ঈশ্বরদী (পাবনা) সংবাদদাতাঃ
ঈশ্বরদীর জয়নগরে কেপিআইভূক্ত (সরকারের বিশেষ সংরক্ষিত এলাকা) পাওয়ার গ্রীড কোম্পানীর অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি)তে দীর্ঘদিন ধরে চরম বিশৃংখলা ও অনিয়ম বিরাজ করছে। ৭৮ একর জমির উপর প্রতিষ্ঠিত এই প্রতিষ্ঠানে ১ লাখ ৩২ হাজার এবং ২ লাখ ৩০ হাজার কিলো ভোল্টের গ্রীড সাবষ্টেশন রয়েছে। এই সাবষ্টেশন হতে জাতীয় গ্রীডে বিদ্যুৎ সরবরাহ হয়ে উত্তরাঞ্চল ও দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় বিদ্যুৎ সঞ্চালিত হয়। গুরুত্বপূর্ণ এই প্রতিষ্ঠানটি দূর্বল নিরাপত্তা ব্যবস্থার পাশাপাশি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে। কলোনীর সরকারি বাসায় কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বাস করলেও বেতন হতে বাসা ভাড়া কর্তন হচ্ছে না। এতে বাসা ভাড়া খাতে সরকারের প্রতি মাসে লক্ষাধিক টাকা রাজস্ব ক্ষতি হচ্ছে। জয়নগর ছাড়াও ঈশ্বরদীতে এই প্রতিষ্ঠানের জিএমডি অফিস রয়েছে। অফিগুলোতে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়ম মাফিক অফিস করতেও দেখা যায়না। প্রতিবছর এখানকার জমিতে লক্ষ লক্ষ টাকার আম, কাঁঠাল, নারিকেল, লিচুর উৎপাদন হলেও সরকারি কেষাগারে কোন অর্থ জমা হয় না। বছরের পর বছর ধরে এই অনিয়ম ঈশ্বরদীর পিজিসিবিতে চললেও দেখার কেউ নেই।
সূত্র মত্রে এবং পিজিসিবি’র বেতন বিল পর্যলোচনা করে দেখা যায়, ২ জন সহকারী প্রকৌশলী , ৭জন উপ-সহকারী প্রকৌশলী, ১জন হিসাব সহকারী মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন এবং কুক দীর্ঘদিন ধরে কলোনীর সরকারি বাসায় পরিবার নিয়ে বসবাস করলেও বেতন হতে বাসা ভাড়া খাতে অর্থ কর্তন হচ্ছে না। ৭জন উপ-সহকারী প্রকৌশলীর মধ্যে রয়েছেন, মোজাম্মেল হোসেন, আহমদ আলী, আল-ফারুক আল আজাদী, মুস্তাফিজুর রহমান, মহসীন আলম, হাসানুজ্জামান, মউনুল হক। বর্তমান বেতন স্কেল অনুযায়ী উক্ত কর্মকর্তাদের প্রতিমাসে জনপ্রতি ১৬,৩৮৪ টাকা হতে ১৪,০০০ টাকা করে বাসা ভাড়া কর্তনের নিয়ম থাকলেও কর্তন না করে বাসা ভাড়ার টাকা প্রদান করা হচ্ছে। বাসায় বসবাসকারীদের ভাড়া কর্তন ছাড়াও মেইনটেনেন্স খরচ বাবদ বেতন স্কেলের শতকরা সাড়ে সাত ভাগ কর্তনের সরকারি বিধান থাকলেও এই অর্থও কাটা হচ্ছে না।
হিসাব সহকারী হুসাইন হোসেন শেখ সিঙ্গেল বরাদ্দ নিয়ে পরিবারসহ বসবাস করছেন। তিনি প্রতি মাসে বাসা ভাড়া খাতে ১১,৬৪৮ গ্রহন করলেও কর্তন করা হয় ২,১৫৪ টাকা। এছাড়া মসজিদের ইমাম তাজুল ইসলাম, মুয়াজ্জিন আলী আহমদ এবং কুক হাফিজুর রহমান সরকারি বাসায় বাস করলেও ভাড়া কাটা হয় না। মসজিদের মুয়াজ্জিন আলী আহমদ ভাড়া না দিয়েই ডাবল বাসা বরাদ্দ নিয়ে দুই ছেলে, বউ ও তাদের ছেলেমেয়ে নিয়ে বসবাস করছেন।
