— এবাদত আলী
করোনাভাইরাস থেকে বাংলাদেশের মানুষকে রক্ষা করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথম থেকেই তৎপর। তার পিতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শত বার্ষিকী ছিলো ২০২০ সালে। শেখ মুজিবুর রহমান ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ তারিখে বৃহত্তর ফরিদপুর বর্তমানে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাই ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে ২০২১ সালের ১৭ মার্চ পর্যন্ত সময়কে মুজিব বর্ষ হিসেবে উদযাপনের জন্য ২০১৯ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি জাতীয় অধ্যাপক মোহাম্মদ রফিকুল ইসলামকে সভাপতি করে একটি জাতীয় কমিটি গঠন পুর্বক একটি গেজেট প্রকাশ করা হয়।
কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে বলতে গেলে সকল কর্মসুচি বাতিল ঘোষণা করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের মানুষের সুরক্ষার জন্য ২৬ মার্চ -২০২০ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেন। পরিস্থিতি বিবেচনা করে সেই ছুটি দ্বিতীয় ধাপে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত, তৃতীয় ধাপে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত এবং চতুর্থ ধাপে তা ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়। এরপরও পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ায় পুনরায় তা বাড়িয়ে ৫ মে তারিখ পর্যন্ত করা হয়।
সমগ্র দেশে বাস চলাচল, ট্রেন, লঞ্চ ও বিমান চলাচলসহ সকল প্রকার যান চলাচল বন্ধ করা হয়। তিনি দেশের সকল জনগণকে নিজ নিজ ঘরে অবস্থান করার পরামর্শ প্রদান করেন।
গত ৮ মার্চ প্রথমবারের মত ৩ জনের মধ্যে নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ার খবর অবগত হবার পর এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। বাংলাদেশ সরকারের রোগতত্ত রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইইডিসিআর এর পরিচালক মীরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরা নিয়মিত ব্রিফিং এ একথা জানান। তিনি জানান যে, আক্রান্তদের উপযুক্ত চিকিৎসা-সেবা প্রদান করা হচ্ছে। ওই তিনজনের আক্রান্ত হওয়ার বিষয়ে জানিয়ে প্রফেসর ফ্লোরা বলেন, দুজন বাংলাদেশে আসার পর তাদের উপসর্গ দেখা দেয়। তিনি বলেন, আমাদের হট লাইনে ফোন দিলে আমরা তাদের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষাগারে পাঠাই। সেখানে দুজনের পজেটিভ আসে। তাদের কন্ট্রাক্টে থাকা ৪ জনকে পরীক্ষা করে একজন পজেটিভ এবং অন্যদের নেগেটিভ ধরা পড়ে।
গত বছর ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসের শেষ দিকে চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে নভেল করোনাভাইরাসের প্রদুর্ভাব শুরু হয় যা মাচের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে বিশে^র প্রায় ১শ টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। আইইডিসিআরের পরিচালক আরো বলেন, নভেল করোনাভাইরাসের কোন টিকা বা ভ্যাকসিন এখনো আবিষ্কার হয়নি। ফলে এমন কোন চিকিৎসা মানুষের জানা নেই যা এই রোগকে ঠেকাতে পারে। আপাতত একমাত্র উপায় হলো যারা ইেিতামধ্যেই আক্রান্ত হয়েছেন বা এ ভাইরাস বহন করছেন-তাদের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা। নভেল করোনাভাইরাস বা কোভিট-১৯ মূলত শ^াসতন্ত্রে সংক্রণ ঘটায়। এর লক্ষণ শুরু হয় জ¦র দিয়ে। সঙ্গে থাকতে পারে স্বর্দি, শুকনো কাশি, মাথা ব্যথা, গলা ব্যথা ও শরীর ব্যথা। সপ্তাহ খানেকের মধ্যে দেখা দিতে পারে শ^াসকষ্ট। উপসর্গগুলো হলো অনেকটা নিউমোনিয়ার মত। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো হলে এ রোগ কিছুদিন পর এমনিতেই সেরে যেতে পারে। তবে ডায়াবেটিস, কিডনি, হৃদযন্ত্র বা ফুসফুসের পুরোনো রোগিদের ক্ষেত্রে মৃত্যু ডেকে আনতে পারে। চিকিৎসকরা বলেছেন, সংক্রমণ এড়াতে চাইলে সাবান দিয়ে ঘনঘন হাত ধোয়া, সেই সঙ্গে নিত্য ব্যবহার্য সামগ্রিও নিরাপদ রাখতে হবে।
তবে করোনভাইরাসের আক্রমণ রুখতে সবার আগে সচেতনতা দরকার। এর মোক্ষম দাওয়াই হলো ঘরে থাকা। তবে বাসায় থাকলেও করোনাভাইরাসের এই পরিস্থিতিতে ভুলেও কিছু কাজ করা যাবেনা কারণ এ কাজগুলোর মাধ্যমেই করোনা বিস্তারলাভ করে। যেমন,করোনাভাইরাসের এই পরিস্থিতিতে দাঁত দিয়ে নখ কামড়ানো যাবেনা। টাকা নাড়াচাড়ার পর সাবান বা স্যানিটাইজার দিয়ে হাত পরিষ্কার না করে কোন হিনিষ ধরা যাবেনা। অপরিষ্কার হাতে চোখ নাক ও মুখ স্পর্শ করা যাবেনা। এভাবে চলতে বলেছে বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থা। তাদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চল্লে কারো করোনাভাইরাস হবেনা। করোনাভাইরাস বেশি সংক্রমিত হয় হাত ও মুখ দিয়ে। তাই ভালো স্যনিটাইজার এসময় নিত্যসঙ্গি হওয়া উচিত। সেই সঙ্গে মুখে মাস্ক ব্যবহার করা জরুরি।
করোনাভাইরাসের ভয়াবহতা উপলব্ধি করে এবং এই মরনব্যাধি থেকে দেশবাসিকে রক্ষা করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তড়িৎ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। ১৭ মার্চ থেকে মুজিব শতবর্ষের মূল অনুষ্ঠানের সুচনা হবার কথা ছিলো। কিন্তু তিনি তা না করে বলেন, করোনার ঘোষণা দাও, অনুষ্ঠান পরে হবে। দেশে প্রথমবারের মত ৩ জন করোনাভাইরাস রোগে আক্রান্ত হয়েছে এই খবর প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করতে গেলে তিনি এই ঘোষণা দেন। স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেকের নেতৃত্বে স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এই খবর দেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপলব্ধি করতে সক্ষম হন যে, বাংলাদেশের সামনে আরো ভয়ঙ্কর দিন আসছে। তাই তিনি দেশের সকল আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে করোনাভাইরাস মোকাবিলায় কাজে নিয়েজিত করেন। তিনি সোবাহিনীকেও দেশের কল্যাণে আত্মনিয়োগের আহবান জানান।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত বাহিনীগুলোর উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা বলেছেন, স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে যেহেতু বলা হয়েছে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে, তাই রোগ হওয়ার আগেই ব্যারিকেড দিতে হবে। তারা একমত পোষন করেন যে, মানুষকে ঘরে রাখতে আ্যাকশনে যাওয়া ছাড়া কোন বিকল্প নেই। (সময়কাল: ২৫-০৪-২০২০খ্রিঃ) (চলবে) (লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট)।
এবাদত আলী,
সদস্য পাবনা প্রেসক্লাব।
তারিখ: ০৯ /০৩/ ২০২৪