নাটোরে পুলিশের সাথে আসামী ধরতে গেল তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী এবং তার বাহিনী

// নাটোর প্রতিনিধি
নাটোরে পুলিশের সাথে আসামী ধরার অভিযানে অংশ নিয়ে আলোচনার জন্ম দিয়েছে পুলিশের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী গোলাম কিবরিয়া সেলিম ওরফে কুত্তা সেলিম । এমনই একটি ছবি এবং ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে । ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ার পর জেলাজুড়ে আলোচনা সমালোচনা ঝড় উঠেছে । শহরের চিহিৃত সন্ত্রাসীদের সাথে পুলিশের এমন সখ্যতার ঘটনাকে মারাত্মক হুমকি হিসাবে দেখছেন সচেতন নাগরিকরা।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ছবিতে দেখা যায় , নাটোরের শীর্ষ সন্ত্রাসী গোলম কিবরিয়া সেলিম (ওরফে কুত্তা সেলিম) এবং এসআই মিন্টু মারামারি মামলার আসামী ময়েন উদ্দীনকে হাতকড়া লাগানো অবস্থায় ধরে নিয়ে আসছে। পাশে দাড়িয়ে আছে গোলাম কিবরিয়া সেলিমের কয়েকজন সহযোগী। তাদের মধ্যে বেলাল ও রুবেল টপটেরর বলে পরিচিত ।

গত বৃহ¯পতিবার নাটোরের শ্রমিকলীগ নেতা বাপ্পিকে মারধরের মামলার আসামী ধরতে অভিযানে বের হয় এসআই এ.জে. মিন্টু এবং এসআই মো. আরিফুল ইসলাম। এরপর জেলা বাগাতিপাড়া উপজেলা থেকে ময়েনকে গ্রেফতার করার পরে গোলাম কিবরিয়া সেলিমকে সাথে নিয়ে আসামী ময়েনকে ধরে নিয়ে আসছে এসআই মিন্টু এমন ছবি ছড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন মাধ্যমে।

এরপর বিষয়টি নজরে আসলে তড়িঘরি করে উপপরিদর্শক আরিফুল ইসলামকে নলডাঙ্গা থানা এবং মিন্টুকে বাগাতিপাড়া থানায় বদলী করে পুলিশ সুপার।

এরপর মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে নাটোর থানার সামনে একদল নারী পুরুষ এসআই মিন্টু এবং এসআই আরিফকে মানবিক পুলিশ অফিসার দাবি করে তাদের বদলির আদেশ প্রত্যাহারের দাবি জানায়। মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীদের অধিকাংশ দিনমজুর । মানববন্ধন চলাকালে অংশগ্রহণকারীরা জানান , কিসের দাবীতে মানববন্ধন সেটা তারা জানে না । বড় ভাইদের ডাকে তারা মানববন্ধনে এসেছে ।

এবিষয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিক নাটোর জেলা শাখার সভাপতি এড. আব্বাস আলী বলেন, “আাসামী ধরার এখতিয়ার শুধু পুলিশের। কোন সন্ত্রাসী আসামী ধরতে গেলে তা খুবই ভয়ঙ্কর ব্যাপার। এটা সুশাসনের জন্য হুমকি স্বরূপ। সন্ত্রাসী যদি আসামী ধরে আনে তাহলে পুলিশের কাজ কি?”

নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ স¤পাদক মোর্তজা আলী বাবলু বলেন, নাটোর থানার অফিসার ইনচার্জের সাথে গোলাম কিবরিয়া সেলিমের ঘনিষ্টতা সকলেই জানে। পুলিশের সাথে সেলিম বিভিন্ন যায়গায় আসামী ধরার অভিযান চালাতে যায়। সন্ত্রাসীরা যদি আসামী ধরতে যায় তাহলে আইনশৃঙ্খলার অবস্থা কি তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

অভিযুক্ত গোলাম কিবরিয়া সেলিম বলেন, “সাধারন নাগরিক হিসাবে আমি পুলিশকে আসামী ধরতে সহযোগীতা করেছি। পুলিশের সাথে বাপ্পীকে মারধরের আসামী ময়েনকে বাগাতিপাড়া থেকে ধরে নিয়ে এসেছি। আমি সাধারণ জনগন, পুলিশ জনতা ভাইভাই। আমি আসামীর খবর পেয়ে পুলিশকে ধরিয়ে দিয়েছি।“

নাটোর সদর থানার অফিসার ইনচার্জ নাছিম আহমেদ বলেন, “মারামারি মামলার আসামী ময়েন উদ্দীনকে বাগাতিপাড়া থেকে গত বৃহ¯পতিবার গ্রেফতার করে এসাই এ. জে. মিন্টু এবং আরিফুল ইসলাম। এরপর আমাকে হোয়াটস অ্যাপে আসামী ধরার ছবি পাঠায়। কিন্তু আসামী ধরার ক্ষেত্রে পুলিশ কে কার সহযোগীতা নিয়েছে সেটা আমার জানা নাই। তারা যে অপরাধ করেছে সেটার শাস্তিতারা পেয়েছে।“ তবে গোলাম কিবরিয়া সেলিমের সাথে তার (ওসি নাছিমের) ঘনিষ্টতা বিষয় তিনি অস্বীকার করে বলেন এরকম অভিযোগের কোন ভিত্তি নেই।
নাটোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মাহমুদা শারমীন নেলী জানান,মারামারির অভিযোগে
গোলম কিবরিয়া সেলিমের বিরুদ্ধে ছয়টি মামলা রয়েছে ।

নাটোরের পুলিশ সুপার (এসপি) তারিকুল ইসলাম জানান, আসামি ধরার জন্য কোনো চিহ্নিত অপরাধীর সাহায্যের প্রয়োজন নেই পুলিশের। সমাজে অনেক ভালো মানুষ আছে পুলিশকে সাহায্য করার জন্য। এছাড়া দুই এসআইকে বদলীর বিষয়টিকে পুলিশের নিয়মিত কার্যক্রমের অংশ দাবি করেন তিনি বলেন, এই বদলি ঠেকাতে কারা মানববন্ধন করেছে সে বিষয়ে খতিয়ে দেখে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি। তবে তাদের বদলীর বিষয়টিকে নিয়মিত পুলিশের কার্যক্রমের অংশ বলে দাবি করেন তিনি। আর ওই দুই উপপরিদর্শকের বদলী ঠেকাতে কারা কেন মানববন্ধন করলো সে বিষয়ে খতিয়ে দেখে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন তিনি।
তবে বারবার চেষ্টা করতে অভিযুক্ত উপপরিদর্শক এ.জে. মিন্টু এবং উপপরিদর্শক আরিফুল ইসলাম ফোন ধরেন নি।