বাঙালি সংস্কৃতির চেতনাকে রুখে দেবার চেষ্টাকারীরা বারবার ব্যর্থ হয়েছে:: রাষ্ট্রপতি

// সাঁথিয়া (পাবনা) প্রতিনিধিঃ রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন বলেছেন, নৌকাবাইচ আবহমান বাংলার সমৃদ্ধ সংস্কৃতির একটি অনন্য ঐতিহ্য। বাংলার আনাচে কানাচে ছড়িয়ে আছে লোকসংস্কৃতির অমূল্য বহু উপাদান। এসব লোকসংস্কৃতি সঠিকভাবে লালন করা গেলে এগুলো বিশ্ব সংস্কৃতি ও সাহিত্যের অমূল্য সম্পদ হয়ে উঠতে পারে। ধর্মের দোহাই দিয়ে অনেকেই বাঙালি সংস্কৃতির চেতনাকে রুখে দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) বিকেলে পাবনার সাঁথিয়ায় ইছামতি নদীতে নৌকাবাইচের ফাইনাল প্রতিযোগিতায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য কালে রাষ্ট্রপতি এ কথা বলেন।
রাষ্ট্রপতি বলেন, বাঙালি জাতীয়তাবাদ থেকে বাঙালি সংস্কৃতির সৃষ্টি। বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতীয়তাবাদের চেতনায় জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেছেন। সত্তরের নির্বাচনে জয় ও স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন। নৌকা স্বাধীনতার প্রতীক এ কথা বলতে কোনও দ্বিধা নাই। স্বাধীনতা ছাড়া আমাদের অস্তিত্ব অর্থহীন।
তিনি বলেন, পাবনা জেলা বাঙালি লোকসংস্কৃতির উর্বর ক্ষেত্র। এ জেলায জন্মগ্রহণ করেছিলেন বাংলা সিনেমার কিংবদন্তি নায়িকা সুচিত্রা সেন। বাংলা সাহিত্য সংস্কৃতির অনেক দিকপাল ও কীর্তিমানের জন্ম এ জেলায। আমরা আমাদের শিল্প-সংস্কৃতির ঐতিহ্য নিয়ে গর্বিত। নৌকাবাইচ আমাদের এলাকায় তেমনি একটি ঐতিহ্যবাহী উৎসব। আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য বিশ্বের যে কোনও দেশের তুলনায উন্নত, সমৃদ্ধ ও অমলিন। বাংলার আকাশে বাতাসে দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে থাকা আমাদের সাংস্কৃতিক উপাদানগুলোকে খুঁজে বের করতে হবে। এগুলোর সঠিক পরিচর্যা আমাদের সংস্কৃতিকে আরো অনেক উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারে।
রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন বলেন, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও অসাম্প্রদায়িক চেতনা আমাদের ঐতিহ্য। ঈদ, পূজা, পার্বণ ও অন্যান্য সকল ধর্মীয উৎসব এবং মৌসুমী ও ঋতুভিত্তিক বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকলের অংশগ্রহণই আমাদের ঐতিহ্যকে বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশে পরিণত করেছে। বিশেষ করে মঙ্গল শোভাযাত্রা বিশ্ব ঐতিহ্যের উজ্জ্বল স্বাক্ষর। এই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিকে আমাদের যে কোনও মূল্যে এগিয়ে নিতে হবে। তথ্য প্রযুক্তি ও আকাশ সংস্কৃতির বর্তমান যুগে দেশীয লোকসংস্কৃতি সমূহ অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। এমতাবস্থায নতুন প্রজন্মের কাছে আমাদের সমৃদ্ধ সংস্কৃতি নৌকাবাইচ, পুতুল নাচ, জারি সারি, ভাওযাই গান, গ্রাম্য মেলা, নানাবিধ উৎসব ইত্যাদি তুলে ধরতে হবে।
উন্নযন একটি চলমান প্রক্রিযা উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, উন্নযন তখনই ফলপ্রসু হয যখন এর সঙ্গে জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণ, সম্পৃক্ততা ও সহযোগিতা থাকে। তাই পাবনার উন্নযনের সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। নীতি-নৈতিকতা ও আদর্শের কারণে আমরা বিভিন্ন মত ও পথের অনুসারী হতে পারি। কিন্তু পাবনার উন্নযনে আমরা এক ও ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করবো এটাই জনগণের প্রত্যাশা।
ডেপুটি স্পীকার শামসুল হক টুকু এমপির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন ফার্স্ট লেডি ড. রেবেকা সুলতানা। স্বাগত বক্তব্য দেন সাঁথিযা পৌরসভার মেযর মাহবুবুল আলম বাচ্চু।
অনুষ্ঠানে অন্যানের মধ্যে পাবনা-৪ আসনের সংসদ সদস্য নুরুজ্জামান বিশ্বাস, জেলা পরিষদের চেযারম্যান আ স ম আব্দুর রহিম পাকন, জেলা আওযামী লীগের সভাপতি রেজাউল রহিম লাল, বেড়া পৌরসভার মেয়র অ্যাডভোকেট আসিফ শামস রঞ্জন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিন উপলক্ষে পাবনার সাঁথিযা পৌরসভার উদ্যোগে ইছামতি নদীতে গত ২২ সেপ্টেম্বর সপ্তাহব্যাপী নৌকাবাইচের উদ্বোধন করা হয। বৃহস্পতিবার প্রতিযোগিতার ফাইনাল খেলা অনুষ্ঠিত হয। প্রতিযোগিতায বাগচী চ্যালেঞ্জার্স নামের নৌকা চ্যাম্পিযন ও শারিরভিটা এক্সপ্রেস নৌকা রানার্সআপ হয়। নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতা দেখতে জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে বিপুল সংখ্যক নারী-পুরুষ দর্শকের ভিড জমে।##