// নাটোর প্রতিনিধি:
নাটোরের বড়াইগ্রামে শাহেদুল আলম শাহেদ। বয়স তার ২৪ বছর। এক প্রকার সৌখিনতা থেকেই তিনি শুরু করেছিলেন সোশ্যাল কন্টেন্ট (সামাজিক বিষয়বস্তু) তৈরি করা ও তা সোশ্যাল মিডিয়াতে প্রচার করা। ক্রমে ক্রমে ব্যাপক সাড়া পাওয়ার পর তিনি ইউটিউব-এ নিজ নামে খুলে নেন একটি চ্যানেল। তারপর থেকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তার। কন্টেন্ট তৈরি করে সে কন্টেন্ট এর আলোকে শর্ট ড্রামা ও শর্ট ফিল্ম তৈরি করে তা প্রচার করেন ইউটিউবে। বর্তমানে তার তিনটি ইউটিউব চ্যানেল রয়েছে। এ ইউটিউব চ্যানেলে তার নির্মাণ করা কন্টেন্ট প্রচার করে মাসে আয় হচ্ছে গড়ে আড়াই লক্ষ টাকা। যা বছরে দাড়ায় ৩০ লক্ষ টাকা। শাহেদ ফিল্ম নামে তার ছোট্ট ইন্ডাস্ট্রিজ-এ বেতনভুক্ত হয়ে কাজ করছে ৬ জন তরুণ-তরুণী। এছাড়া কন্টেন্টগুলোতে অভিনয় করে বাড়তি আয় করছে স্থানীয় শিক্ষার্থী, গৃহিনী ও অন্যান্য পেশাজীবি সহ কমপক্ষে ১৫ জন তরুণ-তরুণী। নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার জোনাইল ইউনিয়নের সরাবাড়িয়া দক্ষিণপাড়ায় তিনি প্রতিষ্ঠা করেছেন ছোট্ট এ ইন্ডাস্ট্রিজ। শাহেদ ওই গ্রামের আলাউদ্দিন প্রামাণিকের ছেলে।
শুক্রবার সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিনোদন জগতের তরুণ উদ্যোক্তা শাহেদুল আলম শাহেদ তার কার্যালয়ের সামনের সড়কে একটি শর্ট ফিল্ম ধারণ করছেন। সেখানে কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি জানান, স্কুল জীবন থেকেই অভিনয়ের সাথে তার সম্পৃক্ততা। তিনি প্রাণিবিদ্যা বিভাগ থেকে এ বছর ¯œাতক (সম্মান) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে পাবনা এডওয়ার্ড কলেজে মাস্টার্স এ ভর্তি হয়েছেন। শাহেদ বলেন, ‘লেখাপড়ার পাশাপাশি ছোট নাটক ও ফিল্ম তৈরি করে তা আমার নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেলে প্রচার করছি। এতে আমি মাসে সন্তোষজনক বৈদাশিক মুদ্রা আয় করছি। দেশের রেমিট্যান্স অর্জনে আমি একজন সহযোগী এটা ভাবতেই অনেক বেশী ভালো লাগে। পাশাপাশি ১৫-২০ জন তরুণ-তরুণী এখান থেকে আয় করছে। সেটাও একধরণের পরিতৃপ্তির বিষয়’। তরুণ বিনোদন উদ্যোক্তা শাহেদ আরও জানান, চাকরীর পেছনে না ঘুরে আমি ২০১৫ সাল থেকে ইউটিউব এর মাধ্যমে আয় করার পরিকল্পনা গ্রহণ করি। তবে সুস্থ বিনোদনের মাধ্যমে সমাজের লাখ লাখ মানুষকে আনন্দ দেওয়া ও সুস্থ সমাজ গঠনে উপযুক্ত কন্টেন্ট তৈরি করে তা প্রচার করাটাই হচ্ছে আমার কাছে মূখ্য বিষয়। সুস্থ ধারার কন্টেন্ট প্রচারের জন্য ইতোমধ্যে তিনি ইউটিউব কর্তৃপক্ষ থেকে ৩টি এ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন। শাহেদুল আলম শাহেদ এর ‘শাহেদ খান’, ‘শাহেদ ফিল্ম’ ছাড়াও ‘শাহেদ ফুড চ্যালেঞ্জ’ নামে রয়েছে আরেকটি ইউটিউব চ্যানেল। এ চ্যানেল সম্পর্কে শাহেদ জানান, গ্রামের মানুষদের জন্য রিয়েলিটি শো’র আয়োজন করা হয় ওই চ্যানেলে। যেখানে গ্রামীণ পটভূমির বা গ্রামের ঐতিহ্যবাহী খেলার প্রতিযোগিতার আয়োজন করে ও তা ধারণ করে সেগুলো ইউটিউবে প্রচার করা হয়। এতে করে দর্শক গ্রামের আনন্দ খুঁজে পায়। ওই খেলায় বিজয়ীদের আটা, তেল, সেমাই, নুডুলস্, লবণ সহ বিভিন্ন প্রকার নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী উপহার দেওয়া হয়।
জোনাইল ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ জানান, শাহেদ একজন সফল উদ্যোক্তা। সে নিজ গ্রামে বসবাস করে বৈদাশিক মুদ্রা অর্জন করছে। পাশাপাশি এলাকার বেশ কিছু ছেলে-মেয়ের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে। এটা একটি দৃষ্টান্ত। তিনি শাহেদ এর কর্মময় সাফল্য কামনা করেন।
বড়াইগ্রাম উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবু রাসেল জানান, এ ধরণের উদ্যোক্তাকে সরকার সমর্থন করে ও উৎসাহিত করে। চাকরীর পেছনে না ঘুরে অনলাইন ভিত্তিক উদ্যোক্তা তৈরি হোক এটাই প্রত্যাশা করেন তিনি।