// চাটমোহর (পাবনা) প্রতিনিধি
দেহে শক্তি না থাকলেও মনের শক্তিকে পুঁজি করে যে জীবন যুদ্ধে এগিয়ে যাওয়া যায় সেটি করে দেখিয়ে দিচ্ছেন পাবনার চাটমোহরের আমির হোসেন (৬০) নামক এক প্রতিবন্ধী ব্যক্তি। তিনি উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের ধুলাউড়ি গ্রামের নবীর উদ্দিনের ছেলে। হুইল চেয়ারে বসে চাটমোহর পৌর সদরের বিভিন্ন রাস্তায় প্রায়শই ডিম বিক্রি করতে দেখা যায় শারিরীক প্রতিবন্ধী আমির হোসেনকে। অনেক দরিদ্র শারিরীক প্রতিবন্ধী ভিক্ষাবৃত্তি করে জীবিকা নির্বাহ করলেও আমির হোসেনের জীবন যুদ্ধের কাছে হার মানছে পঙ্গুত্ব। প্রতবন্ধী হওয়া সত্ত্বেও দীর্ঘ দিন যাবত ডিম বিক্রেতার পেশায় নিয়োজিত থাকায় অনেকের পরিচিত মুখ তিনি।
আমির হোসেন জানান, “আগে ভ্যান, রিকশা চালাতাম। কখনো কখনো গাছী’র কাজ করতাম। প্রায় চৌদ্দ বছর আগে চলনবিলে পলো দিয়ে মাছ ধরার বাউৎ উৎসবে যাই। শামুকে সামান্য পা কেটে যায়। পরদিন আবার মাছ ধরতে যাই। এর পর কাটা জায়গায় ঘা হতে শুরু করে। ধীরে ধীরে পচন দেখা দেয় পায়ে। স্থানীয় চিকিৎসকের পরামর্শে চিকিৎসা নিতে থাকি। উন্নতি না হয়ে ক্রমশই অবনতি হতে থাকে। পর্যায়ক্রমে পাবনা, রাজশাহী ও ঢাকায় চিকিৎসা নেই। চার শতাংশ বাড়ির ভিটা ছাড়া মাঠে কোন জমা জমি নেই। কাজ ও করতে পারতাম না তখন। ছেলে মেয়ে নিয়ে সংসার পরিচালনা করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পরে। ঋণ ও সুদে জোগাড় করা ৪০ হাজার টাকা চিকিৎসায় খরচ হয়ে যায়। সুদের টাকা জোগাড়ে হিম শিম খাচ্ছিলাম। সেপটিক ঘায়ে পায়ের পচন বেড়ে যায়। তিন বছর পর চিকিৎসকের পরামর্শে পা হাঁটুর উপর থেকে কেটে ফেলতে বাধ্য হই।”
তিনি আরো বলেন, “পায়ের ঘা শুকালে সংসার চালাতে চা, পানের দোকান দেই। মানুষ বাঁকি খেয়ে টাকা পরিশোধ করে না। দোকান যখন আর চালাতে পারছিলাম না তখন ভাবতে থাকি কি করা যায়। এর পর ডিমের ব্যবসা শুরু করি। হুইল চেয়ারে গ্রামে-গ্রামে ঘুড়ে ডিম কিনে চাটমোহর পৌর সদরে বিক্রি করি। খুব কষ্ট হয়। দিনে দুই-তিনশ টাকা লাভ থাকে। সামান্য কিছু প্রতিবন্ধী ভাতা পাই। এগুলো দিয়ে কোন মতে টেনে টুনে দুজনের সংসারটি চালিয়ে আসছি।”
আমির হোসেনের বড় ছেলে ইসরাফিল ঢাকায় রাজমিস্ত্রীর কাজ করেন। দুই মেয়ে, স্ত্রীসহ চার জনের সংসার পরিচালনা করতে হয় তাকে। দ্বিতীয় ছেলে বিল্লাল ছোট একটি চায়ের দোকান চালান। স্ত্রী, তিন ছেলে মেয়েসহ পাঁচ জনের সংসার তার। নিজেদের সংসার চালানোই তাদের পক্ষে কষ্টকর। এক মাত্র মেয়ে মেহের নিকারকে বিয়ে দিয়েছেন প্রায় নয় বছর আগে। স্বামীর বাড়িতে থাকে সে। আমির হোসেন ও তার স্ত্রীর ভরণ পোষণের দায়িত্ব নেওয়ার মতো স্বচ্ছলতা স্বজনদের না থাকায় এ পেশাটিকে বেছে নিয়ে রোদ বৃষ্টি উপেক্ষা করে হুইল চেয়ারে ভর করে ভাগ্যের, জীবিকার চাকা সচল রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন অন্যদের চেয়ে আলাদা ক্লান্ত আমির হোসেন।