সঞ্জু রায়, নয়াদিল্লী (ভারত) থেকে ফিরেঃ
সৌরশক্তির ব্যবহারে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে সর্বোচ্চ সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে ইন্টারন্যাশনাল সোলার অ্যালায়েন্স (আইএসএ)। তারা বলেছে, নবায়নযোগ্য জ্বালানির জন্য বাংলাদেশের ১০ বছর মেয়াদী সোলার রোডম্যাপ তৈরিতে সহায়তা করে যাবে সংস্থাটি। সংস্থাটি মনে করেন, ‘বাংলাদেশ সৌরশক্তির ব্যবহারে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি লাভ করেছে। বিশেষ করে ছাদে সোলার ব্যবহারে। এক্ষেত্রে নীতি এবং নিয়ন্ত্রণ সহায়তার পাশাপাশি সৌরশক্তি উৎপাদনে বিনিয়োগ ত্বরান্বিত করা যেতে পারে। ’
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আমন্ত্রণে সম্প্রতি ভারত সফররত বাংলাদেশি সাংবাদিক প্রতিনিধি দলের সাথে হরিয়ানা রাজ্যে আইএসএ সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় কালে সংস্থার কর্মকর্তারা এ কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে আইএসএর মহাপরিচালক ড. অজয় মাথুরের পক্ষে স্বাগত বক্তব্য দেন সংস্থার চিফ অব অপারেশন্স জশুয়া উইক্লিফ। তিনি বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সমাধান হিসেবে সোলারকে উৎসাহিত করতে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে আইএসএ ও বাংলাদেশ।’ ‘বাংলাদেশ আইএসএর প্রথম দিকের সমর্থক। ২০১৬ সালে সদস্য হিসেবে অ্যালায়েন্সে যোগ দেওয়া এই দেশ এখন দুই বছর মেয়াদে এশিয়া ও প্যাসিফিক রিজিওনের ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে। ’
সভায় দুই দেশের সম্পর্ক ও সম্ভাবনার অনেকগুলো জায়গা নিয়ে বিস্তারিত কথা বলেন আইএসএর প্রোগ্রাম অ্যান্ড প্রজেক্ট ইমপ্লিমেন্টেশন ক্লাস্টার বিভাগের চিফ রমেশ কুমার। তিনি বলেন, ‘সোলার রোডম্যাপ প্রকল্পে আমরা পরামর্শক হিসেবে যুক্ত থাকছি। সৌরশক্তির ব্যবহার বাড়াতে সব রকমের সম্ভাব্যতা আমরা পর্যালোচনা করছি। পুরো প্রক্রিয়াই আরও বেশি সৌরশক্তিনির্ভর হবে। ’
মতবিনিময় সভায় বাংলাদেশি সাংবাদিকদের মাধ্যমে জানানো হয়, নবায়নযোগ্য জ্বালানির লক্ষ্যমাত্রা এবং ৫০ লাখেরও বেশি বাড়িঘরে সৌরশক্তি সরবরাহ করা সোলার হোম সিস্টেম প্রোগ্রামের মতো উদ্যোগের মাধ্যমে বাংলাদেশের সৌরশক্তি খাতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি লাভ করেছে। বাংলাদেশ সরকার বিভিন্ন নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রকল্পে সহায়তা করার জন্য ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড (ইডকোল) প্রতিষ্ঠা করেছে। এক্ষেত্রে অগ্রগতি হলেও পর্যাপ্ত অর্থের অভাব, অপর্যাপ্ত গ্রিড অবকাঠামো এবং সীমিত প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতার মতো কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েই গেছে। আইএসএ এসব সমস্যা সমাধানে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের বিদ্যুৎ বিভাগের সঙ্গে কান্ট্রি পার্টনারশিপ চুক্তির মাধ্যমে সক্রিয়ভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এই চুক্তির লক্ষ্য নীতি উন্নয়ন, নিয়ন্ত্রক কাঠামো এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের মাধ্যমে বাংলাদেশে সৌরশক্তির ব্যবহার ত্বরান্বিত করা। এ বিষয়ে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় আঞ্চলিক কমিটির পঞ্চম বৈঠকে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের দেওয়া বক্তব্য তুলে ধরে আইএসএ। প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্যের সূত্র ধরে আইএসএ কর্মকর্তারা বলেন, ‘আইএসএর লক্ষ্য সৌরশক্তি উৎপাদন করার মাধ্যমে পরিচ্ছন্ন জ্বালানি রূপান্তরে অবদান রাখা। আইএসএর নয়টি বিস্তৃত প্রোগ্রাম রয়েছে, যা কৃষি, স্বাস্থ্য, পরিবহন, স্টোরেজ, সবুজ হাইড্রোজেনসহ বিস্তৃত ক্ষেত্রে সৌরশক্তির সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর উপায় খোঁজে। ’
এদিকে মতবিনিময় সভায় আইএসএ’র মহাপরিচালক ড. অজয় মাথুর উপস্থিত হতে না পারলেও এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানান, ‘দীর্ঘমেয়াদী জ্বালানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের লক্ষ্যে সৌরশক্তি ব্যবহার এবং সহযোগিতামূলক প্রচেষ্টা গড়ে তোলার বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে সহায়তা প্রদানের জন্য আমরা বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে আমাদের সহযোগিতা জোরদার করছি। বিশ্বব্যাপী বিকল্প জ্বালানির উৎস হিসাবে সোলারকে বেছে নেওয়া হচ্ছে। ’ আইএসএ ও বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে পারস্পারিক সহযোগিতা বাংলাদেশে সৌরশক্তি ব্যবহার বাড়াবে।
ঢাকাস্থ ভারতীয় হাইকমিশনের সেকেন্ড সেক্রেটারি প্রেস অফিসার শিলাদিত্য হালদারের নেতৃত্বে ভারত সফরকালে অনুষ্ঠিত এই সভায় বাংলাদেশী সাংবাদিকদের মাঝে এসময় ছিলেন জনকণ্ঠের সম্পাদক ওবায়দুল কবির মোল্লা, ডিবিসি নিউজের প্রণব সাহা, মাছরাঙা টিভির রেজওয়ানুল হক রাজা, একাত্তর টিভির শাকিল আহমেদ, নিউজ২৪ টিভির রাহুল রাহা, দিপক আচার্য্য, বাংলাদেশ প্রতিদিনের রাজশাহী প্রতিনিধি কাজী শাহেদ, সময় টিভির রাফি সাদনান আদিল, দেশ টিভি ও দৈনিক চাঁদনী বাজারের রিপোর্টার সঞ্জু রায়, ডিবিসি নিউজের প্রত্যুষ তালুকদার, জাগো নিউজের আসিফ আজিজসহ মোট ২৮ জনের প্রতিনিধি দল অংশ নেয়।