// সঞ্জু রায়, বগুড়াঃ চা বিক্রির পেশা ছেড়ে একটু সুখের খোঁজে জমিজমা বিক্রি ও ধারদেনা করে গত সপ্তাহের রোববারে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকায় একটি ইজিবাইক কিনেছিলো ৪৭ বছর বয়সী বগুড়ার হায়দার আলী। কিন্তু সুখ যেন ধরা দিলো না হায়দারের কাছে! ৪দিনের মাথায় শহরের সাতমাথা গোহাইল রোড থেকে চুরি হয়ে যায় হায়দারের জীবিকার একমাত্র অবলম্বন ইজিবাইকটি। গত বৃহস্পতিবার সকালে ইজিবাইকটি চুরির পর হায়দারের করুণ কান্নার ভিডিও বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সোশ্যাল মিডিয়ার বদৌলতে পৌঁছায় লাখো মানুষের কাছে এড়ায়নি বগুড়া জেলা পুলিশ সুপার সুদীপ চক্রবর্ত্তীর নজরও।
উপার্জনের একমাত্র মাধ্যম হারিয়ে কতই না কষ্টে চলছে হায়দারের পরিবার এমন চিন্তায় দ্রুত সেই ইজিবাইকটি উদ্ধারে সদর থানা ও জেলা গোয়েন্দা শাখার সদস্যদের নির্দেশ প্রদানের মাধ্যমে হায়দারের পাশে এসপি সুদীপ চক্রবর্ত্তী এগিয়ে এসেছে মানবিক সহযোগিতা নিয়ে।
শনিবার বিকেল সাড়ে ৪ টার দিকে বগুড়া পুলিশ সুপার কার্যালয়ে হায়দারকে ডেকে দ্রæততম সময়ে তার চুরি হওয়া ইজিবাইক উদ্ধারের প্রতিশ্রæতি প্রদানের মাধ্যমে জেলা পুলিশের পক্ষে এই কয়দিন চলার জন্যে তাঁর হাতে নগদ অর্থ ও খাদ্য সামগ্রী তুলে দেওয়া হয়। পুলিশ সুপারের পক্ষে হায়দারকে নগদ অর্থ এবং চাল, ডাল, তেল, আটা, লবণ, আলু ও নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী তুলে দেন জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) স্নিগ্ধ আখতার। এসময় জেলা পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, বৃহস্পতিবার গোহাইল রোড থেকে হায়দারের ইজিবাইকটি চুরি হয়। এ ঘটনায় গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর তাঁর মানবিক আবেদন পুলিশের নজরে আসে। এজন্য পুলিশ সুপার সুদীপ চক্রবর্ত্তীর পক্ষ থেকে প্রাথমিকভাবে হায়দারকে নগদ ১০ হাজার টাকা ও খাদ্য সামগ্রী প্রদান করা হয়েছে। এই চুরির ঘটনায় শনিবার বগুড়া সদর থানায় একটি মামলা দায়ের হয়েছে। ইতিমধ্যে সিসিটিভি ফুটেজ দেখে অপরাধীদের শনাক্তে কাজ চলছে। থানা পুলিশের পাশাপাশি জেলা গোয়েন্দা পুলিশ গুরুত্বসহ ইজিবাইক উদ্ধারে কাজ করছে। হায়দারের সবরকম মানবিক আবেদনে পুলিশ কাজ করবে। এছাড়াও দ্রæত সময়ে তাঁর ইজিবাইক উদ্ধার ও জড়িতদের গ্রেপ্তার করা হবে।’
এই সময় হায়দার আলী গণমাধ্যমকে বলেন, ‘তার খারাপ সময়ে পুলিশ যেভাবে পাশে দাঁড়িয়েছে তাঁর জন্য কৃতজ্ঞ। ইজিবাইক চুরির পর থেকে তার স্ত্রী অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তবে পুলিশ তাকে আশ্বাস দিয়েছে ইজিবাইক তাঁরা উদ্ধার করে দিবেন। উনারা তাকে যেই সহযোগিতা করেছেন এতে আপাতত পরিবার নিয়ে খেয়ে পরে থাকতে পারবেন যা বিশাল উপকার বলে জানান তিনি। হায়দারকে মানবিক এই সহযোগিতা প্রদানকালে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্) আব্দুর রশিদ ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) মোতাহার হোসেন, বগুড়া সদর থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) মো: শাহিনউজ্জামান উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, এর আগে গত বৃহস্পতিবার সকাল ১১ টার দিকে শহরে সাতমাথায় প্রবেশ করায় হায়দার আলীর ইজিবাইকের সিট খুলে নিয়ে জব্দ করে ট্রাফিক পুলিশ। পরে শহরের গোহাইল রোডে ইজিবাইক রেখে তিনি ট্রাফিক পুলিশের বক্সে যান সিট ছাড়িয়ে নিতে। ফিরে এসে হায়দার দেখেন তার ইজিবাইক নেই। পরে বিভিন্ন জায়গায় খুঁজেও ইজিবাইকটি আর খুঁজে পাননি। জীবিকার একমাত্র অবলম্বন হারিয়ে কান্না থামছিলো না হায়দারের। হাঁপানি রোগে আক্রান্ত হায়দারের তিন সদস্যের সংসারের জীবিকার একমাত্র উৎস ছিল এই ইজিবাইকটি।