বিশ্বনাথ প্রতিনিধি :: প্রায় তিন বছর ধরে একের পর এক গাছ উপড়ে পড়ে ভেঙ্গে চলেছে সিলেটের বিশ্বনাথে উপজেলার সদর ইউনিয়নের টিএনটি (বিশ্বনাথ-মুফতিরগাঁও স্কুল) রোড। ভাঙ্গণ অব্যাহত থাকলেও জনগুরুত্বপূর্ণ এই রাস্তায় দীর্ঘদিন ধরে হচ্ছেনা কোন সংস্কার কাজ। আর সংস্কারের অভাবে এলাকাবাসীর দূর্ভোগ দিন দিন বেড়েই চলছে। ফলে জীবনঝুঁকি নিয়েই ব্যস্ততম রোডে প্রতিদিন শত শত যানবাহন চলাচল করছে।
উপজেলার ৪টি ইউনিয়নের শিক্ষার্থীদেরকে প্রতিদিন চরম দূর্ভোগ সহ্য করে যেতে হচ্ছে স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসায়। সাধারণ মানুষদের নিত্যপ্রয়োজনীয় কাজেও এই রাস্তা ব্যবহার করা হয়ে থাকে। রোগীদের বহনে পোহাতে হচ্ছে চরম লাঞ্চনা আর বঞ্চনা। রাস্তার এমন করুণ অবস্থা থাকার কারণে এর প্রভাব পড়ে ব্যবসায়ও।
এলাকাবাসী রোডের ভাঙ্গন রোধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দীর্ঘদিন ধরে রোডের পাশে ও বাসিয়া নদীর তীরে থাকা পুরানো গাছগুলো নিলামের মাধ্যমে কর্তন কিংবা ডাল-পালা ছাটাই করার দাবি জানিয়ে আসলেও এ ব্যাপারে কার্যকর কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে না। ফলে বিড়ম্বনাই এখন এলাকাবাসীর সম্বল হয়ে উঠেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এলজিইডির আওতাধীন টিএনটি রাস্তার প্রথম অংশে প্রায় তিন বছর পূর্বে বিশাল আকৃতির ৩টি রেইনট্রি গাছ ভেঙ্গে পড়ে। এর পর আরো দুটি। সর্বশেষ আনুমানিক ১০-১২ দিন পূর্বে একই আকারের আরও ১টি গাছ ঝড়ে উপড়ে পড়ে। একই সারিতে থাকা একাধিক গাছ হেলে আছে। এগুলো উপড়ে পড়লে অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠা ও বাসা ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার আশংঙ্কা রয়েছে। এদিকে প্রথম দিকে গাছ উপড়ে পড়ে রাস্তায় যে গর্তের সৃষ্টি হয়েছিল, তা এখন বিশাল বিশাল গর্তে পরিণত হয়েছে। সম্প্রতি গর্তের পরিমাণ আরোও বৃদ্ধি পেয়েছে। গাছ উপড়ে এভাবে সড়কে একের পর এক গর্ত সৃষ্টি হলেও মানুষের দূর্ভোগ কমাতে তা আর সংস্কার করা হচ্ছেনা।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, এক দিকে যেমন দীর্ঘদিন ধরে রাস্তায় কোন সংস্কার কাজ হচ্ছে না, তেমনি ১০-১২ দিন পূর্বে উপড়ে পড়া বিশাল আকৃতির গাছটি অপসারণ করারও কোন উদ্যোগ গ্রহন করছে না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। গাছগুলোর ব্যাপারে দ্রুত কোন পদক্ষেপ গ্রহন করা না হলে সড়কটি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। এতে এলাকাবাসীকে আরোও চরম দূর্ভোগ পোহাতে হবে।
গৃহিনী রাহেলা বেগম বলেন, রিক্সায় করে এ সড়ক দিয়ে প্রয়োজনীয় কাজে একবার বিশ্বনাথে গেলে পরবর্তী সময়ে শরীরের ব্যাথা কমানোর জন্য আমাদেরকে ঔষধ খেতে হয়। তাই দ্রুত সড়কটি সংস্কার করা জরুরি।
বিশ্বনাথ নতুন বাজার অটোরিক্সা (সিএনজি) সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান বলেন, দীর্ঘদিন ধরে কোন সংস্কার না হওয়াতে এমনিতেই সড়কটির অবস্থা করুণ। সাথে সাথে বিভিন্ন সময়ে বিশাল আকৃতির গাছগুলো উপড়ে পড়ে সড়কে সৃষ্টি হওয়া বিশাল গর্তগুলো মানুষের দূর্ভোগ বাড়িয়ে দিচ্ছে প্রতিনিয়ত। এসব কারণে জীবিকা নির্বাহের জন্যই জীবনের ঝুঁকি নিয়েই এ সড়কে শত শত চালক প্রতিদিন যানবাহন চালাচ্ছেন। এতে করে বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতিরও শিকার হচ্ছেন চালকরা।
বিশ্বনাথ নতুন বাজার বণিক কল্যাণ সমিতির কমিশনার এমদাদ হোসেন নাঈম ঝড়ে উপড়ে পড়া গাছটি সরানোর পাশাপাশি দ্রুত সড়কটি সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহন করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন।
ব্যবসায়ী রিপন সাহা বলেন, সড়কে থাকা হেলে পড়া অন্যান্য গাছগুলো যদি উপড়ে পড়ে তবে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বাসা ভেঙ্গে বিশাল ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে। তাই উপড়ে পড়া গাছ অপসারণ করার পাশাপাশি হেলে পড়া গাছগুলোর ব্যাপারেও দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে প্রশাসনকে।
বিশ্বনাথ সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছয়ফুল হক বলেন, দ্রুত সড়কটি সংস্কার করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।
বিশ্বনাথ উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) ফাতেমা-তুজ-জোহরা বলেন, নিলাম প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে গাছটির মূল্য নির্ধারণের জন্য বন বিভাগকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আর হেলে পড়া গাছগুলোর ব্যাপারে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।