// দেশে মানুষের প্রত্যাশিত গড় আয়ু বেড়েছে। ২০২২ সালে দেশে মানুষের প্রত্যাশিত গড় আয়ু ৭২ দশমিক ৪ বছর। ২০২১ সালে ছিল ৭২ দশমিক ৩ বছর। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) জরিপ অনুযায়ী দেশে পুরুষের গড় আয়ু এখন ৭০ দশমিক ৮ বছর, আর নারীর গড় আয়ু ৭৪ দশমিক ২ বছর। অর্থাত্ পুরুষের তুলনায় নারীদের প্রত্যাশিত গড় আয়ু বেশি। তবে দেশে সামগ্রিকভাবে শিশুমৃত্যুর হার বেড়েছে। ২০২১ সালে দেশে এক বছরের কম বয়সি শিশুর মৃত্যুহার ছিল হাজারে ২২ জন, ২০২২ সালে তা বেড়ে হয়েছে ২৫ জন। সেই সঙ্গে পাঁচ বছরের কম বয়সি শিশু মৃত্যুহারও বেড়েছে। ২০২১ সালে যা ছিল প্রতি হাজারে ২৮ জন, ২০২২ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩১ জন।
গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর পরিসংখ্যান ভবন মিলনায়তনে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস ২০২২’-এর ফল প্রকাশিত হয়। সেখানে এসব তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। প্রত্যাশিত গড় আয়ু বাড়লেও দেশে মৃত্যুহার কিছুটা বেড়েছে। জরিপে আরো দেখা গেছে, ২০২১ সালে দেশে প্রতি হাজারে মৃত্যুহার ছিল ৫ দশমিক ৭, ২০২২ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ৮।
প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। বিশেষ অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম। পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের মানসিক দৃষ্টিভঙ্গি ঘুরছে, জ্ঞানবিজ্ঞানের দিকে আমরা যাচ্ছি। আমার ধারণা, প্রকল্পের মধ্যে অর্থের অপচয় হয়।’ তিনি বলেন, ‘আমরা অর্থনৈতিক সংকটে নেই, চাপ আছে। সংকটে থাকলে তো কর্মচারীদের বেতন, ভাতা ও বোনাস দিতে পারতাম না। বর্তমানে কিছু সমস্যা চলছে, সেটা দ্রুতই সমাধান হবে।’
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেন, ‘শিশু মৃত্যুহার বৃদ্ধির বিষয়টি কাম্য নয়। বর্তমানে আধুনিক পদ্ধতিতে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। যে কারণে আরো সঠিকভাবে তথ্য উঠে আসছে। তাই অতীতের হারের চেয়ে বেশি আসতে পারে। তবে যা-ই হোক না কেন, শিশু মৃত্যুহার বৃদ্ধি কাম্য নয়। কারণ আমরা এ হার শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছি। সেই লক্ষ্য অর্জন করতে হলে মৃত্যুর হার কমিয়ে আনতে হবে।’
তিনি আরো বলেন, দেশের মেধা যে হারে পাচার হচ্ছে, অর্থ পাচারের চেয়েও এটি আমাদের জন্য বেশি ভয়ংকর হবে। দেশ থেকে মেধা যদি সব চলে যায়, তাহলে জ্ঞানভিত্তিক সমাজ ও স্মার্ট বাংলাদেশ আমরা কীভাবে করব। তবে সবকিছু আলোচনায় এলেও মেধা পাচার আলোচনায় কম আসে। কিন্তু মেধার পাচার ঠেকাতে আমাদের এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে।’ তিনি বলেন, জরিপ অনুযায়ী দেশে বাল্যবিবাহের হার বেড়েছে। এটা উদ্বেগজনক। জরিপ অনুযায়ী, এখন দেশে বাল্যবিবাহ প্রায় ৪১ শতাংশ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিবিএস মহাপরিচালক (চলতি দায়িত্ব) পরিমল চন্দ্র বসু। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রকল্প পরিচালক মো. আলমগীর হোসেন।
