রাশিয়ায় রূপপুর পারমাণবিকের জ্বালানির রেডিনেস সার্টিফিকেট স্বাক্ষর

// ঈশ্বরদী (পাবনা) সংবাদদাতাঃ
নির্মাণাধীন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রথম ইউনিটের পরমাণু জ্বালানির (ইউরেনিয়াম) রেডিনেস সার্টিফিকেট রাশিয়ায় আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাক্ষরিত হয়েছে। শুক্রবার ৫ মে দুপুর ২টার দিকে রাশান ফেডারেশনের সাইবেরিয়ান অঞ্চলের রাজধানী নভোসিভিরসক শহরে রাষ্ট্রীয় সংস্থা রসাটম স্টেট কর্পোরেশন, রসাটমের সাবসিডিয়ারি টুয়েলভ (TVEL) কোম্পানির দপ্তরে এ প্রটোকল স্বাক্ষরিত হয়। রাশিয়া থেকে আরএনপিপি’র প্রকল্প পরিচালক ড. শৌকত আকবর  পরমাণু  জ্বালানির (ইউরেনিয়াম) রেডিনেস সার্টিফিকেট স্বাক্ষরের খবর জানিয়েছেন।

  ঐতিহাসিক এই প্রটোকলে বাংলাদেশের পক্ষে স্বাক্ষর করেন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক পরমাণু বিজ্ঞানী ড. শৌকত আকবর ও রাশান ফেডারেশনের পক্ষে এটমস্ট্রয় এক্সপোরটের ভাইস প্রেসিডেন্ট এ ভি দেইরি।

রাশিয়া থেকে প্রকল্প পরিচালক বলেন, এ প্রটোকল স্বাক্ষরের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ উপায়ে পারমাণবিক বিদ্যুত উৎপাদনের অগ্রযাত্রায় আরো এক নতুন মাইল ফলক স্পর্শ করল। ২০১৫ সালে স্বাক্ষরিত জেনারেল কন্ট্রাক্ট অনুযায়ী রাশান ফেডারেশন নির্ধারিত চুক্তির  অবিভক্ত অংশ হিসেবেই আমাদের  ৩৬ মাস জ্বালানি নিরাপত্তা দেবে। অর্থাৎ বানিজ্যিক বিদ্যুত উৎপাদনের প্রথম দিন হতে পরবর্তী তিন বছর জ্বালানির জন্য আলাদা করে অর্থ পরিশোধ করতে হবে না। উভয়ের মধ্যে এই প্রটোকল ও রেডিনেস সনদ স্বাক্ষরের ফলে আন্তর্জাতিক বিধিবিধান ও আইএইএ গাইড লাইন এবং রেগুলেটরি রিকোয়ারমেন্ট অনুযায়ী ফুয়েল উৎপাদনে আর কোন প্রতিবন্ধকতা রইল না।

 ঐতিহাসিক প্রটোকল স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রাশিয়ান ফেডারেশনে বাংলাদেশের  রাষ্ট্রদূত জনাব কামরুল আহসান, প্রকল্পের উপ-পরিচালক, ড. জাহেদুল হাছান, প্রকল্পের অর্থ ও প্রশাসন বিভাগের প্রধান  অলক চক্রবর্তী, নিউক্লিয়ার কাউন্সিলর শুভাশিস সর্দার।

রাশিয়াতে জ্বালানি উৎপাদন সংক্রান্ত যাবতীয় প্রস্তুতি পরিদর্শন ও পরমাণু জ্বালানীর (ইউরেনিয়াম) রেডিনেস সার্টিফিকেট স্বাক্ষরের জন্য গত ১লা মে থেকে প্রকল্প পরিচালক ড. শৌকত আকবরের নেতৃত্বে ৩ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল রাশিয়ায় গিয়েছেন।

 প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জ্বালানী (ইউরেনিয়াম) আমদানি ও সংরক্ষণ সম্পন্ন হলে বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে আন্তর্জাতিক নিউক্লিয়ার ক্লাবে যুক্ত হবে। এ মর্যাদা পাওয়ার পাশাপাশি বাংলাদেশ বিশ্বের দরবারে পারমাণবিক শক্তিধর দেশ হিসেবেও পরিচিতি লাভ করবে। সেই সঙ্গে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটিতে উৎপাদন শুরু করতে আর কোনো বড় ধরনের চ্যালেঞ্জও থাকবে না।

প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, স্পর্শকাতর এ জ্বালানি আমদানি, পরিবহন ও সংরক্ষণের জন্য আইএইএর অনুমোদন ও লাইসেন্সের পাশাপাশি রাশান ফেডারেশনের রপ্তানি নীতির আলোকে তাদের অনুমতি নেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। পারমাণবিক জ্বালানি রাশিয়া থেকে দেশে আনা ও প্রকল্পে নেওয়ার সময় কঠোর নিরাপত্তার বিষয় রয়েছে। পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জ্বালানি নিরাপত্তা বিষয়ে আন্তর্জাতিক পারমাণু শক্তি সংস্থার (আইএইএ) বিস্তারিত গাইড লাইনও রয়েছে। গাইড লাইন অনুসরণ করে জ্বালানি বিমান বন্দরে এসে পৌঁছানোর পর সেখান থেকে কঠোর নিরাপত্তায় ঈশ্বরদীর রূপপুর প্রকল্পে নেওয়া হবে। নিরাপত্তার দায়িত্বের সাথে সংশ্লিষ্ট সেনাবাহিনী, পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর যে যে বিভাগের সদস্যরা থাকবেন তাদের প্রশিক্ষণের বিষয়ও রয়েছে। সে সব বিষয়েও প্রস্তুতিও শুরু হয়েছে বলে জানা গেছে।

জানা গেছে, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জ্বালানি সরবরাহ করবে রাশিয়ার একটি রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান টিভিইএল। প্রতিষ্ঠানটি রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের লাইফ টাইম জ্বালানি সরবরাহ করবে। প্রকল্পের জন্য বিশেষায়িত জ্বালানি (ইউরেনিয়াম) রড রাশিয়াতে উৎপাদিত হবে।

প্রসঙ্গত: রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় পারমাণবিক শক্তি সংস্থা (রসাটম) রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি বাস্তবায়ন করছে। প্রায় ১ লাখ ১৪ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত প্রকল্পের ৯০ ভাগ ঋণ সহায়তা হিসেবে দিচ্ছে রাশিয়া। দুটি ইউনিট বিশিষ্ট রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির প্রথম ইউনিট ২০২৪ সালে এবং দ্বিতীয় ইউনিট ২০২৫ সালে উৎপাদনে যাওযার কথা রয়েছে। সে অনুযায়ী প্রকল্পের কজে চলছে মহাকর্মযজ্ঞ। #