অধ্যক্ষের বন্ধ কার্যালয়ের তালা কাটা হলো তিন বছর পর

// চাটমোহর (পাবনা) প্রতিনিধি
টাকার মেশিন খ্যাত পাবনার চাটমোহর সরকারি কলেজের বরখাস্তকৃত অধ্যক্ষ মোঃ মিজানুর রহমানের বন্ধ কার্যালয় দীর্ঘ প্রায় তিন বছর চার মাস পর খোলা হয়েছে। সোমবার (৮ মে) দুপুর দুই টার দিকে কলেজটির শিক্ষক কর্মচারী, ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোঃ আঃ মজিদ, চাটমোহর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছাঃ মমতাজ মহল, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ মগরেব আলী, একাডেমিক সুপারভাইজার মোঃ গোলাম মোস্তফা, থানার এসআই মশিউর রহমান ও স্থানীয় সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে মিস্ত্রি ডেকে এনে অধ্যক্ষের কার্যালয়ের তালা কেটে দড়জা খোলা হয়। এসময় অধ্যক্ষের কক্ষে রক্ষিত কম্পিউটার,টেলিভিশন,এসিসহ অন্যান্য জিনিসপত্র ও কাগজপত্রাদির সিজার লিস্টও করা হয়।
কলেজটি সরকারি করণ হওয়ার আগে ২০১১ সালের ১৬ জুলাই যথাযথ অভিজ্ঞতা না থাকা সত্ত্বেও অবৈধ ভাবে অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ পান মিজানুর রহমান। অধ্যক্ষের দায়িত্ব গ্রহণ করার পর থেকে তিনি শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ, দূর্নীতি ও নানা অনিয়মে জড়িয়ে পড়েন। টেম্পারিং করে জনবল কাঠামোর অতিরিক্ত ২১ জন শিক্ষককে নিয়োগ দিয়ে প্রায় কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ ও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। কয়েক বছরে শূণ্য থেকে কোটিপতি হয়ে যান তিনি। এসব নিয়ে শিক্ষকদের সাথে তার বিরোধ সৃষ্টি হয়। এ বিরোধের জেরে শিক্ষকরা ক্লাস বর্জন করেন। অধ্যক্ষ মিজানুর রহমানের অপসারণ দাবীতে উত্তাল হয় চাটমোহর। ২০১৮ সালের ৮ আগস্ট থেকে কলেজটি সরকারি করণের ঘোষণা হয়। এর পর ২৭ আগস্ট গভর্নিং বডি বিলুপ্ত হলে সেই থেকে কলেজ পরিচালনার দায়িত্ব পালন করে আসছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। মামলা, পাল্টা মামলা, তদন্ত কার্যক্রম শুরু হয়। তদন্তকারী কর্মকর্তাদের সহায়তা না করে নানা ভাবে হয়রানী করতে থাকেন এই অধ্যক্ষ। অনিয়ম ও দূর্নিতির মামলায় ২০২০ সালের ২৬ জানুয়ারী জেল হাজতে যেতে হয় এই অধ্যক্ষকে। তিন বছরেরও বেশি সময় আগে অধ্যক্ষ তার কার্যালয়ে তালা লাগিয়ে কলেজ থেকে চলে যান। তার পর থেকে তালাবদ্ধ ছিল অধ্যক্ষেও এ কক্ষটি। কক্ষটি তালাবদ্ধ থাকায় সকল শিক্ষকের জাতীয়করণ ও আত্মীকরণসহ কলেজের কার্যক্রম চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে।

এমতাবস্থায় ৮ মে সকালে কলেজের শিক্ষকরগণ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছাঃ মমতাজ মহলের সাথে উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে এক সভা করেন। যেহেতু কক্ষটি বন্ধ থাকায় শিক্ষক তর্মচারীদের জাতীয়করণ ও আত্মীকরণ ব্যাহত হচ্ছে সেহেতু সকল শিক্ষক কর্মচারী তালা ভেঙে ফেলে কক্ষটি খোলার পক্ষে মতামত দেন। তারা প্রত্যেকে একটি সম্মতিপত্রে স্বাক্ষর করেন যেখানে উল্লেখ করা হয় তালা খোলার কারণে কোন জটিলতা বা আইনি সমস্যা হলে তারা তা মোকাবেলা করবেন। এর পরই উপজেলা নির্বাহী কর্মকতাসহ অন্যান্য কর্মকর্তা ও শিক্ষক কর্মচারী কলেজে গিয়ে তালা কেটে দড়জা খোলেন। দীর্ঘ দিন পর তালা খোলা হলে উচ্ছসিত হন শিক্ষক-কর্মচারীরা।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছাঃ মমতাজ মহল জানান, মামলাসহ বিভিন্ন সমস্যার কারণে কলেজটির অধ্যক্ষ প্রায় ৩ বছর পূর্বে তার কার্যালয়ে তালা লাগিয়ে চলে যান। সেখানে শিক্ষকদের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ছিল। কলেজটি সরকারিকরণ করা হলেও শিক্ষকদের জাতীয়করণ ও আত্মীকরণে সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে এবং সকল শিক্ষক-কর্মচারীদের সিদ্ধান্তে অধ্যক্ষের বন্ধ থাকা কক্ষের তালা কেটে কক্ষটি খোলা হলো।