স্টাফ রিপোর্টারঃ সুজানগর উপজেলার নাজিরগঞ্জ ইউনিয়নের বড়খাপুর গ্রামের জহুরুর কাজী হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবী করে গতকাল ( বুধবার) বিকেলে পাবনা সংবাদপত্র পরিষদ কনফারেন্স রুমে এক সাংবাদিক সম্মেলন করেন নিহত জহুরুলের পরিবারের সদস্যগন। লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন জহুরুলের বড় দুলাভাই মানিক। এ সময় উপস্থিত ছিলেন নিহত জহুরুলের স্ত্রী রতনা খাতুন, একমাত্র শিশু মেয়ে তানিশা খাতুন, ছোট ভাই ইমদাদুল, বড় বোন মাজেদা খাতুন, খালাতো ভাই হায়দার আলী প্রমুখ।
তারা জানান, জহুরুল হত্যাকান্ডের ৫/৬ মাস অতিবাহিত হয়ে গেলেও মামলার চার্জশীট দেওয়া হয়নি। মামলার আসামিরা জামিনে মুক্ত হয়ে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ভাবে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। মামলা তুলে নেওয়ার জন্য হুমকী দিচ্ছে। তার তাদের পরিবারের নিরাপত্তার জন্য মাননীয় প্রধান মন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন। তারা সুষ্ঠ তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের দৃষ্ঠান্তমূলক শাস্তি কামনা করেন। এ সময় নিহত জহুরুলের স্ত্রী রতনা খাতুন কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। তিনি বলেন ঘটনার দিন আমার স্বামীকে বাঁচাতে ঘটনাস্থলে আমি গেলে সন্ত্রাসীরা আমাকে মারপিট করে আমার পেটে থাকা বাচ্চাটিও নষ্ট করে দেয়।।
লিখিত বক্তব্যে আরও জানানো হয়, গত ১৮/০৩/২০১৯ তারিখে সকাল ১০ টায় জহুরুলের পিতা শাহজাহান কাজী (৬৫) বাড়ীর সামনে রাস্তা দিয়ে বাজারে যাওয়ার পথে একই এলাকার কমল ফকিরের ছেলে রুবেল ফকির সরকারি রাস্তা কেটে বালি ফেলবে মর্মে ড্রেন কাটছিলো। তিনি তাকে লোকজনের চলাচলের রাস্তা রেখে ড্রেন করার কথা বললে তার সাথে রুবেল এর তর্কবিতর্কের এক পর্যায়ে রুবেল অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে এবং তাকে দেখে নেওয়ার হুমকী দেয়। ঘটনার দিন বিকেল সাড়ে ৩ টার দিকে শাহজাহান কাজীর ছেলে জহুরুল কাজী (৩৫) পদ্মানদীতে নৌকার ভিতরের পানি বাহির করতে যাওয়ার পথে বড়খাপুর গ্রামের জনৈক মেহের মোল্লার বাড়ীর সামনে গমের ক্ষেতে পৌছামাত্রই কমল ফকিরের ছেলে রুবেল ফকির (২১), রিয়াজ শেখের ছেলে বাবু শেখ ( ২৩) , হাতেম ফকিরের ছেলে কমল ফকির (৫২), ওমর আলী ফকিরের দুই ছেলে আওয়াল ফকির (২৫) এবং একলাস ফকির(১৮), হাতেম ফকিরের ছেলে শমর আলী ফকির(৫৫), শমর আলী ফকিরের দুই ছেলে শাহিন ফকির( ৩০) এবং সোহেল ফকির (২৬), হোসেন আলী ফকিরের ছেলে বকু ফকির (৪৫), বকু ফকিরের ছেলে শামছু ফকির (২৮), হোসেন আলী ফকিরের ছেলে শওকত ফকির (৪৫), সর্ব সাং বড়খাপুর, থানা – সুজানগর, জেলা পাবনা সহ ১৬/১৭ জন হাতে থাকা দা, চাপাতি, হাসুয়া, লোহার রড, হাতুড়ী ও লাঠিসোটা ইত্যাদি দেশিও অস্ত্র নিয়ে আক্রোমন করে।
আসামী কমল ফকিরের হুকুমে আসামী রুবেল তার হাতে থাকা ধারালো দা দিয়ে জহুরুল কাজীর মাথায় কোপ মারে। এতে সে রক্তাক্ত জখম হয়ে চিৎকার দিয়ে মাটিতে লুঠে পড়ে। চিৎকার শুনে জহুরুলকে বাঁচাতে তার বড় বোন সাজেদা খাতুন ঘটনাস্থলে গেলে বাবু শেখ তার হাতে থাকা লোহার রড দিয়ে এলোপাথারী ভাবে আঘাত করে শরিরীরের বিভিন্ন স্থানে রক্তাক্ত জখম করে। তাদের চিৎকারে ছোট ভাই ইমদাদুল সহ জহুরুলের স্ত্রী রতনা খাতুন এগিয়ে গেলে তাদেরকেও বেধর মারপিট করে জখম করা হয়। এলাকাবাসীর সহযোগিতায় আহতদেরকে উদ্ধার করে সুজানগর উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ভর্তি করা হয়। জহুরুল এর অবস্থা অবনতি হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য পাবনা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। তার অবস্থা আরও আশংকাজনক হওয়ায় তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজে রেফার্ড করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৯ মার্চ /১৯ বেলা ১১ টায় মৃত্যুবরণ করে। এ ব্যাপারে সুজানগর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। যার নং ১৩, তাং ১৯/৩/১৯ ই। ধারা: ১৪৩/৩২৩/৩২৫/৩০২/৩০৭/৫০৬/১১৪।
মামলার পর থেকে পুলিশ তদন্ত শুরু হয়। কোন আসামী গ্রেফতার হয়না। এর ৩ মাস পর সিআই ডি মামলাটি গ্রহণ করে। আসামী গ্রেফতার হয়। কয়েকজন জামিনে বেড় হয়। বর্তমানে সিআইডি তদন্ত কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ ( মোবাঃ ০১৭১১-৪৭২৫০৩) এর কাছে মামলাটি আছে। চার্জশিট দিতে দেরী করছেন এবং মামলা থেকে কয়েকজন আসামীর নাম বাদ দেওয়ার প্রস্তাব করেছেন উক্ত তদন্তকারী অফিসার। এদিকে আসামীরা বিভিন্ন ভাবে আমার এবং আমার পরিবারের লোকজনকে ভয়ভিতি দেখাচ্ছে। তারা বলে বেড়াচ্ছে মামলা তুলে না নিয়ে আমাদেরও অবস্থা আমার ছেলে মত হবে।