ফরিদপুর জেলা প্রতিনিধি-
ফরিদপুর-৪ আসনের সংসদ সদস্য ও আওয়ামী যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মজিবুর রহমান নিক্সন চৌধুরী বলেছেন, আমার চরাঞ্চলের ঝাউকান্দায় এখন বিদ্যুত আছে, গাজিরটেক, চর হরিরামপুর এলাকার সব ঘরে বিদ্যুৎ আছে। এ অঞ্চলের মানুষের দাবি ছিল নদী ভাঙন রোধ করা, আমরা নদী শাসনের কাজ করেছি। প্রতিটা জায়গায় উন্নয়নের ছোয়া লেগেছে।
তিনি কাজী জাফরউল্লাহকে উদ্দেশে বলেন, ‘আমার বুড়া চাচা আজকে সাড়ে চার বছর পর আসছেন। বন্যায় আসেন না, করোনায় আসেন না, ভোটের আগে আইসা বলেন খেলা হবে। চাচা আপনার সঙ্গে আমার খেলা মানায় না। আপনি আমার বাপের থেকেও বয়সে বড়। আপনার সঙ্গে আমি কী খেলব, আপনে আজকে জনসভা দেখলে এই কথা কইতেন না। তাই এ খেলাধুলা বাদ দেন। মানুষের সেবা করেন নাই। চার বছর বিপদের সময়, করোনার সময়, বন্যার সময়, নদী ভাঙনের সময় আসেন নাই, এখন আইসা কন খেলা হবে।
বুধবার (০৪ অক্টোবর) বিকেলে ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলার চর হাজিগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন নিক্সন চৌধুরী এমপি।
গাজিরটেক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ইয়াকুব আলী নিক্সন চৌধুরীর সঙ্গে যোগদান উপলক্ষে এ জনসভার আয়োজন করা হয়।
স্থানীয় খবিরউদ্দিন মাস্টারের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথির বক্তব্যে কাজী জাফরউল্লাহকে উদ্দেশ্য করে নিক্সন চৌধুরী আরও বলেন, ‘আপনি কৃষ্ণপুরে মিটিং করছেন, তালমা, ডাঙ্গিসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে লোক এনে মিটিং করছেন। আইসা দেইখা যান চরভদ্রাসন উপজেলার মানুষ ছাড়া এখানে একটা মানুষ নাই। এটাকে বলে ভালোবাসা। আমরা ভাড়ার লোক এনে মিটিং করি না। যে উপজেলার মিটিং সেই উপজেলার মানুষ নিয়ে মিটিং করি।
তিনি বলেন, আসেন, যদি উন্নয়ন করে থাকি, যদি ভালোবেসে থাকি, যদি মানুষের সেবা করে থাকি অবশ্যই জনগণ আমাকে ভোট দেবে।
তিনি উপস্থিত জনতার উদ্দেশে বলেন, আগামী ১০ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রেল উদ্বোধন করবেন। আপনারা ওই দিন ভাঙ্গা স্টেডিয়ামে গিয়ে প্রমাণ করে দেবেন, ভাঙ্গা, সদরপুর ও চরভদ্রাসনের মানুষ নিক্সনকে কতো ভালোবাসে। আপনারা আজকে যেমন বৃষ্টির মধ্যে ভালোবাসায় ছুটে এসেছেন। আপনাদের এই ভালোবাসা ও দোয়া থাকলে বাংলাদেশের মধ্যে এই তিন উপজেলাকে উন্নয়নের মাধ্যমে মডেল উপজেলা বানিয়ে দেব। আপনারা আমার ওপর বিশ্বাস রাইখেন।
নিক্সন চৌধুরী বলেন, ‘আমি কাজী সাহেবকে বলতে চাই, সাড়ে চার বছর আপনি কই ছিলেন। আপনি বলে প্রেসিডিয়াম মেম্বার, আপনি অনেক ক্ষমতাবান লোক, এ ক্ষমতা দিয়ে এলাকার মানুষের জন্য কী করছেন। আপনার ক্ষমতা কোনোদিন উন্নয়নে ব্যবহার করেন নাই, আপনার ক্ষমতা শুধু নির্বাচনে ব্যবহার করেন। মানুষ আপনাকে দুই বার লাল কার্ড দেখাইছে। আপনার লজ্জা সরম বলতে কিছু নাই। আগামীতে তৃতীয় বারের মতো একটি লাল কার্ড খাওয়ার জন্য আপনি আসছেন।
তিনি বলেন, ‘আমার জীবনে চাওয়ার কিছু নাই। আমার অর্জন কী জানেন। আমার অর্জন আপনারা। আজকে রাস্তা দিয়ে যেখানে যাই সেখানেই চার বছরের বাচ্চারা কয় নিক্সন যায়, এটাই আমার কামাই। তের চৌদ্দ বছরের ছেলেরা আমারে কয় দোস্ত কই যাচ্ছো, এটাই আমার কামাই। মুরুব্বীরা মাথায় হাত দিয়ে দোয়া করে দেয়, এটাই আমার কামাই। তাই আপনারা আগামী নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত থাকেন, আমরা নৌকা চাইব, যদি নৌকা না দেয়, আপনারা যে মার্কা দিবেন সেই মার্কায় নির্বাচন করব। কাজী জাফরউল্লাহকে তৃতীয় বারের মতো হারিয়ে হ্যাটট্রিক করে এই তিন উপজেলা থেকে বহিষ্কার করে এই এলাকার উন্নয়ন আমরা করব।’
তিনি বলেন, ‘আমার হৃদয় ভরে গেছে, মন ভরে গেছে। আমাদের জীবনের সবচেয়ে আনন্দের একটি দিন আজ। সারাদিন বৃষ্টি হয়েছে। তারপরও আপনারা বৃষ্টি মাথায় নিয়ে চরাঞ্চল থেকে ট্রলারে ভালেবাসা দেখাতে এখানে এসেছেন। আমি আপনাদের কাছে চিরকৃতজ্ঞ। আপনারা আমার জন্য দোয়া করবেন, আমাকে যে ঈমানি দায়িত্ব আপনারা দিয়েছেন আমি যেন আপনাদের উন্নয়ন, সেবা করে সেই ঈমানি দায়িত্ব পালন করতে পারি।’
জনসভায় বক্তব্য রাখেন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন, চরভদ্রাসন উপজেলা চেয়ারম্যান মো: কাউসার হোসেন, সদরপুর উপজেলা চেয়ারম্যান কাজী শফিকুর রহমান, ভাঙ্গা উপজেলা চেয়ারম্যান এস এম হাবিবুর রহমান, চরভদ্রাসন সদর ইউপি চেয়ারম্যান আজাদ খান, চর ঝাউকান্দা ইউপি চেয়ারম্যান বদিরুজ্জামান মৃধা, জাহাঙ্গীর কবির ও যোগদানকৃত গাজীরটেক ইউপি চেয়ারম্যান ইয়াকুব আলী প্রমুখ।
এর আগে দুপুর থেকেই বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে বাদ্য নিয়ে খণ্ড খণ্ড মিছিল সহকারে জনসভাস্থলে হাজির হন নিক্সন চৌধুরীর সমর্থকরা। বৃষ্টি উপেক্ষা করে হাজারো মানুষের ঢল নামে জনসভায়।