অফিসিয়ালি বয়স ৩৯ ছুঁইছুঁই। বাস্তবে হয়তো আরও বেশি। চোয়ালভর্তি শুভ্র দাড়িতেই তার বয়স স্পষ্ট! যে কারণে পারফরম্যান্সের গ্রাফটা নিম্নমুখী।
ক্রীড়া বিশ্লেষকদের অনেকেই মনে করেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ তার সেরা সময় অতিক্রম করে ফেলেছেন। এখন তার কাছ থেকে যা পাওয়ার সেটা বাড়তি প্রাপ্তি!
ব্যাটিংয়ে ছন্দ হারিয়ে ফেলায় মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে নিয়ে গত কয়েক বছর ধরে সমালোচনা তুঙ্গে। সেই সমালোচনার কারণে গত মাসে ভারত সফরে টি-টোয়েন্টি থেকে অবসর নেন। তার সেই অবসরের ঘোষণায় পরিবারও দ্বিমত ছিল। তারাও মনে করেন দেশকে আরও সার্ভিস দেওয়ার সামর্থ রয়েছে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের।
কিন্তু সমালোচনার তীরে অভিজ্ঞ এই তারকা এতটাই ব্যথিত হয়েছেন- যে কারণে তিনি অবসরের সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হন।
২০২১ সালে জিম্বাবুয়ে সফরে নিজের টেস্ট ক্যারিয়ারের সেরা ১৫০* রানের অনবদ্য ইনিংস খেলে হঠাৎ করেই অবসর নেন। তার সেই অবসর নিয়েও অনেক আলোচনা হয়েছে।
খোদ টিম ম্যানেজমেন্ট এমনকি তৎকালীন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনও তাকে অবসরের সিদ্ধান্ত নিয়ে ভাবতে বলেছেন; কিন্তু তিনি তার সেই সিদ্ধান্ত বদল করেননি।
তারপর থেকে ওয়ানডে আর টি-টোয়েন্টি খেলে যাচ্ছেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ; কিন্তু পারফরম্যান্সে ধারাবাহিকতা না থাকায় সমালোচনা তার পিছু ছাড়ছিল না। সেই সমালোচনার কারণেই গত মাসে টি-টোয়েন্টি থেকে অবসর নেন।
এখন শুধু ওয়ানডে ফরম্যাটে খেলে যাচ্ছেন। ওয়ানডেতেও পারফরম্যান্সের ধারাবাহিকতা হারিয়ে ফেলেছেন। সোমবারের আগে শেষ ৯ ম্যাচে নেই কোনো সেঞ্চুরি। মাত্র এক ম্যাচে করেছেন ৫৬ রান।
এদিন আরব আমিরাতের শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ব্যাট করতে নামার আগে শেষ ৪ ওয়ানডেতে ০, ১, ২ ও ৩ রানে আউট হন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।
আফগানিস্তানের মতো তুলনামূলক দুর্বল দলের বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের প্রথম দুই খেলায় ২ ও ৩ রানে আউট হন জাতীয় দলের এই তারকা ক্রিকেটার।
টানা চার ম্যাচে- শূন্য, এক, দুই ও তিন রানে আউট হওয়ার পরও টিম ম্যানেজমেন্ট সিরিজের ‘অঘোষিত’ ফাইনাল ম্যাচে একাদশে রাখে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে।
টিম ম্যানেজমেন্টের এই আস্থার জবাব ভালোভাবেই দিলেন মাহমুদউল্লাহ। এদিন দলের চরম বিপর্যয়ের মুহূর্তে ৬ নম্বর পজিশনে ব্যাটিংয়ে নেমে ইনিংসের শেষ বল পর্যন্ত খেলে যান। ব্যাটিংয়ে নামার পর থেকেই বাড়তি দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেন।
ইনিংসের ৪০তম ওভারে ক্যারিয়ারের ২৯তম ফিফটি পূর্ণ করেন রিয়াদ। ওয়ানডেতে ৭ম ইনিংস পর ফিফটি। তিন সংস্করণ মিলিয়ে ১৪ ইনিংস পর ৬৩ বলে ফিফটি হাঁকালেন রিয়াদ।
ফিফটির পর দলের স্কোর বাড়ানোর পাশাপাশি একটা সময়ে সেঞ্চুরির জন্যও লড়াই করেন রিয়াদ; কিন্তু শেষদিকে হয়তো মাংশপেশিতে টান লাগে, যে কারণে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে রান নিতে দেখা যায় তাকে। তারপরও চেষ্টা করেছেন সেঞ্চুরির জন্য।
কিন্তু অল্পের জন্য সেই চেষ্টা ব্যর্থ হয়। মাত্র ২ রানের জন্য তিন অঙ্কের ম্যাজিক ফিগার স্পর্শ করতে পারেননি রিয়াদ। ইনিংসের শেষ বলে ডাবল রান নিতে গিয়ে রানআউট হওয়ার আগে ৯৮ বলে ৭টি চার আর ৩টি ছক্কার সাহায্যে ৯৮ রান করেন জাতীয় দলের অভিজ্ঞ এই তারকা।
মাহমুদউল্লাহর অনবদ্য এই লড়াইয়ের কারণেই ৮ উইকেটে ২৪৪ রান তুলতে সক্ষম হয় বাংলাদেশ। অবশ্য ইনিংসের শুরুটা দারুণ ছিল।
বিনা উইকেটে ৫৩ রান করা বাংলাদেশ এরপর মাত্র ৫ রানের ব্যবধানে ৩ উইকেট হারিয়ে কোণঠাসা হয়ে যায়।
৭২ রানে ৪ উইকেট পতনের পর দলের হাল ধরেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও মেহেদি হাসান মিরাজ। পঞ্চম উইকেটে ১৮৮ বল মোকাবেলা করে ১৪৫ রানের জুটি গড়েন তারা। এই দুই তারকার দায়িত্বশীল পারফরম্যান্সে ভর করে চ্যালেঞ্জিং স্কোর গড়ে বাংলাদেশ।