// সঞ্জু রায়ঃ
৫৯ বছররের দীর্ঘ প্রতীক্ষা শেষে বাংলাদেশ ও ভারতের নৌ প্রটোকলের আওতায় চালু হলো বহুল কাঙ্খিত রাজশাহীর গোদাগাড়ীর সুলতানগঞ্জ পোর্ট অব কল এবং সুলতানগঞ্জ-মায়া নৌপথে পণ্যবাহী নৌযান চলাচল। পদ্মা ও মহানন্দার মোহনায় অবস্থিত গোদাগাড়ী উপজেলার সুলতানগঞ্জ অংশে সোমবার বেলা ১১ টায় বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মাকে সাথে নিয়ে সুলতানগঞ্জ নৌবন্দর এবং ভারতের মুর্শিদাবাদের মায়া নৌবন্দর পর্যন্ত পণ্যবাহী নৌযান চলাচলের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। এসময় তিনি বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে আমাদের চুক্তি হয়েছে। আমরা ভারতীয় মুদ্রায় ব্যবসা-বাণিজ্য করতে পারব। এতে করে দেশের রিজার্ভের উপর চাপ কমবে।’ তিনি বলেন, রাজশাহীতে এখন সড়ক পথের পাশাপাশি রেল, বিমান ও নৌপথ যোগাযোগ আছে। যা একটি অঞ্চলের অর্থনীতির সমৃদ্ধির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের যোগাযোগ ব্যবস্থার পরিধি বৃদ্ধি পাচ্ছে। রাজশাহীর এই নৌপথটি নতুন দিগন্তের উন্মোচন করলো। শিক্ষানগরী রাজশাহীর অর্থনীতিও এখন এগিয়ে যাবে। প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন, জীবন এবং জীবিকা দুটো একসঙ্গে চালাতে হবে। সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা এই পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করছি। সুলতানগঞ্জ-মায়া প্রটোকল রুটটি ঢাকার আরিচা পর্যন্ত বিস্তৃত। আমাদের সঙ্গে ভারতের কথা হচ্ছে। রুটটা স্থায়ীভাবে ধরে রাখার জন্য ড্রেজিং প্রয়োজন। আমরা সেটার একটা প্রকল্প গ্রহণ করেছি। ব্যবসায়ীরা এখান থেকে উপকৃত হবেন। এসময় বাংলাদেশের পররাষ্ট্র নীতির কথা উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, দীর্ঘ প্রায় ৬০ বছর পর সুলতানগঞ্জ-মায়া রুটটি আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে চালু করলাম। এটা শুধু রাজশাহীবাসীর জন্যই নয়, পুরো বাংলাদেশের জন্যই মাহেন্দ্র ক্ষণ। ভারতের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য সহ নানা ভাবে আমরা একে অপরের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যাচ্ছি। নতুন এই নৌবন্দরে কিছু প্রতিবন্ধকতা আছে উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, পুরো এলাকা পর্যবেক্ষণ করে সেই অনুপাতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নদীর ভাঙন আছে, এর নিজস্ব চরিত্র আছে। এসব বিবেচনায় নিয়ে আমরা পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
নৌবন্দরের উদ্বোধন উপলক্ষে সুধী সমাবেশের আয়োজন করে বিআইডব্লিউটিএ। সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভারতীয় হাইকমিশনার তার বক্তব্যে বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দুরদর্শী নেতৃত্বে দুদেশের সম্পর্কের যে দৃষ্টান্তমূলক পরিবর্তন ঘটেছে তার আরেকটি শক্তিশালী উদাহরণ এই নৌপথ চালুর উদ্যোগ। ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক ও সংযোগের অংশ এবং দুই দেশের সম্পর্কের সা¤প্রতিক পরিবর্তনের একটি দৃশ্যমান প্রতীক হচ্ছে নতুন এই নদীপথ। এই রুটটি চালুর ফলে শুধু সীমান্তের দুই পাশের স্থানীয় অর্থনীতির জন্যই উপকার হবে না বরং জাতীয় অর্থনীতিতেও অবদান রাখবে, উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতা ও একীকরণকে শক্তিশালী করবে। প্রণয় ভার্মা বলেন, এই প্রোটোকল রুটের মাধ্যমে কার্গো চলাচলের প্রচুর সম্ভাবনা আছে যেখানে অনুমানগুলি প্রস্তাব করে যে এই রুটে ট্রাফিকের সম্ভাবনা প্রায় ২৬ লাখ টন যার বার্ষিক মূল্য প্রায ২২০ কোটি টাকা। শুধু তাই নয় এই রুটটি উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলির সংযোগ উন্নতকরণসহ উভয় দেশের অভ্যন্তরীণ জলপথের ইকোসিস্টেমকে গতি দেবে। তিনি আরো বলেন, ভারত আজ এশিয়ায় বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রফতানি গন্তব্য। উন্নত যোগাযোগ সংযোগ এবং ভারতীয় রুপিতে বাণিজ্যের মতো নতুন পদক্ষেপ ভারতে বাংলাদেশি রফতানিকে আরও বাড়িয়ে তুলবে। অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তির (সিপা) জন্য শিগগিরই আলোচনা শুরু হতে যাচ্ছে। ভারত এবং বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী হওয়ার জন্য ক্রমাগত পদক্ষেপ নিচ্ছে। বাংলাদেশ ২০৪১ সালের মধ্যে জ্ঞান অর্থনীতি দ্বারা চালিত একটি উন্নত দেশ স্মার্ট বাংলাদেশ হয়ে উঠতে চেষ্টা করছে। ভারত ২০৪৭ সালের মধ্যে বিশ্বের উন্নত অর্থনীতির সারিতে যোগদান করে ‘বিকশিত ভারত’ হতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। গত পরপর দুই বছরে, ভারত এশিয়ায় বাংলাদেশের রফতানির বৃহত্তম গন্তব্য হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে, যা দুই বিলিয়ন ডলারের সীমা অতিক্রম করেছে। অদূর ভবিষ্যতে এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। পরিশেষে প্রণয় ভার্মা দুদেশের বন্ধুত্ব স্মরণ করিয়ে দিয়ে আবারো বলেন, ভারত ও বাংলাদেশের মাঝে যে অনন্য ও বিশেষ সম্পর্ক রয়েছে তা অন্য কোন দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের মতো নয়। এটি কৌশলগত অংশীদ্বারিত্বের চেয়ে বেশি। দুদেশের ইতিহাস, ভাষা ও সংস্কৃতি পারস্পারিক সহানুভূতির সাথে জড়িত। দুদেশের নদীগুলো যেভাবে যুগ যুগ ধরে আমাদেরকে যুক্ত করেছে ঠিক তেমনি আমরা এখন আমাদের জনগণ ও অর্থনীতিকে সংযুক্ত করার জন্যে কাজ করছি। মহান মুক্তিযুদ্ধকে বাংলাদেশ-ভারত এই মৈত্রী আগামীতে আরো সমৃদ্ধ হবে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) চেয়ারম্যান কমোডর আরিফ আহমেদ মোস্তফার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, রাজশাহী-১ আসনের এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী, রাজশাহী-৫ আসনের এমপি আবদুল ওয়াদুদ দারা, রাজশাহী-৪ আসনের এমপি আবুল কালাম আজাদ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনের এমপি আবদুল ওদুদ, রাজশাহীতে নিযুক্ত ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনার মনোজ কুমার প্রমুখ।