// নাটোর প্রতিনিধি
নাটোরের বাগাতিপাড়াবাগাতিপাড়ায় উপজেলা নির্বাচনকে ঘিরে ৩ ভাগে বিভক্ত আওয়ামী লীগয় আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে ঘিরে তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে উপজেলার আওয়ামী লীগ। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দুই ভাগে বিভক্ত উপজেলা আওয়ামী লীগে সৃষ্ট কোন্দল শেষ না হতেই এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আবারও দলের মধ্যে বিভক্তি বেড়েছে। চলমান দ্বিতীয় ধাপের বাগাতিপাড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগেরই ৩ নেতা চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন। এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামীলীগের তিনটি গ্রুপে বিভক্তি এখন প্রকাশ্যে রূপ নিয়েছে। এই তিন প্রার্থীর প্রচার-প্রচারনায় দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা অংশ নিচ্ছেন। তবে সাধারন কর্মীরা বিপাকে পড়েছেন। পূর্বে এমন বিভক্তি থাকলেও জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নেতাকর্মীরা দুটি গ্রুপে বিভক্ত ছিলেন। ওই নির্বাচনে দলের একটি পক্ষ স্বতন্ত্র প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য আবুল কামাল আজাদের পক্ষে এবং অপরপক্ষ সাবেক সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী শহিদুল ইসলাম বকুলের পক্ষে কাজ করেন। এ অবস্থায় কয়েক মাস অতিবাহিত হতে না হতেই এবার ত্রি-মুখী অবস্থানে রয়েছে দলটি। দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারাও তিনটি গ্রুপে বিভক্ত হওয়ায় এবং আওয়ামী লীগের প্রত্যেক গ্রুপ থেকে একটি করে প্রার্থী হওয়ায় নেতাকর্মীরা কার পক্ষে কাজ করবেন সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না। নির্বাচনী প্রচারনায় তারা কোন দিকে অবস্থান নেবেন, তার কোনো কূলকিনারাও পাচ্ছেন না। এতে করে নেতা-কর্মীদের মাঝে দূরত্ব যেমন বাড়ছে, তেমনি দলীয় কোন্দলের বলি হওয়ার ভয়ে অনেক নেতাকর্মীই রয়েছেন নিশ্চুপ। তারা নির্বাচন-পরবর্তী পরিস্থিতির ভাবনায় দিশেহারা। যে কারণে প্রার্থীদের প্রচার প্রচারণায় প্রাণ পাচ্ছে না। প্রার্থীদের গত কয়েক দিনের প্রচার-প্রচারণা পর্যবেক্ষণ ও বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীর সঙ্গে আলাপ করে এমন চিত্র দেখা গেছে।
দলের সাধারন কর্মীরা জানান, ২০২২ সালের ২৬ জুন বাগাতিপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ওই সম্মেলনের প্রায় দুই বছর হয়ে গেলেও এখনো পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করতে পারেনি দলটি। দুই বছরে কমিটিতে থাকা নেতাকর্মীদের সবাইকে এখনো একই রাজনৈতিক মঞ্চে দেখা যায়নি। সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক প্রত্যেকে তৈরি করেছেন নিজস্ব সমর্থক গোষ্ঠী। কমিটির অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণেই নিজস্ব বলয়ের মধ্যে তারা নিজ নিজ নেতাকর্মীদের নিয়ে আলাদা আলাদাভাবে দলীয় কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।
এদিকে, আগামী ২১ শে মে বাগাতিপাড়া উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন মোট ৫ জন। এর মধ্যে এক জন স্বতন্ত্র ও একজন সম্প্রতি বহিস্কৃত বিএনপি নেতা হলেও বাকি ৩ জনই আওয়ামী লীগ সমর্থিত পদধারী নেতা। আনারস প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন উপজেলার ফাগুয়াড়দিয়াড় ইউনিয়নের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি শরিফুল ইসলাম শরিফ। তিনি সাবেক এমপি শহিদুল ইসলাম বকুলের বড় ভাই। তার পক্ষে অবস্থান নিয়ে প্রচারনায় রয়েছেন উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি নূরুল ইসলাম ঠান্ডু। অপরদিকে, শালিক প্রতিকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন পাঁকা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি আসলাম উদ্দিন। তার পক্ষে অবস্থান নিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মজিবুর রহমান কাজ করছেন। এই নেতার অনুসারী বেশিরভাগ নেতা-কর্মীরাই বর্তমানে প্রার্থী আসলাম উদ্দিনের পক্ষে অবস্থান নিয়ে কাজ করছেন। এছাড়াও দোয়াত কলম প্রতীকে জেলা আওয়ামীলীগের উপদেষ্টা মন্ডলির সদস্য এবং উপজেলা আওয়ামীলীগের দীর্ঘদিনের সাবেক সভাপতি আবুল হোসেন নির্বাচন করছেন। তিনি জেলা আওয়ামীলীগের উপদেষ্টা মন্ডলির সদস্য এবং দীর্ঘ দিনের দায়িত্বে থাকা উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সেকেন্দার রহমান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগাঠনিক সম্পাদক আব্দুল কুদ্দুসকে নিয়ে তার পক্ষে কাজ করছেন। তবে জাতীয় নির্বাচনের আগে সাবেক সভাপতি ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক উভয়েই বর্তমান সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদের পক্ষে জাতীয় নির্বাচনে কাজ করেছেন এবং রাজনৈতিক কর্মকা- পরিচালনা করেছেন। এমনকি সংসদ নির্বাচনে বর্তমান সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পরও তারা এক সাথেই কাজ করেছেন। তবে এই উপজেলা নির্বাচনকে ঘিরে তারা পৃথক হয়ে শক্ত অবস্থান তৈরি করেছেন।
জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মন্ডলির সদস্য এবং উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সেকেন্দার রহমান জানান, দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে সরাসরি হস্তক্ষেপ না করলেও ছায়া শক্তির মতো বর্তমান সংসদ সদস্যের প্রভাব রয়েছে এই নির্বাচনে। এমপি সমর্থকেরা মাঠে শালিক প্রতীকের আসলাম উদ্দিনের পক্ষে কাজ করছেন। তিনি আরো বলেন, আবুল হোসেন আওয়ামী লীগ ছাত্রলীগের দুঃসময়ে রাজপথে ছিলেন, এছাড়াও তিনি দীর্ঘদিন শিক্ষকতা ও উকালতি পেশার সাথে জড়িত ছিলেন। তিনি একজন ত্যাগী নেতা। তাই যোগ্য প্রার্থী মনে করে তাকে সমর্থন দিয়েছেন বলে জানান।
এদিকে উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মজিবুর রহমান বলেন, ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন হওয়ার পর থেকে তিনি তার সমর্থকদের নিয়ে আছেন। বাকিরা যার যার আলাদা সমর্থকদের নিয়ে আছেন। এই গ্রুপিংয়ের কারণে দল সাংগঠনিভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। উপজেলা নির্বাচনে তিনি শালিক প্রতিকের আসলাম উদ্দিনের পক্ষে কাজ করছেন বলেও জানান।
উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি নূরুল ইসলাম ঠা-ু বলেন, দলীয় ভাবে নির্বাচন যেহেতু উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে তাই যে যার মত নির্বাচন করতে পারে। আর রাজনীতিতে গ্রুপিং থাকবেই। কিন্তু প্রকাশ্যে এত বিভক্তি দলের জন্য অবশ্যই ক্ষতিকর। তিনি সাবেক সংসদ সদস্য শহিদুল ইসলাম বকুলের পক্ষে সমর্থন করে উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি শরিফুল ইসলাম শরিফের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণা করছেন বলেও জানান।