পৌরসভা গঠনের দেড় যুগ পার হলেও উন্নয়নের তেমন কোন ছোঁয়া লাগেনি রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার ভবানীগঞ্জ পৌরসভা এলাকায়। উপজেলা সদরের এই পৌরসভায় নাগরিক সুবিধা বলতে কিছু নেই। এখানকার ওয়ার্ড গুলোতে আধুনিকতার কোন ছোঁয়া লাগেনি। বৈদ্যুতিক বাতি, পানি, ড্রেনেজ ব্যবস্থা, রাস্তা-ঘাটের দূরাবস্থাসহ আধুনিক নাগরিক সুবিধা না থাকায় নানান সমস্যার কারনে নাজেহাল পৌরবাসী। পৌরসভার বাসিন্দা ও ভবানীগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়ী সূত্রে জানা গেছে, এই পৌরসভা উপজেলার প্রাণ কেন্দ্রে অবস্থিত। উপজেলার প্রান কেন্দ্র ভবানীগঞ্জ বাজার এলাকা এখন নানা সমস্যায় জর্জরিত। বাজার এলাকার সরু রাস্তায় যানবাহন চলাচলেও যানজটের কবলে পড়তে হয়। বাজার এলাকায় প্রভাবশালীদের দখলের কারণে থমকে আছে রাস্তা সম্প্রসারনের কাজ। মাঝে মাঝে পৌর কর্তৃপক্ষ রাস্তা সম্প্রসারনের উদ্যোগ নিলেও তা কাজে আসেনি বলে জানা যায়। এছাড়াও বাজারের মধ্যে সামান্য বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হলে চলাচলে দূর্ভোগ পোহাতে হয়। জানা যায়, ২০০০ সালে বাগমারার ভবানীগঞ্জ পৌরসভা স্থাপিত হয়।
পৌরসভা বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক ইয়াছিন আলী মাস্টার ১ বছর ৮ মাস দায়িত্ব পালনের পর ২০০২ সালে নির্বাচন হলে আ’লীগ নেতা খোদাবক্স প্রামানিক চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এরপর পৌর বিএনপি সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক প্রামানিক মেয়র নির্বাচিত হয়। সর্বশেষ ২০১৫ সালে ভবানীগঞ্জ পৌর আ’লীগ সভাপতি আব্দুল মালেক মন্ডল মেয়র নির্বাচিত হয়ে তিনিই দায়িত্ব পালন করছেন। পৌরসভা গঠনের দেড় যুগ অতিবাহিত হবার পর মেয়র বদল হলেও বদল হয়নি পৌরসভার উন্নয়ন চিত্র। দেড় যুগেও আলোর মুখ দেখেনি পৌরবাসী। এদিকে গত ২০১৬ সালের ১৫মে রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে সহকারী সচিব একেএম আনিছুজ্জামান স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে স্থানীয় সরকার বিভাগের গত ৩১মে/১১ইং তারিখের ৮১১নং স্বারকের পরিপত্র মোতাবেক সরকার রাজশাহী জেলাধীন ভবানীগঞ্জ পৌরসভাকে ‘গ’ শ্রেনী থেকে ‘খ’ শ্রেনীর পৌরসভায় উন্নীত করেন। পৌর এলাকার কর্নিপাড়া, সাদোপাড়া, খাজাপাড়া, সূর্যপাড়া, জানিপুর, নাজিরপুর ও হাজরাপাড়া, বাজার এলাকার হেদায়েতিপাড়া, মাস্টারপাড়া, হিন্দুপাড়া, দরগা মাড়িয়াসহ বিভিন্ন মহল্লায় এখনো কোন আধুনিকতার ছোঁয়া না লাগায় জনসাধারনের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। উপজেলার নাম বাগমারা হলেও শুধু পুলিশ স্টেশন ছাড়া সকল অফিস আদালত ভবানীগঞ্জ বাজারে হওয়ার কারণে উপজেলাবাসীকে প্রতিদিনই কোন না কোন কাজে যেতে হয় ভবানীগঞ্জ। উপজেলা সদরের বাজার হবার পরেও ভবানীগঞ্জের রাস্তাা-ঘাটের করুন দশা দেখা দিয়েছে। সামান্য বৃষ্টিতে বাজারের মধ্যে জমে থাকা পানি ও কাদায় চলাচলের অযোগ্য হয়ে উঠে। গত কয়েক দিনের বৃষ্টির কারনে বাজার এলাকার কলেজ মোড়, উপজেলা পরিষদের মেইন গেট এলাকা, মাস্টারপাড়া রোড, ব্র্যাক মোড়, শিশু ও শিল্পকলার সামনের রাস্তা, নিউ মার্কেট রোড, কলেজ মোড় থেকে হেদায়েতীপাড়া হয়ে গোড়াউন মোড় রোড, জিরো পয়েন্ট থেকে অটোস্ট্যান্ড রোড, সরকারী বালক বিদ্যালয় ও প্রাথমিক বিদ্যালয় রোডসহ বিভিন্ন স্থানে জলাবদ্ধতা ও কাদার কারনে চরম দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে স্কুল কলেজগামী শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ীসহ চলাচলকারীদের। হাটের দিনে যানজটের কারনে ভোগান্তি পোহাতে হয় পথচারীদের। পৌরসভার প্রান কেন্দ্র জিরো পয়েন্ট এলাকায় গরুর হাট বসার কারনে সমস্ত বাজার এলাকা নোংড়া হয়ে যায় যা পরিবেশের জন্য বিরুপ প্রভাব ফেলে। অপরদিকে জানা যায়, সম্প্রতি ৫৮ লাখ টাকা ব্যয়ে বাজার এলাকায় পয়ঃনিস্কাশনের জন্য নির্মিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা তেমন কোন কাজে আসছেনা। কলেজ মোড় এলাকার ব্যবসায়ী আব্দুল হামিদ, আব্দুল মান্নান জানান, ভবানীগঞ্জের রাস্তা-ঘাটের করুন দশা। জমে থাকা কাদা-পানিতে চলাচলে দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। একই এলাকার ব্যবসায়ী সেলিম রেজা জানান, তার দোকানের সামনে প্রতি বছরই নিজ উদ্যোগে রাস্তার জমে থাকা কাদাপানি সরাতে হয়। যোগাযোগ করা হলে ভবানীগঞ্জ পৌর মেয়র আব্দুল মালেক মন্ডল জানান, গোডাউন মোড় থেকে ব্র্যাক পর্যন্ত পর্যন্ত রাস্তার কাজ করবে সড়ক ও জনপদ বিভাগ এবং গোডাউন মোড় থেকে কলেজ মোড় পর্যন্ত রাস্তার কাজ পৌরসভার মাধ্যমে অচিরেই আরম্ভ হবে। পৌরসভার উন্নয়নের কাজ অব্যাহত রয়েছে বলেও তিনি জানিয়েছেন।