// ঈশ্বরদী (পাবনা) সংবাদদাতাঃ
বিশ্ব পরিবেশ দিবসের সুবর্নজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষ্যে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় পরমাণু শক্তি কর্পোরেশন রসাটম রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মান অঞ্চলে (পাবনা জেলা) তিনদিনব্যাপী (৫ থেকে ৭ জুন) জনসচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন পরিচালনা করে। ক্যাম্পেইনে সহায়তা প্রদান করে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন। এবছর বিশ্ব পরিবেশ দিবসের প্রতিপাদ্য ছিল ‘BeatPlasticPollution’.
জনসচেতনতামূলক বিভিন্ন কার্যক্রমের পাশাপাশি ক্যাম্পেইনে অন্তর্ভূক্ত ছিল শিক্ষামূলক সেশন, স্থানীয় শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম, ব্যবহৃত প্লাস্টিক বোতল ও ব্যাগের সাহায্যে নির্মিত বিভিন্ন প্রতীকি দানবের ভাষ্কর্য ইত্যাদি। সকল কার্যক্রমের মূলে ছিল প্লাস্টিকের দায়িত্বশীল ব্যবহারের বিষয়টি।
ছয় শতাধিক স্কুল শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণে ৫ জুন সকালে ঈশ্বরদীর দাশুরড়য়া এম. এম. উচ্চবিদ্যালয় প্রাঙ্গনে ক্যাম্পেইনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়।
অনুষ্ঠানে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের জেনারেল ডিজাইনার ও কন্ট্রাকটর এতমস্ত্রয়এক্সপোর্ট (রসাটমের প্রকৌশল শাখা) এর কম্যুনিকেশন্স বিভাগের প্রধান নিনা দেমেন্তসোভা বলেন, “প্লাস্টিক আজ আমাদের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। কিন্তু, পরিবেশকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করার মাধ্যমে এটি আমাদের জীবনের জন্য যে কতটা হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে, তা নিয়ে আমরা তেমন একটা ভাবছি না। বিপুল পরিমানে জমাকৃত প্লাস্টিকের হাত থেকে রক্ষার জন্য প্রকৃতি আজ আমাদের সাহায্যপ্রার্থী।”
পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক খন্দকার আরিফুজ্জামান বলেন, “প্লাস্টিক একটি ভয়াবহ বর্জ্য যা পরিবেশ ও জলবায়ুর জন্য হুমকি। আমরা একটু সচেতন হলেই এর বিরুপ প্রভাব থেকে রক্ষা পেতে পারি। শুধুমাত্র নির্দিষ্ট স্থানে আবর্জনা ফেলাই নিজেদেরকে রক্ষা করার একটি সঠিক পন্থা হতে পারে”।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের ডেপুটি ম্যানেজার মনিরুজ্জামান নিজস্ব মত প্রকাশ করতে গিয়ে বলেন, “দূষণমুক্ত পরিবেশের জন্য বর্জ্য ব্যবস্থাপনা একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। রসাটম আজকে যে সচেতনতামূলক কার্যক্রমের সূচনা করলো, তা ভবিষ্যতেও চলমান থাকা বাঞ্ছনীয়। রূপপুর প্রকল্প শুধুমাত্র আমাদের বিদ্যুৎ চাহিদাই মেটাবে না, সমাজে এটির একটি ব্যাপক ইতিবাচক প্রভাবও পড়বে”।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী স্কুল এবং পার্শ্ববর্তী এলাকায় পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম পরিচালনা করে। ‘নলেজ অব ট্রি’ নামক একটি ক্যানভাসে রঙিন হাতের ছাপ দেয়ার মাধ্যমে তারা দূষণমূক্ত পরিবেশের প্রতি তাদের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে।
ফেলে দেয়া প্লাস্টিকের ভয়াবহতা সম্পর্কে জনগনকে সচেতন করার উদ্দেশ্যে ঈশ্বরদী পৌরসভা চত্বরে কয়েকটি প্রতীকি দানব ভাষ্কর্য প্রদর্শনের জন্য স্থাপন করা হয়। স্থানীয় জনগন স্বেচ্ছায় এই ভাষ্কর্য তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবহৃত প্লাস্টিক সামগ্রী প্রদান করেন।
ভাষ্কর্য শিল্পী রূপম রায় জানান, “বিগত কয়েক দশকে মানুষ প্লাস্টিকের মতো একটি সত্যিকার দানবের মুখোমুখি দাঁড়িয়েছে যা পরিবেশকে বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করে চলেছে। ব্যবহৃত প্লাস্টিকের তৈরি আমাদের এই ভাষ্কর্যটির মাধ্যমে আমরা নতুন এই হুমকিটির প্রতি সবার দৃষ্টি আকর্ষণের প্রচেষ্টা করেছি। আমরা অতি আনন্দিত যে স্থানীয় জনগন আমাদের এই উদ্যোগের প্রশংসা করেছেন এবং প্লাস্টিক বর্জ্য পরিহার ক্যাম্পেইনে আমাদের সঙ্গে স্বক্রিয়ভাবে যুক্ত হবার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন”।
পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গনে বিশেষ পরিচ্ছন্নতা কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়। শিক্ষার্থীরা পরবর্তীতে রূপপুর মোড়ে স্থানীয় জনগনের জন্য কয়েকটি উন্মুক্ত শিক্ষামূলক সেশন পরিচালনা করেন এবং স্বেচ্ছাসেবকদের অংশগ্রহণে পার্শ্ববর্তী এলাকায় পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম পরিচালিত হয়।
ক্যাম্পেইনের শেষ দিনে স্থানীয় শিক্ষার্থীদের জন্য ঈশ্বরদী ইপিজেডে অবস্থিত একটি প্লাস্টিক রিসাইকেল কারখানা (আদনান পিএসএফ ইন্ডাস্ট্রিজ) পরিদর্শন করে। এসময় তাদেরকে পরিবেশের জন্য প্লাস্টিক রিসাইকেল করার গুরুত্ব এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে পরমাণু শক্তির ভূমিকা সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে বর্ননা করা হয়।
বর্জ্যের রিসাইকিং, ল্যান্ডফিল পরিহার, বন ও জলাধার সংরক্ষণ, বায়ু দূষণ রোধ ইত্যাদি বিষয়ে রসাটম নিয়মিতভাবে প্রচারণার পাশাপাশি স্বক্রিয়ভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এছাড়াও সংস্থাটি রাশিয়া এবং যেসকল দেশের রাশিয়ার ব্যবসা কার্যক্রম রয়েছে, সেখানে পরিবেশ শিক্ষা নিয়েও নিয়মিতভাবে কাজ করে। পরিবেশ সুরক্ষায় নতুন নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও ব্যবহারের প্রতি রাশিয়ায় বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়ে থাকে। এসকল প্রযুক্তি রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের মতো রাশিয়ার বাইরে দেশটির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রকল্পগুলোতেও সরবরাহ করা হয়।