মার্কিন নির্বাচনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই পুরুষ সমর্থনে এগিয়ে ট্রাম্প, নারীতে কমলা

মার্কিন নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই বাড়ছে উত্তেজনার পারদ। শেষ মুহুর্তেও প্রচারণার তুঙ্গে রয়েছেন ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা হ্যারিস ও রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। প্রতিবারের মতো প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে এবারও চলছে নানা হিসাব-নিকাশ।

তবে এবারের নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে পুরুষ বনাম নারী তথা লিঙ্গভেদের বিষয়টিও। এবারের নির্বাচনে পুরুষ ভোটারদের কাছে বেশ এগিয়ে আছেন ট্রাম্প। বিপরীতে নারী ভোটারদের মনে শক্তহালেই জায়গা করে নিয়েছেন কমলা। নারীদের মধ্যে বিপুল জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন তিনি।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মার্কিন জনগণের মধ্যে এই লিঙ্গগত ব্যবধান মূলত গত এক দশকের সামাজিক টানাপোড়েনের প্রতিফলন। যা এবারের নির্বাচনে ভোটারদের রাজনৈতিকভাবে সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করতে পারে। ফলে বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী দেশের নেতা নির্বাচনে নারী ও পুরুষ ভোটারদের পৃথক দৃষ্টিভঙ্গি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হয়ে ওঠার সম্ভাবনা রয়েছে।

নিউইয়র্ক টাইমসের এক জরিপে দেখা গেছে, পুরুষ ভোটারদের মধ্যে জনপ্রিয়তার দৌড়ে ট্রাম্প ১৪ শতাংশে এগিয়ে আছেন। আর নারী ভোটারদের মধ্যে কমলা এগিয়ে আছেন ১২ শতাংশে। অন্যদিকে সিবিএসের জরিপে দেখা গেছে, নারী ভোটারে কমলা ১২ শতাংশে এবং পুরুষ ভোটারে ট্রাম্প ৯ শতাংশে এগিয়ে আছেন। এবারের নির্বাচনে কমলা একজন কৃষ্ণাঙ্গ নারী, যিনি প্রথমবারের মতো প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসাবে মনোনীত হয়েছেন। সেই সঙ্গে দ্বিতীয় কোনো নারী প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার কাছাকাছি পৌঁছেছেন।

এর আগে ২০১৬ সালে হিলারি ক্লিনটন প্রথম নারী হিসাবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে লড়াই করেছিলেন। কমলা হ্যারিস হলেন সেই নারী, যিনি ইতোমধ্যে নির্বাচনে বেশ প্রভাব সৃষ্টি করেছেন। এছাড়া তিনি নিজ পরিচয় নিয়ে বেশি কথা না বলার জন্যও এগিয়ে রয়েছেন।

কমলা বরাবরই বলে আসছেন, লিঙ্গ পরিচয় নয় বরং যোগ্যতার ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসাবে নির্বাচনে জিততে চান তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এখনো কোনো নারী প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হননি। তাই এ নতুনত্ব অনেককে আকৃষ্ট করলেও দেশটিতে এখনো অনেক মানুষ আছেন যারা নারী নেতৃত্ব খুব একটা পছন্দ করছেন না। এ বিষয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান দলের সমর্থকদের মধ্যে।

এ বিষয়ে প্রকাশ্যে মন্তব্য না করলেও অনেক ডেমোক্র্যাট বিশ্বাস করেন, এ ধরনের মনোভাব একজন নারী প্রার্থীর পক্ষে ভোটদানে নিরুৎসাহিত করতে পারে।

