সুন্দরগঞ্জে আইসিটি ট্রেনিং এন্ড রির্সোস সেন্টার নির্মাণ কাজ শুরু না, হতেই প্রকল্পের মেয়াদ শেষ

// হযরত বেল্লাল, সুুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা) প্রতিনিধিঃ

সরকারের রুপকল্প-২০২১ ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার বাস্তবায়নে ২০১৩ সন হতে মাধ্যমিক স্তরে তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষা চালু হয়। সেই লক্ষে ১৬০টি উপজেলায় আইসিটি ট্রেনিং এন্ড রির্সোস সেন্টার ফর এডুকেশন (ইউআইটিআরসিই) প্রকল্পের আওতায়  দুই তলা বিশিষ্ট ভবন নির্মাণ কাজ শুরু করে। ২০২১ সালের ৭ নভেম্বর ব্যানবেইসের মহাপরিচালক( অতিরিক্ত সচিব) ও প্রকল্প পরিচালক হাবিবুর রহমান স্বাক্ষরিত একটি চিঠিতে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার আইসিটি ট্রেনিং এন্ড রির্সোস সেন্টার ভবন নির্মাণ শুরুর লক্ষে নির্ধারিত স্থান ঠিকাদারকে বুঝে দেয়।

কোরিয়ান এক্সিম ব্যাংকের সহযোগিতায় ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট ফান্ডের অর্থায়নে ব্যানবেইস ইউআইটিআরসিই প্রকল্পের মাধ্যমে ভবন নির্মাণ শুরু করে। সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় নির্বাচিত ও মাটি পরীক্ষা সম্পন্ন করা স্থান ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান টিএআইএইচএএন কনসাটটিমকে (consortium) ভবন নির্মাণের জন্য ২০২২ সালের মে মাসে বুঝে দেন। চুক্তি মোতাবেক টিএআইএইচএএন কনসাটটিম ২০২৩ সালের মে মাসের মধ্যে নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করার কথা ছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হয়নি। অথচ চুক্তি মোতাবেক ২০২৩ সালের মে মাসে ভবন নির্মাণ চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়েছে।

বিগত ২০১৮ সালের ২২ মে তৎকালিন উপজেলা নির্বাহী অফিসার উপজেলার আইসিটি ট্রেনিং এন্ড রির্সোস সেন্টার ভবন নির্মাণের জন্য উপজেলা পরিষদ পুকুরের পশ্চিম ধারে  স্থান নির্ধারণ করে চিঠি দেন। সেই চিঠির আলোকে ভবন নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ভবনটি নির্মাণ না হওয়ায় দীর্ঘ ৫ বছর ধরে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের কার্যক্রম পুরাতন উপজেলা পরিষদ ভবনের পরিত্যক্ত ৩টি কক্ষে পরিচালিত হয়ে আসছে। 

ভবন নির্মাণের মাটি পরীক্ষা সম্পন্ন করা স্থান সাব ঠিকাদার লাজু মিয়া জানান, ২০২১ সালের মে মাসের পর থেকে আজ পর্যন্ত ভবন নির্মাণ ঠিকাদারী কোরিয়ান প্রতিষ্ঠান টিএআইএইচএএন কনসাটটিম তার সাথে যোগাযোগ করেনি। শুধুমাত্র দুইটি পাইলিং নির্মাণ করা হয়েছে। ভবন নির্মাণ স্থানে সামান্য পাথর ও বালু পড়ে রয়েছে। তিনি আরও জানান, দীর্ঘ তিন বছর ধরে একজন পাহারাদার ভবন নির্মাণের স্থানে চালাঘর তুলে বসবাস করছেন। তার দাবি সরকারের বরাদ্দ না থাকায় নির্মাণ কাজ বন্ধ রয়েছে।

ভবন নির্মাণ কাজের উপ-সহকারি প্রকৌশলী ডিপটি মিয়া জানান, ২০২২ সালে কোন কারণ ছাড়াই প্রকল্প পরিচালক ১৬০টি উপজেলায় ভবন নির্মাণ কাজের জন্য নিয়োগকৃত উপ-সহকারি প্রকৌশলীদেরকে চাকরি হতে অব্যাহতি প্রদান করেছেন। ভবন নির্মাণ কাজের ব্যাপারে তারা এখন কিছু জানেন না। তিনি বলেন ২০২৩ সালের মে মাসের মধ্যে ভবন নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হওয়ার কথা ছিল। 

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আব্দুল মমিন মন্ডল জানান, ভবন নির্মাণ সংক্রান্ত কোন প্রকার নথিপত্র উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসে নেই। তবে ২০২১ সালের মে মাস হতে ভবন নির্মাণের  নির্ধারিত স্থানে দুইটি পাইলিং, একটলি বালু ও একটি টলি পাথর একজন পাহারাদারের তত্ত্বাবধানে পড়ে রয়েছে। দীর্ঘদিনেও ভবন নির্মাণ না হওয়ায় উপজেলার হাজারও শিক্ষক আইসিটি প্রশিক্ষণ হতে বঞ্চিত হচ্ছে। এছাড়া ভবন না থাকায় উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের কার্যক্রম পরিচালনা করা অত্যন্ত কষ্টকর হয়ে পড়েছে। 

ব্যানবেইসের মহাপরিচালক(অতিরিক্ত সচিব) ও প্রকল্প পরিচালক মো. মুহিবুর রহমান মুঠোফোনে সমকালকে বলেন, দেশের ১৬০টি উপজেলায় প্রকল্পের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। কাগজপত্র না দেখে এককভাবে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার কথা বলা যাবে না। ২০২৩ সালের জুন মাসে প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হয়েছে। প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধিসহ নির্মাণ সামগ্রীর দাম বেড়ে যাওয়ায় পুনঃরায় তা সংশোধন করা হচ্ছে। চার তলার ফাউন্ডেশনসহ দুই তলা বিশিষ্ট ভবন নির্মাণ ও আসবাবপত্র এবং ল্যাপটপসহ যাবতীয় উপকরণ ক্রয় বাবদ মোট বরাদ্দ ১ কোটি ৮২ লক্ষ ৬১ হাজার ১৯২ টাকা। নিয়োগকৃত উপ-সহকারি প্রকৌশলীদেরকে চাকরি হতে অব্যাহতি প্রদানের বিষয়টি কোরিয়ান প্রতিষ্ঠান টিএআইএইচএএন কনসাটটিম জানে। এটি আমার জানা নাই।