কোরবানির মাংস সংরক্ষণ করবেন যেভাবে

আর কিছুদিন পর ঈদুল আজহা। ঈদুল আজহা মূলত মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য পশু কোরবানি করা হয়ে থাকে। পশু কোরবানির পর নিজের ভাগের অংশের মাংস অনেকে সংগ্রহ করেন। কোরবানির মাংস গরিবদের এবং আত্মীয়স্বজনদের দেয়ার পরও প্রয়োজন হয় সংরক্ষণের। অধিকাংশ মানুষই কমবেশি কোরবানির পশুর মাংস ফ্রিজে সংরক্ষণ করে থাকেন।

ফ্রিজে কতোদিন ও কিভাবে মাংস সতেজ ভাবে সংরক্ষন করা যায় এ নিয়ে অনেকের মনে প্রেশ্ন জাগে।

বিভিন্ন উপায়ে কোরবানির মাংস সংরক্ষণ করা যায়। তবে এমনভাবে সংরক্ষণ করতে হবে, যাতে এর স্বাদ ও পুষ্টিগুণ বজায় থাকে।

আসুন জেনে নেই কীভাবে কোরবানির মাংস সংরক্ষণ করবেন।

চার থেকে ছয় মাস

গরুর কাঁচা মাংস ফ্রিজে রাখলে চার থেকে ছয় মাসের মধ্যে খেয়ে ফেলা ভালো। কারণ, চার-ছয় মাস পর মাংসের পুষ্টিগুণ, গুণগতমান কমতে থাকে। তবে ফ্রিজের তাপমাত্রা শূন্য ডিগ্রি ফারেনহাইটে থাকলে মাংস প্রায় এক বছর পর্যন্ত রাখা যাবে। অন্যান্য মাংস

ফ্রিজে গরুর মাংস পাঁচ থেকে ছয় মাস, খাসির মাংস চার থেকে পাঁচ মাস পর্যন্ত রাখা যায়। তবে কলিজা বেশি দিন ফ্রিজে না রাখাই ভালো। এছাড়া উট, মহিষ তিন থেকে চার মাস রাখা যাবে। আর ভেড়া রাখা যাবে দুই থেকে তিন মাস। আর মুরগির মাংস সর্বোচ্চ এক মাস ফ্রিজে সংরক্ষণ করা যাবে।

পশু জবাই করার পর ফ্রিজে রাখা উচিৎ না

পশু জবাই করার পর সঙ্গে সঙ্গেই রান্না করা বা ফ্রিজে রাখা উচিৎ না। কারণ, কোরবানির পর অন্তত চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা মাংস শক্ত থাকে। মাংস একটু নরম হওয়ার পর রান্না করতে পারেন অথবা ফ্রিজে রাখতে পারবেন। এতে মাংস রান্না করার পর সুস্বাদু হবে এবং ফ্রিজে রাখলে অনেক দিন ভালো থাকবে।

ফ্রিজে রাখার আগে করণীয়

ফ্রিজের মধ্যে বাক্সের থেকে প্লাস্টিকের ব্যাগেই মাংস রাখা উচিত। চর্বিসহ মাংসগুলো আলাদা রাখাই ভালো। ফ্রিজে রাখার আগে, ধোয়ার পর পানি ভালো করে ঝরিয়ে নিন। না হলে অনেক দিন রেখে দিলে মাংস নষ্ট হয়ে যাবে।

মাছের সঙ্গে মাংস ফ্রিজে মাছের সঙ্গে মাংস রাখবেন না। এতে মাছ-মাংস দুটোই নষ্ট হয়ে যেতে পারে।

ইলেকট্রিসিটি না থাকলে

মাংস ফ্রিজে রাখার এক সপ্তাহের মধ্যে বাসায় ইলেকট্রিসিটি না থাকলে খুব একটা ফ্রিজ খুলবেন না। এতে মাংস শক্ত হওয়ার আগেই বাতাস লাগলে বেশি দিন ভালো থাকবে না।

৪০ ডিগ্রি ফারেনহাইট

৪০ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা তার নিচে কাঁচা মাংস ৪ থেকে ৬ দিন রাখা যায়। এছাড়া জিরো ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রার নিচে রাখলে গরুর কাঁচা মাংস ১২ মাস ভালো থাকবে।

ছোট ছোট প্যাকেটে সংরক্ষন

মাংস ছোট ছোট প্যাকেটে সংরক্ষন করুন। এতে ফ্রিজ থেকে বের করতে সুবিধা হবে। না হলে পুরো মাংস বের করা কঠিন হয়ে যাব

প্যাকেটের গায়ে তারিখ লিকে রাখা

মাংস ফ্রিজে রাখার আগে প্যাকেটের গায়ে তারিখ লিখে রাখা ভালো। এতে মাংসগুলো কত দিন সংরক্ষণ করা হয়েছে সেটা সহজেই বোঝা যাবে।

তাপমাত্রা

ফ্রিজে মাংস রাখার ক্ষেত্রে তাপমাত্রা ঠিক আছে কি না সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। যেই তাপমাত্রায় মাংস সব সময় বরফ থাকবে সেই তাপমাত্রা সেট করে তারপর মাংস রাখতে হবে।

বড় বড় টুকরো

ফ্রিজে মাংস রাখার ক্ষেত্রে বড় বড় টুকরো করে রাখতে হবে। কারণ, ছোট টুকরোতেও অনেক সময় পানি ও রক্ত জমে থাকে।’

রক্ত, চর্বি, পানি

মাংস ফ্রিজে রাখার আগে অবশ্যই মাংস থেকে রক্ত, চর্বি, পানি পরিষ্কার করে নিতে হবে। এগুলো থাকলে ব্যাকটেরিয়া জন্মাতে পারে।

প্লাস্টিকের ব্যাগ

মাংস অবশ্যই প্লাস্টিকের ব্যাগে বা অ্যালমোনিয়াম ফয়েলে রাখতে হবে। প্লাস্টিকের ব্যাগ বা অ্যালমোনিয়াম ফুয়েলে রাখলে ভেতরে বাতাস ঢুকে না। বাতাস ঢুকলে ব্যাকটেরিয়া জন্মাতে পারে।

মাংস জ্বাল দিয়ে সংরক্ষন

একটি বড় হাঁড়িতে মাংস জ্বাল দিয়ে রাখতে পারেন। এভাবে প্রতিদিন জ্বাল দিয়ে অন্তত চার থেকে পাঁচ দিন মাংস ভালো থাকবে। জাল দেওয়ার সময় মাংসের মধ্যে লবণ,হলুদ , বেশি করে আদা, রসুন ,পেঁয়াজ এবং পরিমান মতো মরিচের গুঁড়া দিতে পারেন অথবা শুধু মাত্র লবণ ও হলুদ দিয়েও জ্বাল দিতে পারেন ।

রান্না করা ও কাঁচা মাংস

রান্না করা ও কাঁচা উভয়ের ক্ষেত্রে বিষয়টি একরকম। তবে এগুলোও শূন্য ডিগ্রি ফারেনহাইটে ডিপ ফ্রিজে এক বছর রাখা যাবে। তবে স্বাদ, পুষ্টিগুণ থাকবে না।

তবে পুষ্টিগুণের কথা চিন্তা করতে হলে অবশ্যই মাংস এক মাসের মধ্যে খেয়ে ফেলা উচিত।