অন্যদিকে ট্রাম্পের প্রচারণায়ও বলা হচ্ছে, ভোটের সঙ্গে লিঙ্গের কোনো সম্পর্ক নেই। তবে গত সপ্তাহেই এক প্রচারণায় বলা হয়েছে, ‘কমলা দুর্বল ও বিপজ্জনক উদারপন্থি’। যার ফলে ৫ নভেম্বরের নির্বাচনে মার্কিন নাগরিক তাকে প্রত্যাখ্যান করবে। ট্রাম্প শিবিরের একজন সিনিয়র উপদেষ্টা ব্রায়ান ল্যাঞ্জা বলেছেন, এবার ট্রাম্পের জয়ের বিষয়ে তারা আÍবিশ্বাসী। কেননা, তিনি একজন পুরুষ।

২০১৬ সালের নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের নারীবিরোধী মনোভাব বেশ স্পষ্টতই ফুটে উঠেছিল। তবে মধ্যবর্তী সময়ে দেশটিতে নারী জাগরণ ও নানা ক্ষেত্রে নারীদের অগ্রগামিতার কারণে দৃশ্যপট অনেকটাই বদলেছে। ফলে আসন্ন নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রেক্ষাপটে নারী-পুরুষের সামাজিক অবস্থান নিয়ে চিন্তাভাবনার বহিঃপ্রকাশ হতে পারে। এ ক্ষেত্রে পুরুষদের কাছে পৌঁছাতে ট্রাম্পের চেয়ে অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছেন কমলা। এই নির্বাচনি দৌড়ে পুরুষদের অগ্রসৈনিক হতে চান ডোনাল্ড ট্রাম্প।

তবে নির্বাচন-পরবর্তী রাষ্ট্র পরিচালনা নিয়ে আলোচনার বদলে পরস্পরের সমালোচনা করেই বেশি ব্যস্ত সময় পার করছেন ট্রাম্প ও কমলা। রোববার নিউইয়র্কের ঐতিহাসিক মেডিসন স্কয়ার গার্ডেনে সমাবেশ করেন রিপাবলিকান পদপ্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। সেখানেই কমলাকে উদ্দেশ করে কড়া সমালোচনা করেন তিনি। কমলাকে ‘খুবই কম বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ’ বলে উপহাসও করেছেন ট্রাম্প। এছাড়া সমাবেশের শুরুতে ট্রাম্পের মিত্ররা বেশ কিছু অশ্লীল ও বর্ণবাদী মন্তব্যও করেন।

ট্রাম্পের সাবেক ব্যক্তিগত আইনজীবী জিউলিয়ানি বলেছেন, ইসরাইল-ফিলিস্তিন ইস্যুতে ‘সন্ত্রাসীদের’ পক্ষে আছেন কমলা। কমলা হ্যারিস ফিলিস্তিনিদের যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে আসতে চেয়েছেন বলে অভিযোগ করেন তিনি। যদিও তার এই অভিযোগের সপক্ষে তিনি কোনো প্রমাণ দেননি। এ সময় অভিবাসীদের একাধিকবার ‘ভয়াবহ ও রক্তপিপাসু অপরাধী’ বলেও কটাক্ষ করেন ট্রাম্প। এ সময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন আলোচিত মার্কিন ধনকুবের ইলন মাস্ক।

অন্যদিকে দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্য পেনসিলভানিয়ার ফিলাডেলফিয়ায় নির্বাচনি প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন ডেমোক্র্যাট দলীয় প্রার্থী কমলা হ্যারিস। আগামী নির্বাচনে জয়ের জন্য জেন জি ভোটারদের কাছে টানার চেষ্টা করছেন তিনি।

পেনসিলভানিয়ায় দেওয়া বক্তব্যে কমলা জেন জি প্রজন্মের ভোটারদের ওপর গুরুত্ব দিয়ে বলেছেন, আমি কিছু সময় কথা বলতে চাই। বিশেষ করে সব তরুণ নেতাদের সঙ্গে। আমি তোমাদের ওপর নির্ভর করছি, কারণ আমি তোমাদের সম্পর্কে যে জিনিসটি পছন্দ করি তা হলো পরিবর্তনের ক্ষেত্রে ধৈর্য না ধরা। আমি তোমাদের দেখে শক্তি হতে শিখেছি।