শেখ হাসিনার ট্রেনবহরে মামলার রায়ের কপি হাইকোর্টে

তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেতা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ট্রেনবহরে গুলি ও বোমা হামলা মামলার ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে পৌঁছেছে। পাবনার দায়রা আদালত হতে গত সপ্তাহে হাইকোর্টের ডেথ রেফারেন্স শাখায় এ সংক্রান্ত নথি এসে পৌঁছায়। নথি আসার বিষয়টি হাইকোর্টের স্পেশাল অফিসার সাইফুর রহমান নিশ্চিত করেছেন । তিনি বলেন, বিশেষ টাইব্যুনালের দেওয়া মৃত্যুদন্ডের রায়ের নথি পেয়েছি। পরে তা ডেথ রেফারেন্স শাখায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।


১৯৯৪ সালে ঈশ্বরদীতে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা ও বর্তমান পধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বহনকারী ট্রেনে গুলি ও বোমা হামলার ঘটনায় করা মামলার রায়ে ৯ আসামিকে মৃত্যুদন্ড দেওয়া হয়। মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্তরা হলেন, জেলা বিএনপির মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক কেএম আখতারুজ্জামান, ঈশ্বরদী পৌর বিএনপির (স্থগিত কমিটি) সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া পিন্টু (পলাতক), কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক পৌর মেয়র মোকলেসুর রহমান ওরফে বাবলু, তাঁর ভাই সাবেক ছাত্রদল নেতা রেজাউল করিম ওরফে শাহিন, অপর ভাই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক নেতা মাহবুবুর রহমান ওরফে পলাশ, বিএনপি নেতা অটল, ঈশ্বরদী পৌর যুবদলের সভাপতি নূরে মোস্তফা শ্যামল, স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা আজিজুর রহমান শাহীন ও বিএনপি নেতা ও সাবেক কমিশনার শামসুল আলম। এছাড়াও ২৫ জনকে যাবজ্জীবন এবং ১৩ জনকে দশ বছর করে কারাদন্ড দেওয়া হয় । পাবনার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ রুস্তম আলী গত ৩ জুলাই এ রায় দেন। একইসাথে বিচারক মামলার সকল কার্যক্রম ফৌজদারি কার্যবিধির (সিআরপিসি) ৩৭৪ ধারা অনুযায়ী হাইকোর্টে প্রেরণের নির্দেশ দেন।


ওই আইনের ৩৭৪ ধারায় বলা হয়েছে, দায়রা আদালত যখন মৃত্যুদন্ড ঘোষণা করেন, তখন হাইকোর্ট বিভাগের নিকট কার্যক্রম পেশ করতে হবে এবং হাইকোর্ট বিভাগ অনুমোদন না করা পর্যন্ত দন্ড কার্যকর হবে না।
আইন বিশেষজ্ঞরা জানান, এটাই ডেথ রেফারেন্স নামে পরিচিত। এতে মামলার পূর্ণাঙ্গ রায়, কেস ডকেটসহ গুরুত্বপূর্ণ সকল নথি সংযুক্ত থাকে। ডেথ রেফারেন্সের পাশাপাশি সাজার রায়ের বিরুদ্ধে আসামিরা আপিল করতে পারেন। পেপারবুক প্রস্তুুতের পর হাইকোর্টে ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের উপর একসাথে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়।
প্রসঙ্গত: শেখ হাসিনা ১৯৯৪ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর উত্তরাঞ্চলে দলীয় কর্মসূচিতে ট্রেনবহর নিয়ে খুলনা হতে সৈয়দপুর যাচ্ছিলেন। ট্রেনটি পাবনার ঈশ্বরদী রেলওয়ে জংশন স্টেশনে ঢোকার সময় ও পরে ট্রেনবহরকে লক্ষ্য করে বিএনপির স্থানীয় নেতা-কর্মীরা ব্যাপক গুলিবর্ষণ ও বোমা হামলা করে। এ সময় পুলিশ বিএনপি নেতা-কর্মীদের ছত্রভঙ্গ করার জন্য এগিয়ে গেলে পুলিশকে লক্ষ্য করেও বোমা হামলা চালানো হয়।


বিএনপি সরকারের আমলে এ ঘটনায় জিআরপি থানার মামলায় প্রথমে ৭জনকে আসামী করে চূড়ান্ত প্রতিবেদন আদালতে দেয়া হলেও আদালত অধিকতর তদন্তের জন্য সিআইডির উপর দায়িত্ব অর্পণ করেন। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর মামলাটির পুন:তদন্ত হয়। ১৯৯৭ সালের ৩ এপ্রিল সিআইড ঈশ্বরদীর বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের নেতা-কর্মীসহ ৫২ জনের নামে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয়। দীর্ঘ ২৫ বছরে এই মামলার ৫ জন মৃত্যুবরণ করেন। আদালত ৪৭ জনের বিরুদ্ধে সাজার রায় ঘোষণা করেন। এদের মধ্যে ১৪ জন পলাতক রয়েছেন।