিনি মারা যান। এঘটনায় ৮নম্বর ওয়ার্ড মেম্বার জাকির হোসেনসহ উভয় পক্ষের কমপক্ষে ২০ জন আহত হয়। থানা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করেই এ হামলার ঘটনায় ইউপি মেম্বার নিহত হয়েছে।
ওই ইউনিয়নের ওয়ার্ড মেম্বার ওয়াজেদ আলী বলেন, বিকেলে আমরা আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলাম। এসময় ডা: সালেক চৌধূরীর কর্মী সমর্থকরা লোহার রড ও লাঠিসোটা নিয়ে এসে আমাদের উপর অর্তকিত হামলা চালায়। মেম্বার ওয়াহেদ আলীর মাথায় লোহার রড দিয়ে আঘাত করা হলে আশঙ্কাজনক ভাবে উদ্ধার করে রাজশাহী নেয়া হয়।
বাহাদুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারন সম্পাদক ইমরান হোসেন বলেন, কিছুদিন আগে থানা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি গঠন নিয়ে দ্বন্দ্ব হয়। এরপর উভয়পক্ষই (ডা: সালেক চৌধূরী ও মোস্তাফিজুর রহমান) বাহাদুরপরু ইউনিয়ন বিএনপির কমিটি ভেঙে দিয়ে খঁড়িবাড়িতে আহ্বায়ক কমিটি গঠনের জন্য আলোচনার ডাক দেয়। ওখানে আলোচনা হলে বিশৃঙ্খলা হতে পারে। এজন্য আমি সেখানে রাজশাহী বিভাগীয় সম্মেলন সফল করতে একটা আলোচনা সভা করার জন্য থানায় একটা আবেদন করি, যেন তারা সেখানে আলোচনা করতে না পারে এবং কোন বিশৃঙ্খলা না হয়। কিন্তু তারপর উভয় পক্ষের সমর্থকরা সেখানে আসতে থাকে। ডা: সালেক চৌধূরীর সমর্থকদের বুঝিয়ে বিদায় করতে পারলেও মোস্তাফিজুরের সমর্থকরা সেখানে থেকে যায়। বিশৃঙ্খলা হতে পারে এজন্য থানায় সংবাদ দিলেও পুলিশ আসেনি। কিছুপর ডা: সালেক চৌধূরীর সমর্থকরা এসে হামলা করে। এমন কি ঘটনার সময়ও আমি থানাতে ফোন করেছি। পুলিশ এসেছে ফোন দেওয়ার ডের ঘন্টা পর ।যদি সময় মত পুলিশ আসত বা উপস্থিত থাকত তাহলে এ সংর্ঘষ হত না ।
এ বিষয়ে ডা: সালেক চৌধূরী বলেন, আগামী ২৯ সেপ্টেম্বর রাজশাহীতে বিভাগীয় সম্মেলন হওয়ার কথা। এরআগে জেলার কোথাও কোন ধরনের আলোচনা সভা হওয়ার কথা না। কিন্তু তারপরও খঁড়িবাড়িতে আলোচনা সভা হয়েছে যা আমার জানা ছিল না। ওই সময় আমি চেম্বারে বসে রোগী দেখছিলাম। পরে শুনলাম মোস্তাফিজুর রহমান চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার গোমস্তাপুর থেকে শতাধিক গুন্ডা ভাড়া করে নিয়ে এসে পরিকল্পিত ভাবে হামলা করে। আমারও দুইজন কর্মীর অবস্থা খারাপ, যা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমরা বাহাদুরপুর ইউনিয়নের খঁড়িবাড়িহাটে সভা করতে গেলে ডা: সালেক চৌধুরীর নির্দেশে আকস্মিক হামলা চালানো হয়। এতে আমাদের কয়েকজন কর্মী গুরুতর আহত হয় এবং একজন মারা যায়।
থানা বিএনপির আহ্বায়ক ইছাহাক আলী বলেন, ডা: সালেক চৌধূরী কোনভাবেই এ আহ্বায়ক কমিটিকে মেনে নিতে পারছিলেন না। তিনি নিজের স্বার্থ চরিতার্থ করতে তৎপর ছিলেন। একারণে তার নেতৃত্বে হামলা চালানো হয় বলে অভিযোগ করেন।
নিয়ামতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সামছুল আলম বলেন, খড়িবাড়িতে সমাবেশ করার জন্য কোন লিখিত আবেদন পাইনি এবং কাউকে অনুমতিও দেওয়া হয়নি। আর সেখানে সংর্ঘষের বিষয়ে কেউ ফোন করেছে কিনা আমার জানা নেই । ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে হামলার ঘটনা ঘটে। ঘটনায় আহত মেম্বার ওয়াহেদ আলী চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছে। থানায় একপক্ষ মামলা করেছেন। তবে এখন কোন হত্যা মামলা হয়নি।