সঞ্জু রায়, বগুড়া:
বিএনপি-জামায়াত ও সমমনা দলের ডাকা অবরোধের প্রথম দিন বগুড়ায় সংঘর্ষ, ককটেল বিস্ফোরণ, গাড়িতে আগুন, মহাসড়ক অবরোধসহ ভাংচুরের মধ্যে দিয়ে পালিত হচ্ছে৷
মঙ্গলবার সকাল থেকেই বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা ঢাকা-রংপুর মহাসড়কের বনানী, বেতগাড়ি, মাটিডালি ও বাঘোপাড়া অংশে অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে থাকেন। এই সময় তারা লাঠিসোটা হাতে মহাসড়কে টায়ার জ্বালিয়ে অবস্থান নেন৷
অবরোধে লিচুতলা বাইপাস এলাকায় ৩টি মোটরসাইকেলে আগুন দিয়েছে অবরোধের সমর্থকরা। এছাড়াও পুলিশকে লক্ষ্য করে বেশ কয়েকটি ককটেক বিস্ফোরণ করে তারা। এছাড়াও দুইটি ট্রাক ও একটি বাস ভাংচুর করা হয় অবরোধে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ কাঁদুনে গ্যাস ছুঁড়েছে৷ এই সময় শাজাহানপুর উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সোহরাব হোসেন ছান্নু ও সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল হক হাতবোমার স্প্রিন্টারে আহত হয়েছেন। পাশাপাশি বিএনপিরও অন্তত পাঁচ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন৷
এদিকে সকাল থেকেই বগুড়া সদরের বাঘোপাড়া, বারপুর ও ২য় বাইপাস সড়কে মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করতে দেখা যায় বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামির নেতাকর্মীদের। এসময় ঢাকা-রংপুর মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে গাড়ি ভাঙচুর চালায় বিএনপি- জামাতের নেতাকর্মীরা। তারা দূরপাল্লার যাত্রীবাহী বাস ও পণ্যবাহী ট্রাক আটকে রাখে। খবর পেয়ে পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ও এপিবিএনের যৌথ দল ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এই সময় তারা পার্শ্ববর্তী একটি ইটভাটা থেকে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছুঁড়তে থাকে৷ এই সময় পুলিশ সদস্যদের লক্ষ্য করে দুইটি হাতবোমা বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ কয়েক রাউন্ড রাবার বুলেট ও ক্যাঁদুনে গ্যাস নিক্ষেপ করে র্যাব- পুলিশ। এ সময় পিকেটাররা একটি ট্রাক ভাংচুর করেন। সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে সাংবাদিকদের দুইটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর ও দুই সাংবাদিককে মারধর করা হয়৷ একই স্থানে দুপুরের দিকে অবরোধের সমর্থনকারীরা আগুন দেয় এজেআর কুরিয়ার সার্ভিসের একটি গাড়িতে যা নিয়ন্ত্রণে আনে ফায়ার সার্ভিসের দুইটি ইউনিট।
অবরোধ প্রসঙ্গে বগুড়া জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নূরে আলম সিদ্দিকী রিগ্যান বলেন, দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে মহাসড়কে শান্তিপূর্ণ অবরোধ করা হচ্ছে। তবে কেউ বাধা দিতে এলে তারা প্রতিহত করবেন।
আর জেলা বিএনপির সভাপতি রেজাউল করিম বাদশা বলেন, প্রশাসনের সাথে তাদের কোন বিরোধ নেই। তিনি উল্টো প্রশাসনের দিকে প্রশ্ন ছুড়ে বলেন, আপনার পরিবারকে বলুন তারা ভোট দিতে পারে কিনা। এদেশে গণতন্ত্র আছে কিনা। আপনি যে আয় করে সেটা দিয়ে বাজার খরচ চলে কিনা। এই সরকার লুট করে ধ্বংস করে দিয়েছে দেশটাকে। এর থেকে এদেশের মানুষ মুক্তি চায়। সেই কারণে তিনদিনের অবরোধ দেয়া হয়েছে। তিনি সাধারণ জনগণকে একটু কষ্ট করতে বলেন যার দরুণ এক সময় দেশে সুফল আসবে বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন তিনি।
সার্বিক প্রসঙ্গে জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার স্নিগ্ধ আখতার পিপিএম জানান, সকাল থেকে বগুড়ার বিভিন্ন এলাকা বিশেষ করে বনানী লিচুতলা মোড়, বাঘোপাড়া বন্দর, বারপুর, ২য় বাইপাস এলাকায় বারংবার বিএনপি-জামায়াত এর নেতাকর্মীরা নাশকতার চেষ্টা করে। পুলিশ, র্যাব ও বিজিবি সদস্যদের কঠোর অবস্থানের পরেও চোরাগুপ্তা হামলায় তারা একাধিক ককটেল বিস্ফোরণ করে। আগুন ধরিয়ে দেয় কাভার্ড ভ্যানসহ সাধারণ জনগনের যানবাহনে যা অত্যন্ত দু:খজনক। পুলিশ শুরু থেকে যথেষ্ট ধৈর্য্যের পরিচয় দিয়েছে এবং দিচ্ছে কিন্তু সাধারণ মানুষের জানমালের ক্ষতি করলে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। আন্দোলনের নামে তারা যেভাবে পুলিশ, গণমাধ্যমকর্মী ও সাধারণ মানুষের ক্ষতিসাধন করতে মেতে উঠেছে তা শক্ত হাতে প্রতিহত করা হবে।