// মানুষের সব গুনাহের কারণে আল্লাহ রাগ করেন না। কিন্তু কিছু কবিরা গুনাহের মাত্রা এতই কঠিন যে আল্লাহ তাআলা বান্দার ওপর রাগান্বিত হয়ে যান। আর আল্লাহ তাআলা কারো ওপর রাগান্বিত হলে তার ইহকাল-পরকালে সফলতা তো নেই-ই, উপরন্তু তার ওপর নেমে আসতে পারে দুনিয়াবি গজব। সেইসঙ্গে পরকালীন শাস্তি তো নির্ধারিত রয়েছেই।
আল্লাহ রাগ করেন—এমন কিছু কঠিন গুনাহের পরিচয় পবিত্র কোরআন ও হাদিসের আলোকে নিচে তুলে ধরা হলো—
১. কোনো মুমিনকে অন্যায়ভাবে হত্যা করা। ইরশাদ হয়েছে, ‘কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো মুমিনকে হত্যা করলে তার শাস্তি জাহান্নাম। সেখানে সে স্থায়ী হবে এবং আল্লাহ তার প্রতি ক্রুদ্ধ হবেন। তাকে লানত করবেন এবং তার জন্য মহাশাস্তি প্রস্তুত রাখবেন।’ (সুরা নিসা: ৯৩)
২. চতুষ্পদ জন্তুর উপাসনা করা। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা গোবৎসকে উপাস্যরূপে গ্রহণ করেছে, পার্থিব জীবনে তাদের ওপর তাদের রবের ক্রোধ ও লাঞ্ছনা আপতিত হবেই। আর এভাবে আমি মিথ্যা রচনাকারীদের প্রতিফল দিয়ে থাকি।’ (সুরা আরাফ: ১৫২)
৩. মা-বাবাকে কষ্ট দেওয়া। মা-বাবা অসন্তুষ্ট হলে মহান আল্লাহও অসন্তুষ্ট হয়ে যান। রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, মা-বাবার সন্তুষ্টির মধ্যে আল্লাহর সন্তুষ্টি আর মা-বাবার অসন্তুষ্টির মধ্যে আল্লাহর অসন্তুষ্টি। (তিরমিজি: ১৮৯৯)
৪. অসংযত ও বিদ্বেষমূলক কথাবার্তা বলা। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (স.) বলেছেন, নিশ্চয়ই বান্দা কখনো এমন কথা বলে যে কারণে আল্লাহ সন্তুষ্টি হন, অথচ সে কথা সম্পর্কে তার চেতনা নেই। এ কথার দ্বারা আল্লাহ তার মর্যাদা বৃদ্ধি করে দেন। আবার বান্দা কখনো আল্লাহর অসন্তুষ্টির কথা বলে ফেলে—যার পরিণতি সম্পর্কে তার ধারণা নেই, অথচ সে কথার কারণে সে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে। (বুখারি: ৬৪৭৮)
৫. মুরতাদ হওয়া বা দ্বীন থেকে বের হয়ে যাওয়া। ইরশাদ হয়েছে, ‘কেউ ঈমান আনার পর আল্লাহকে অস্বীকার করলে এবং কুফরির জন্য হৃদয় উন্মুক্ত রাখলে তার ওপর আল্লাহর ক্রোধ আপতিত হবে এবং তার জন্য আছে মহাশাস্তি। তবে সে ব্যক্তির জন্য নয়, যাকে কুফরির জন্য বাধ্য করা হয়, কিন্তু তার অন্তর ঈমানে অবিচলিত।’ (সুরা নাহল: ১০৭)
৬. কুফরি করা ও নবীদের হত্যা করা। এটি আল্লাহর ক্রোধ নেমে আসার অন্যতম কারণ। বনি ইসরাঈল আল্লাহর ক্রোধপ্রাপ্ত অন্যতম জাতি। তাদের ব্যাপারে বলা হয়েছে, ‘তারা লাঞ্ছনা ও দারিদ্রে পতিত হলো আর তারা আল্লাহর ক্রোধের পাত্র হলো। এটা এজন্য যে তারা আল্লাহর আয়াতকে অস্বীকার করত এবং নবীদের অন্যায়ভাবে হত্যা করত। অবাধ্যতা ও সীমালঙ্ঘন করার কারণেই তাদের এই পরিণতি হয়েছিল।’ (সুরা বাকারা: ৬১)
মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে তাঁর ক্রোধ থেকে রক্ষা করুন। আল্লাহ তাআলা রাগান্বিত হন—এমন গুনাহ থেকে বেঁচে থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।