মুহাম্মদ আবু হেলাল শেরপুর : গত প্রায় ৩যুগ আগে রেজিস্ট্রিমূলে ক্রয়কৃত ও ভোগদখলে থাকা জমিতে রোপা আমন ধান রোপন করতে গেলে ওয়ারিশের দাবী এনে বাঁধা প্রদান করে নজরুল ইসলাম গংরা। তাদের এই অন্যায় দাবীর প্রতিবাদ করায় নজরুল গংদের হামলার শিকার হয় আছিয়া খাতুন ও আকাব্বর আলী। এ বিষয়ে ভুক্তভোগী পরিবারের পক্ষে আকরাম হোসেন বাদী হয়ে ৯ ব্যক্তির নামে থানায় মামলা দায়ের করলেও আদালত থেকে নজরুল ইসলাম ও নুরুজ্জামান ওরফে বাচ্চা ছাড়া বাকিরা জামিনে এসে বাদীকে মামলা তুলে নিতে প্রাণ নাশের হুমকি প্রদান করে। এতে বাদীপক্ষ রাজি না হওয়ায় বিবাদীরা নিজ খড়ের পাল্লায় আগুন দিয়ে কাউন্টার মামলা করে। ঘটনাটি ঘটেছে শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার ধানশাইল ইউনিয়নের পূর্ব ধানশাইল গ্রামে।
থানায় দায়ের করা অভিযোগ ও এলাকাবাসীদের সুত্রে জানা গেছে,
পূর্ব ধানশাইল গ্রামে মৃত ছফর উদ্দিনের দুই ছেলে। একজন এন্তাজ আলী অপরজন আফসার আলী। এন্তাজ আলী তার পৈত্রিক সুত্রে প্রাপ্ত ও নিজ নামীয় আরওআর, বিআরএস ও সিএস ভুক্ত মালিক বটে। তার কোন ছেলে সন্তান না থাকায় তার স্ত্রী শহিতন নেছা এবং মেয়ে রাবিয়া খাতুন ওরফে পারুলকে হেবাবিল এওয়াজমুলে বিভিন্ন দাগ থেকে ১ একর ১১শতাংশ জমি রেজিস্ট্রিমুলে লিখে দেন এন্তাজ আলী। পরবর্তীতে শহিতন নেছা এবং মেয়ে রাবিয়া খাতুন ওরফে পারুল সাংসারিক প্রয়োজনে তাদের নামীয় রেজিস্ট্রিকৃত জমি থেকে দুইটি দলিলে পৃথক পৃথক সময়ে চাপাঝুড়া গ্রামের সৈয়দ জামালের নিকট মোট ৫০ শতক জমি সাবকওলায় বিক্রি করে। যাহার মৌজা- ধানশাইল, খতিয়ান নং- ৪১৯, দাগ নং-৪৬৪০, দলিল নং-২২৮১, তারিখ-৮/৭/৯১, জমির পরিমাণ -৩৫শতাংশ এবং একই খতিয়ান ও মৌজার দাগ নং- ৪৬৪০,৪৬৪৫,৪৬৪৬, দলিল নং-৭৮৫ তারিখ-৪/২/৯২, জমির পরিমাণ -১৫শতাংশ সহ মোট ৫০ শতাংশ জমি ক্রয় করে গত প্রায় তিন যুগধরে ভোগদখল করে আসছে। এদিকে এন্তাজ আলীর অপর ভাই আফসার আলীর জীবদ্দশায় তার নামীয় সাবেক ২৭২৮ নং দাগের সকল প্রাপ্ত জমি বিক্রি করে। কিন্তু আফসার আলীর মৃত্যুর অনেক বছর পরে তার ছেলে নজরুল ইসলাম গংরা পৈত্রিক জমি পাবে মর্মে প্রথমে আব্দুল হালিম গংদের কাছে দাবী করে। নিরুপায় হয়ে আব্দুল হালিম আদালতে মামলা দায়ের করে। সেই মামলায আদালতে সঠিক প্রমাণাধি হাজির করতে না পারায় উক্ত মামলায় হেরে যায় নজরুল গংরা। এরপর জমি পাবে মর্মে মৃত সৈয়দ জামালের সন্তানাদির ভোগদখলে থাকা ৫০ শতক জমিতে ধান রোপণে বাঁধা সৃষ্টি করে। এতে মৃত সৈয়দ জামালের ছেলে আকরাম হোসেন গংরা প্রতিবাদ করলে গত ২৮ আগষ্ট ওই জমিতে হামলা চালায়। ওই হামলায় মৃত সৈয়দ জামালের স্ত্রী আছিয়া খাতুন ও তার ছেলে আকাব্বর আলী আহত হয়। এই ঘটনায় মৃত সৈয়দ জামালের ছেলে আকরাম হোসেন বাদী হয়ে ঝিনাইগাতী থানায় ৯ ব্যক্তিকে আসামী করে অভিযোগ দায়ের করে। উক্ত অভিযোগটি তদন্ত সাপেক্ষে এফআইআর করা হয়। যাহার মামলা নং-৮, তারিখ- ৩১ আগষ্ট ২০২৪ইং। উক্ত মামলায় আদালত থেকে অপরাপর ৭আসামী জামিনে এসে বাদীপক্ষকে মামলা তুলে নিতে প্রাণনাশের হুমকি সহ জমি বেদখলের পায়তারা করছে।
এ বিষয়ে উক্ত অভিযোগের বাদী ও
মৃত সৈয়দ জামালের ছেলে আকরাম হোসেন এই প্রতিনিধিকে জানান, আমার বাবার ক্রয়কৃত জমি জবরদস্তি করে বেখদলের পায়তারা করছে নজরুল গংরা। আমরা এর ন্যায় বিচার চাই।
বিবাদী নজরুল ইসলাম গংদের সাথে এই বিষয়ে কথা হলে তারা জানান, আমার বাবা জমি বিক্রি করলেও উক্ত জমি আমাদের নামে রেকর্ড ভুক্ত থাকায় ওই জমির দাবীদার আমরা।
কিন্তু এলাকাবাসী বলছেন, নজরুল গংদের বাবা মৃত আফসর আলীর জীবদ্দশায় উক্ত দাগের সমস্ত জমিই
দুই জনের কাছে মোট ৭৫ শতক জমি বিক্রি করলেও পরবর্তীতে ভুলক্রমে তার ছেলে ও মেয়েদের নামে কিছু জমি রেকর্ড ভুক্ত হয়। তবে উক্ত রেকর্ড বিষয়ে আদালতে মামলায় একটিতে নজরুল গংরা হেরে যায়। অপরটি চলমান রয়েছে।
এ বিষয়ে অত্র মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ঝিনাইগাতী থানার এসআই মো. সাফায়েত হোসেন জানান, আদালত থেকে ৯ আসামীর মধ্যে ৭ জন জামিনে এলেও নজরুল ও বাচ্চা পলাতক রয়েছে। তাদেরকে গ্রেফতার করতে পুলিশি অভিযান অব্যাহত আছে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।