সহকারি প্রকৌশলী মশিউর রহমান ও অনুপম ভদ্র এবং হিসাব বিভাগের ডেপুটি ম্যানেজার জাকির হোসেন সিষ্টেম প্রটেকশনের নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয়ের ৩য় তলায় ১টি করে কক্ষে ব্যাচেলার হিসেবে বসবাস করলেও বেতন হতে কোন টাকাই কাটা হয় না।
এদিকে ফোরম্যান আব্দুল মান্নান ও সিকিউরিটি গার্ড মকলেছুর রহমান বিধি মোতাবেক ভাড়া দিয়ে ঠিকই বাস করছেন। পিজিসিবির অধীনস্থ উচ্চ বিদ্যালয়ের ২জন শিক্ষক কোয়ার্টারে বাস করলেও শুধুমাত্র আয়েশা সিদ্দিকা নামের জনৈকা শিক্ষিকার বেতন হতে বিধি মোতাবেক বাসা ভাড়া কর্তন হয়। নূর আহম্মদ নামের অপর শিক্ষকের ভাড়া কাটা হয় না। প্রধান শিক্ষক শহিদুল ইসলাম ব্যাচেলর রূম নিয়ে একা থাকলেও তারও ভাড়া কর্তন হয়না। হিসাব বিভাগের সাথে যোগসাজেশ করেই বাসা ভাড়া খাতে রাজস্ব ফাঁকি দেয়ার অভিযোগ রয়েছে।
এসব বিষয়ে ২১ জুলাই রবিবার সরেজমিনে জয়নগর পিজিসিবি ও ঈশ্বরদী জিএমডিতে হিসাব বিভাগের ডেপুটি ম্যানেজার জাকির হোসেনের সাথে দেখা করতে গেলে জানা যায়, তিনি রবিবার দুপুরের দিকে খুলনা হতে অফিসে আসেন, আবার বৃহস্পতিবার ১২ টার মধ্যেই চলে যান। সোমবার মোবাইলে এসব বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মোটর সাইকেলে আছি ৩০ মিনিট পরে ফোন দেন। পরে বারংবার ফোন দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
সবুজ প্রকৃতি ঘেরা ও সুন্দর পরিবেশে জয়নগর পিজিসিবিতে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বসবাসের জন্য অনেকগুলো দোতালা ও তিনতলা কোয়ার্টার রয়েছে। দীর্ঘদিন ব্যবহার এবং সংস্কার কাজ না করায় কয়েকটি ভবনের বেহাল দশা। কলোনীতে শতাধিক ফলন্ত আম, শতাধিক কাঁঠাল ও নারিকেল গাছ রয়েছে। লিচু গাছের সংখ্যাও অনেক। প্রতিবছর এখানে বিপুল পরিমান আম, কাঁঠাল, নারিকেল ও লিচু উৎপাদন হলেও সরকারি কোষাগারে ফল বিক্রির কোন অর্থ জমা পড়ে না।
এই বিষয়ে ২১ জুলাই জয়নগর তত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায় অফিসে একজন নারী পিয়ন ছাড়া কেউই নেই। শহরে গ্রীড মেইনটেনেন্স বিভাগের (জিএমডি) নির্বাহী প্রকৌশলী এনায়েত করিমের কাছে বাসা ভাড়া কর্তন প্রসংগে জানতে চাইলে তিনি বলেন, নতুন যোগদান করেছি। এখন কিছু বলতে পারব না। বিপুল পরিমাণ আম,কাঁঠাল, নারিকেল ও লিচু প্রসংগেও তিনি একই কথা বলেন। এসময় উপস্থিত নির্বাহী প্রকৌশলীর গাড়িচালক বলেন, এগুলো সকলের মাঝে ভাগ করে দেয়া হয়।