// ঈশ্বরদী (পাবনা) সংবাদদাতাঃ
বিগত প্রায় ২৬ বছর ধরে ঈশ্বরদীতে বাণিজ্যিকভাবে শিমের আবাদ হচ্ছে। উপজেলার মুলাডুলি ইউনিয়নের বাঘহাছলা, বেতবাড়িয়া, আটঘরিয়া, ফরিদপুর ও শেখপাড়া এলাকায় সবচেয়ে শিমের চাষ হয় বেশি। শিমের মৌসুমে এলাকার বাতাসে ভেসে বেড়ায় কীটনাশকের গন্ধ। কৃষকরা শিম আবাদে প্রতি বেঘায় ৮ থেকে ৯ হাজার টাকার কীটনাশক ব্যবহার করেন। যা অন্য কোনো আবাদে হয় না। এতে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে জমির মাটি এবং মানবদেহ।
মুলাডুলির গ্রামগুলো ঘুরে দেখা যায়, বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে শুধু শিমের আবাদ। চাষিরা কেউ গাছের পরিচর্যা, কেউ শিম তুলছেন, কেউবা আগাছা পরিষ্কার করছেন, আবার শিমের ক্ষেতে কীটনাশক স্প্রে করছেন। কীটনাশকের উৎকট গন্ধে পথ চলতে নাকে রুমাল দিতে হয়।
ঈশ্বরদী কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, গত বছর শিমের আবাদ হয়েছিল ১ হাজার ১৩০ হেক্টর জমিতে। এবারে ১ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে শিম আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ হয়েছে। এরমধ্যে শুধু মুলাডুলি ইউনিয়নেই ৮৫০ হেক্টর জমিতে শিম চাষ হয়। শিমের আবাদে দুই ধরনের কীটনাশক বেশি ব্যবহার হয়। একটি পোকামাকড় দমনে অপরটি ছত্রাকনাশক বা পঁচনরোধে। এছাড়াও ফলন বৃদ্ধির জন্য গাছের উপরে কমপ্লেসাল সুপার, মিরাকোলান জাতীয় কীটনাশক ব্যবহার করা হয়। যা কৃষকদের কাছে শিম গাছের ভিটামিন নামে পরিচিত। শিমের ফুল ও কচি শিমের জাবপোকা দমন করতে সপ্তাহের পাঁচ দিন কীটনাশক স্প্রে করতে হয়। কোনো কোনো জমিতে পোকার আক্রমণ বেশি হওয়ায় দিনে দুইবারও বিষ প্রয়োগ করা হয়। সাধারণত: ছত্রাকনাশক হিসেবে সানকোনাজল, ফলিপুর, কনটাফ, লোনা, অটোস্টিন, এনট্রাকল এবং পোকাদমনে ফেনফেন, সুমি আলফা, বেল্ড এক্সপার্ট, এরাস্টার, এমাপ্লাস, লুমেকিটিন, কনফিডর ও সলেমনসহ বিভিন্ন নামে কীটনাশক ব্যবহৃত হচ্ছে।
জানা গেছে, শিম আবাদে প্রতি বিঘায় কমপে ৮ থেকে ৯ হাজার টাকার কীটনাশক ব্যবহার হয়। কখনো কখনো আরও বেশি হয়। ঈশ্বরদীতে ১ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে শিমের আবাদ হয়। হিসেব কষে দেখা যায়, ৯ হাজার বিঘা জমিতে কীটনাশক খরচ বিঘায় ৮ হাজার ধরা হলে শিমের জমিতে ৭ কোটি ২০ হাজার টাকার কীটনাশক ব্যবহার হয়।
বেতবাড়িয়ার শহিদুল জানান, এখানে ৯৫ ভাগ জমিতে শিমের আবাদ হয়েছে। শিমের গাছ বড় হওয়ার পর পঁচনরোধ ও পোকাদমনে ২-৩ দিন পরপরই কীটনাশক দিতে হয়। কীটনাশক ব্যবহার করলে দুর্গন্ধ ছড়ায় ও পরিবেশ নষ্ট হয়, কিন্তু কিছু করার নেই। শিম চাষ করতে হলে কীটনাশক ব্যবহার করতেই হবে।
এলাকায় শিম বাবু হিসেবে পরিচিত মুলাডুলির আমিনুল ইসলাম বাবু জানান, শিমের কীটনাশক বাবদ খরচ করতে হয় বিঘায় ১০-১২ হাজার টাকা। দানাদার, সুমিথিয়ন, টাফগড়, ফ্যানথেন, ওকোজিমসহ নানা ধরনের কীটনাশক নিয়মিত জমিতে স্প্রে করতে হয়। অসাবধানতাবশত: শরীরে পড়লে কৃষকরা অসুস্থ হয়ে পড়েন, এমনকি জ্ঞানও হারিয়ে ফেলেন।
উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা রুমানা ইয়াসমিন বলেন, মাঠ পর্যায়ে পর্যালোচনা করে দেখেছি, শিম আবাদে এক বিঘায় প্রায় ৩৯ হাজার টাকা খরচ হয়। কীটনাশক বাবদই ৭-৮ হাজার টাকা খরচ হয়। আবহাওয়া অনুকূলে না থাকলে শিমচাষে কীটনাশক বেশি প্রয়োজন হয়। শীতকালে রোদের উত্তাপ বেশি থাকলে পোকামাকড়ের আক্রমণ বেড়ে যায়। কৃষকদের পরিবেশ বান্ধব কীটনাশক প্রয়োগের পরামর্শ দিচ্ছি। মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহারে মাটি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে জানিয়ে বলেন, কৃষকদের স্বাস্থ্যঝুঁকিও বাড়ছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আসমা খান বলেন, সবজি আবাদে কীটনাশকের ব্যবহার মানবদেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।এসব সবজি খেলে ক্যানসার হতে পারে। কিডনি ও লিভার ড্যামেজ, বিকলাঙ্গ শিশুর জন্মসহ নানা জটিল রোগে মানুষ আক্রান্ত হতে পারে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মিতা সরকার জানান, ফসল উৎপাদনে কীটনাশক যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনি অতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহার পরিবেশ ও মানব স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক। আমরা নিয়ন্ত্রিত মাত্রায় কীটনাশক ব্যবহারের জন্য পরামর্শ দিয়ে থাকি। রাসায়নিক কীটনাশকের পাশাপাশি জৈব কীটনাশক ব্যবহারেও উৎসাহিত করছি। জৈব কীটনাশকে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। পরিবেশ ভালো থাকবে এবং কৃষক ও ভোক্তাদের স্বাস্থ্যের কোনো ক্ষতি হবে না।