নাটোর কারাগারে অসুস্থ হওয়ার ৯ দিন পর রামেকে মৃত বিএনপি নেতার দাফন সম্পূর্ণ

নাটোর প্রতিনিধি
নাটোর জেলা কারাগারে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ হওয়ার ৯ দিন পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় এ কে আজাদ সোহেল নামে এক বিএনপি নেতার মৃত্যু হয়েছে।এ কে আজাদ সোহেল নাটোরের সিংড়া উপজেলার হাতিয়ন্দহ ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম সাধারণ স¤পাদক ও ইউনিয়ন যুবদলের সাবেক সভাপতি।বৃহ¯পতিবার (৭ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (রামেকে) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান বিএনপির ওই নেতা। আজ শুক্রবার (৮ ডিসেম্বর) বাদ জুম্মা সিংড়া উপজেলা ছোট হাতিয়ান্দহ মাদ্রাসা প্রাঙ্গনে মরহুমের জানাযা শেষে পারিবারিক গোরস্থানে দাফন করা হয় ।
সিংড়া থানা ও নাটোর কারাগার ও ভুক্তভোগীর পরিবার জানান, সিংড়া থানার ২৮ অক্টোবরের রাতের একটি নাশকতার মামলায় আবুল কালাম আজাদকে গত ১৮ নভেম্বর বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে সিংড়া থানা-পুলিশ। পরদিন তাঁকে সিংড়া আমলি আদালতে হাজির করা হলে আদালত তাঁকে নাটোর কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। ৩০ নভেম্বর সিংড়া আমলি আদালত তাঁর জামিনের আবেদন মঞ্জুর করেন।জামিন পাওয়ার খবর জানাতে তাঁর স্ত্রী রমি বেগম নাটোর কারাগারে গিয়ে জানতে পারেন, কারাগারে ২৯ নভেম্বর সন্ধ্যায় তাঁর স্বামী স্ট্রোক করেন। অসুস্থ অবস্থায় তাঁকে কারাগার থেকে সন্ধ্যা ৭টা ৩৩ মিনিটে নাটোর সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে সেখান থেকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করে কারা কর্তৃপক্ষ। তাঁর স্ত্রী নাটোর সদর
হাসপাতালে ছুটে যান স্বামীকে দেখার জন্য। কিন্তু ততক্ষণে তাঁর স্বামীকে কারা কর্তৃপক্ষ রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। রাতেই রামেক হাসপাতালে গিয়ে দেখতে পান আবুল কালাম আজাদ অচেতন অবস্থায় হাসপাতালের মেঝেতে পড়ে আছেন।

সিংড়া উপজেলা বিএনপির সাবেক সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ স¤পাদক জিয়াউর রহমান লেলিন জানান, গত ১৮ নভেম্বর সন্ধ্যায় এ কে আজাদ সোহেল আটক করে ডিবি পুলিশ। এরপর নাটোর কারাগারে তাকে পাঠায়। ৩০ নভেম্বর তারিখে আদালত তাকে(এ কে আজাদ সোহেল) জামিন দেয়। পরে কারাগারে তাকে নিয়ে আসতে গেলে কারা কর্তৃপক্ষ জানায় এ কে আজাদ অসুস্থ থাকায় তাকে চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজে প্রেরণা করা হয়েছে। সোহেলকে রাজশাহী মেডিকেলের বারান্দার বিনাচিকিৎসায় ফেলে রাখা হয়। জামিনের পরে কারা কর্তৃপক্ষের মারফতে পরিবারের সদস্যরা এ ঘটনা জানলে তারা গিয়ে সোহেলের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন চিকিৎসাধীন অবস্থায় সেখানে আজ তার মৃত্যু হয়।
নিহত বিএনপি নেতা আবুল কালাম আজাদের স্ত্রী মোছা. রমি বেগম বলেন নাশকতার মামলায় এজাহারে নাম না থাকা সত্ত্বেও আমার স্বামীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে । কারাগারে থাকাবস্থায় স্ট্রোক করলো, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হলো অথচ আমাদের কিছুই জানালো না। জামিন হওয়ার পর জানলাম আমার স্বামী হাসপাতালের আইসিইউতে। ৯ দিন পর আজ সেখানে মারা গেল। আমি বিধবা হলাম, আমাদের একমাত্র সন্তান এতিম হলো। এটা কি দেশের আইন হতে পারে?
তিনি আরোও বলেন ,আমার স্বামী কলেজে ডেমনস্ট্রেটর পদে চাকরি করেন। তিনি হাতিয়ান্দহ ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি ছিলেন। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাও করেছিলেন। তবে কখনোই কোনো নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত হতেন না। সিংড়া থানার যে মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল, তাতে তাঁর নাম উল্লেখ ছিল না। সন্দেহমূলক গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। আদালত জামিনও দিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি জামিনে মুক্ত হয়ে বাড়ি ফিরতে পারলেন না। তাঁদের একমাত্র মেয়ে মেঘা খাতুন এবার এইচএসসি পাস করেছে।
এবিষয়ে জেলা বিএনপির সদস্য সচিব রহিম নেওয়াজ বলেন, এ কে আজাদ সোহেলকে মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তারের পর কারাগারে পাঠায় পুলিশ। সেখানে নির্যাতনের পরে সে হদ করে। কিন্তু সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসার অভাবে মৃত্যু হয় বলে অভিযোগ করেন তিনি। তার মৃত্যুতে জেলা বিএনপির পক্ষ থেকে শোক প্রকাশ করেন বিএনপির এই নেতা।
নাটোরের সিভিল সার্জন ও সদর হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত সহকারী পরিচালক মশিউর রহমান জানান, কারাবন্দী আবুল কালাম আজাদকে ২৯ নভেম্বর রাতে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আনা হয়েছিল। রোগীর অবস্থা ভালো না হওয়ায় তাৎক্ষণিক তাঁকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠাতে বলা হয়েছিল।
মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে নাটোর জেলা কারাগারের জেলার মো.মোশফিকুর রহমান জানান, ২১ নভেম্বর এ কে আজাদ সোহেলকে জেলহাজতে নিয়ে আসা হয়। সে নাশকতার মামলার আসামি ছিল। ২৯ তারিখ সন্ধ্যায় অসুস্থ হলে প্রথমে নাটোর সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানকার ডাক্তাররা
তাকে রাজশাহী মেডিকেলে রেফার্ড করলে আমরা তাকে রাজশাহীতে পাঠিয়ে দেই। সে রাজশাহী কারাগারের আওতায় চিকিৎসাধীন ছিল। নিহত এ কে আজাদ সোহেলের অসুস্থতার কথা পরিবারকে জানানো হয়েছিলো কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, হরহামেশাই অনেকে এরকম অসুস্থ হয়। রাজশাহীর দূরত্ব অল্প হওয়ায় পরিবারকে খবর দেওয়া তখন হয়তো জরুরী মনে হয়নি।#