// আবদুল জব্বার , পাবনা
পাবনা জেলার সদর থানাধীন গয়েশপুর এলাকার জালালপুর নতুনপাড়ার মৃত নাজিম উদ্দীনের ছেলে মালেক হাজী (৫৫) নামের এক ব্যক্তির সূতা প্রসেস মিলের বদ্ধ দূর্গন্ধযুক্ত রাসায়নিক পদার্থ মিশ্রিত বিষাক্ত পানি ঐ এলাকাকে বিষাক্ত করে তুলেছে এমন অভিযোগ উঠেছে।
পাবনা সদর উপজেলার গয়েশপুরে অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠেছে ১টি অবৈধ সুতা ডায়িং অ্যান্ড প্রসেস মিল। এই মিলের ব্যবহৃত কেমিক্যাল মিশ্রিত বিষাক্ত তরল বর্জ্য ইফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট বা বর্জ্য পরিশোধনাগার (ইটিপি) স্থাপন না করে পাইপের সাহায্যে ফেলা হচ্ছে এলাকার মধ্যে।
এই সকল রঙের বিষাক্ত তরল বর্জ্য আশেপাশের পুকুরের পানিতে মিশে এবং বর্ষার মৌসুমে বৃষ্টির পানিতে প্রবাহিত হয়ে অন্যান্য অঞ্চলের বাণিজ্যিক মাছের খামার, কৃষি জমি, খাল, বিল, পুকুর ও জলাশয়ে মিশ্রিত হচ্ছে । এতে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে আছে জনসাধারণ ও চরম ক্ষতির মুখে জীবজগৎ। এছাড়া সুতা ডায়িং অ্যান্ড প্রসেস মিলে সুতায় বিভিন্ন ধরনের রঙ করা হচ্ছে। সুতা রঙের কাজে এসিড, কস্টিক সোডা, ব্লিচিং পাউডারসহ বিভিন্ন রাসায়নিক দ্রব্য ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। অবিলম্বে এসব প্রসেস মিল অ্যান্ড ডায়িং কারখানা জনবসতিহীন এলাকায় স্থানান্তরের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, ঐ এলাকার প্রসেস মিলের ডায়িং কারখানার দূষিত তরল বর্জ্য প্রবাহিত হয়ে এলাকায় পতিত হচ্ছে। সেখানে কৃষকের গবাদিপশুসহ স্থানীয় লোকজনের স্বাস্থ্যঝুঁকির সম্ভাবনা খুবই বেশি। অনেকেই নিরূপায় হয়ে ওই পানি ব্যবহার করছেন। এতে তারা চর্মরোগ, ক্যান্সার, পেটের পীড়াসহ নানা ধরনের জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। কারখানার পাশের খালে রাসায়নিক মিশ্রিত তরল বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। ওই তরল বর্জ্য ভূগর্ভস্থ পানির স্তরে গিয়ে মিশছে। ফলে ভূগর্ভস্থ পানি দূষিত হয়ে পড়ছে। ওই এলাকার বেশ কিছু অগভীর নলকূপে দুর্গন্ধযুক্ত পানি উঠছে। এছাড়া এলাকার জলজ উদ্ভিদ মরে যাচ্ছে।
তাছাড়াও কারখানার মধ্যে নেই কোন ব্রয়লার ও ইফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট বা বর্জ্য পরিশোধনাগার (ইটিপি)। ভেতরের কর্মচারীরা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে গ্লাভস, এ্যপ্রোন, মাস্ক, বুট ইত্যাদি ছাড়াই কাজ করে যাচ্ছে। এতে করে শ্রমিকদেরও স্বাস্থ্যের হানি ঘটার সম্ভাবনা থেকে যায়।
স্থানীয় সিরাজ উদ্দিন বিশ্বাসের ছেলে শাজাহান আলী বিশ্বাস (৫২) এই প্রতিবেদককে জানান আমি জালালপুর ফকিরপাড়া শহিদুল্লাহ ও মকছেদ হাজীর জমি লীজ নিয়ে একটি মাছের প্রজেক্ট করে এর আবাদ করে আসছি। কিন্তু আমার সেই মাছের প্রজেক্টে মালেক হাজী তার সূতা প্রসেজ মিলের পাশে মাটির পাড় কেটে আমার পুকুরে বিষাক্ত রাসায়নিক বর্জ্য ফেলে পুকুরের মাছ নিধন করে ক্ষতি সাধন করে আসছে।
এযাবৎ আমার প্রজেক্টের সমস্ত মাছ মরে অনুমান ১০-১২ লক্ষ টাকার ক্ষতি সাধন হয়েছে।
আমি ও এলাকার আরও অনেকে ঘটনার বিষয়ে স্থানীয় প্রধানবর্গ ও নিকট আত্মীয়-স্বজনদের অবগত করে পাবনা সদর থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছি যা পরবর্তীতে মামলা হওয়ার পথে।
এ ব্যাপারে এলাকাবাসী বলেন আমরা বিভিন্ন সময় মালেক হাজীকে বারবার জানিয়েও কোন লাভ হয়নি। সে আমাদের কথায় কর্ণপাত না করে মাটির পাড় কেটে দূর্গন্ধ যুক্ত রাসায়নিক পদার্থ মিশ্রিত বিষাক্ত পানি এলাকায় প্রাবাহিত করে।
উল্লেখ্য মালেক হাজী প্রচুর অর্থ বিত্তের মালিক এবং প্রভাবশালী হওয়ায় বারবার কৃষকের ক্ষতি সাধন করেও পার পেয়ে যাচ্ছেন বলে এলাকাবাসী জানান। “
জানা যায় সদর থানায় শাজাহান আলীর অভিযোগের ভিত্তিতে এসআই রবিউল আওয়াল ঐ এলাকা পরিদর্শন করেন। তার সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি এই প্রতিবেদককে জানান আমি সরেজমিনে গিয়ে দেখেছি সেখানে পারিবেশ দূষিত হয়েছে।
পাবনা জেলা কার্যালয় পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক নাজমুল হুসাইন বলেন মালেক হাজী কে উইভিং এর জন্য একটা ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে ডাইং বা বর্জ্য ওয়াশিং এ ধরনের কোনো ছাড়পত্র দেয়া হয়নি। যদি উনি এভাবে কোন তরল বর্জ্য উৎপাদন কার্য পরিচালনা করে পরিবেশ দূষণ করেন আমরা যথাযথ তদন্তের মাধ্যমে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাহমিদা আক্তার বলেন বিষয়টা জানা ছিল না আপনাদের মাধ্যমে জানলাম সরেজমিনে তদন্তের মাধ্যমে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।