যে কেউ নেতা হতে পারে না। চাইলেই নেতা হওয়া সম্ভব নয়। নেতা হওয়ার জন্য কিছু গুণ লাগে, কিছু যোগ্যতা লাগে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘ইউসুফ (আ.) বললেন, আপনি আমাকে দেশের অর্থ-সম্পদের (ব্যবস্থাপনার) কাজে নিযুক্ত করুন। আপনি নিশ্চিত থাকুন আমি রক্ষণাবেক্ষণ বেশ ভালো পারি এবং এ কাজের পূর্ণ জ্ঞান রাখি।’ (সুরা ইউসুফ: ৫৫) এই আয়াত থেকে প্রতীয়মান হয়, জ্ঞান ও আমানতদারি একজন নেতার মৌলিক গুণ। এ কথা সর্বজনস্বীকৃত যে, যেকোনো বিষয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে পর্যাপ্ত জ্ঞান রাখতে হবে। আর আমানতদারি ছাড়া সংশ্লিষ্ট বিষয়ে দায়িত্ব পালনে সফল হওয়া অসম্ভব। তা ছাড়া রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যার আমানতদারিতা নেই, তার ইমান নেই।’ (শুআবুল ইমান: ৪৩৫৪)
অন্য এক আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘তাদের নবী তাদের বলল, আল্লাহ তাআলা তোমাদের জন্য তালুতকে বাদশাহ বানিয়ে পাঠিয়েছেন। তারা বলতে লাগল, তিনি কীভাবে আমাদের ওপর বাদশাহি লাভ করতে পারেন, যখন তার বিপরীতে আমরাই বাদশাহির বেশি হকদার? তা ছাড়া তার তো আর্থিক সচ্ছলতা লাভ হয়নি। নবী বললেন, আল্লাহ তাকে তোমাদের ওপর মনোনীত করেছেন এবং জ্ঞান ও শারীরিক দিক থেকে তোমাদের চেয়ে সমৃদ্ধি দান করেছেন।’ (সুরা বাকারা: ২৪৭) এই আয়াত থেকে বোঝা যায়, বাদশা বা নেতাকে হতে হবে জ্ঞানী, শক্তিশালী, দৈহিক গঠন সুন্দর, মেধাবী ও তীক্ষ্ণ বুদ্ধির অধিকারী। আর হতে হবে নেতৃত্বে পারদর্শী।
আরেক আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি তোমাদের নেতা বানিয়েছিলাম, যারা আমার হুকুমে মানুষকে পথ দেখাত।’ (আম্বিয়া: ৭৩) এই আয়াত দ্বারা বোঝা যায়, একজন নেতার বৈশিষ্ট্য হলো মানুষকে আল্লাহ তাআলার নির্দেশিত পথে আহ্বান করবে এবং আল্লাহ তাআলার বিধান অনুযায়ী মানুষকে পরিচালনার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করবে। এ ব্যাপারে হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, ‘সফরে লোকদের সেবা করেন যিনি, তিনিই নেতা। সুতরাং যে ব্যক্তি সঙ্গীদের খেদমতে অগ্রণী ভূমিকা রাখেন; আল্লাহর পথে শাহাদাতবরণ ছাড়া অন্য কোনো আমল দিয়ে কেউ ওই ব্যক্তির মর্যাদা লাভ করতে পারে না।’ (শুআবুল ইমান: ৮০৫০) অর্থাৎ, একজন নেতার বৈশিষ্ট্য হলো, তিনি কখনো জনগণের ওপর কর্তৃত্বপরায়ণ হন না; বরং জনগণের সুখে-দুঃখে, বিপদে-আপদে সর্বাবস্থায় সেবার মানসিকতা নিয়ে তাদের পাশে থাকেন।
এ ছাড়া সুন্দর আচরণ, নৈতিকতা, ধৈর্যশীলতা, বিনয়, আল্লাহভীরুতা, সত্যবাদিতা, সহিষ্ণুতা ইত্যাদি একজন আদর্শ নেতার জরুরি গুণাবলি।