বেড়েছে জন্মহার : জরিপ অনুযায়ী দেশে জন্মহার বাড়ছে। ২০২২ সালে দেশে স্থূল জন্মহার বেড়ে ১৯ দশমিক ৩ জন হয়েছে। অর্থাত্ প্রতি হাজার জনসংখ্যার বিপরীতে গত এক বছরে ১৯ দশমিক ৩টি শিশু জন্ম নিয়েছে। এই স্থূল জন্মহার ২০২১ সালের তুলনায় কিছুটা বেশি। ঐ বছর দেশে স্থূল জন্মহার ছিল ১৮ দশমিক ৮ জন। জনসংখ্যা বৃদ্ধির প্রবণতা নিয়ে প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেন, ‘গত বছর কেন জন্মহার বেড়েছে, এই বিষয়ে আর হালনাগাদ কোনো তথ্য নেই। কোনো গবেষণাও নেই। তবে আমার অনুমান, কোভিড মহামারির সময় দেশের সাধারণ মানুষ বেশির ভাগ সময় ঘরে কাটিয়েছে। একই সময়ে বিদেশ থেকে বেশি হারে প্রবাসীরা দেশে এসেছে। এই দুই কারণে জন্মহার বাড়তে পারে। এই দুইটি জন্মহার বৃদ্ধির যৌক্তিক কারণ হতে পারে বলে আমার মনে হয়েছে।’ তবে এটা নিয়ে গবেষণা করা প্রয়োজন বলে মনে করেন প্রতিমন্ত্রী।
বিবিএসের উপপরিচালক আলমগীর হোসেন বলেন, গত বছর সারা দেশে ২ হাজার ১২টি ইউনিট, ৩ লাখ ৬ হাজার ৯৫৪টি খানা এবং ১৩ লাখ ২ হাজার ৭৮৮ জনের ওপর জরিপ চালিয়ে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।
২০২২ সালে পরিচালিত জনশুমারি ও গৃহগণনার ভিত্তিতে দেশের প্রাক্কলিত জনসংখ্যা ১৭ কোটি ৮ লাখ। এর মধ্যে নারী ৮ কোটি ৬১ লাখ এবং পুরুষ ৮ কোটি ৪৫ লাখ। প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে জন্ম নিয়ন্ত্রণ সামগ্রী ব্যবহারও কিছুটা কমে ৬৩ দশমিক ৮ শতাংশে নেমেছে। আগের বছর এ হার ছিল ৬৫ দশমিক ৬ শতাংশ। এর মধ্যে আধুনিক পদ্ধতির জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে ৬২ দশমিক ৮ শতাংশ এবং সনাতন পদ্ধতি ব্যবহার হয়েছে ১ শতাংশ।
তালাকের হার দ্বিগুণ : এক বছরের ব্যবধানে তালাকের হার দ্বিগুণ হয়ে গেছে। ২০২১ সালে জাতীয়ভাবে তালাকের হার ছিল প্রতি হাজারে শূন্য দশমিক ৭ জন, যা ২০২২ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ দশমিক ৪ জনে। অর্থাত্ বছরের ব্যবধানে তালাকের হার বৃদ্ধি পেয়েছে শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ। ২০২১ সালে গ্রামে তালাকের হার ছিল শূন্য দশমিক ৮ জন। ২০২২ সালে বেড়ে দাাঁড়য়েছে ১ দশমিক ৪ জন। এ সময়ে শহরে তালাকের হার দাঁড়িয়েছে ১ দশমিক ১ জনে, যা ২০২১ সালে ছিল শূন্য দশমিক ৫ জন। এছাড়া ২০২১ সালে গ্রামে বিবাহের হার ছিল ১৪ দশমিক ৭ জন, যা ২০২২ সালে হয়েছে ১৯ দশমিক ৫ জন। শহরে ২০২২ সালে বিবাহের হার ১৩ দশমিক ৮ জন, যা ২০২১ সালে ছিল ৯ দশমিক ৬ জন। অর্থাত্ বিবাহের হার বেড়েছে।
টয়লেট শেয়ারিং বৃদ্ধি পাওয়ায় নিরাপদ ল্যাট্রিন ব্যবহারের হার কিছুটা কমলেও ২০২২ সালে উন্নত ল্যাট্রিন ব্যবহারের হার বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৮৮ দশমিক ৮ শতাংশ, যা ২০২১ সালে ছিল ৮৫ দশমিক ৮ শতাংশ। ২০২২ সালে পাঁচ বছর ও তদূর্ধ্ব বয়সি মোবাইল ফোন ব্যবহারকারী জনসংখ্যা ৫৯ দশমিক ৬ শতাংশ এবং ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ৪১ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।