// সঞ্জু রায়, বগুড়াঃ মাত্র ৪০০ টাকা নিয়ে দ্ব›েদ্বর জেরে বগুড়ার কলেজ ছাত্র শাহরিয়ার ইসলাম রিয়াজ (১৭)কে উপর্যুপুরি ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত দুটি চাকু উদ্ধারসহ ২৪ ঘন্টার মধ্যে ঘটনার সাথে জড়িত ৩ জনকে গ্রেফতারের পর এই তথ্য জানিয়েছে পুলিশ।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন, শাজাহানপুর উপজেলার পরানবাড়ীয়া পূর্বপাড়া গ্রামের শহিদুল ইসলামের ছেলে কাউছার (২২), ঝালোপাড়া গ্রামের আব্দুল খালেকের ছেলে মাহমুদুল (২০) ও রামপুর গ্রামের রবিউল ইসলামের ছেলে সাহান (২০)।
মঙ্গলবার দুপুরে জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিং এ কলেজ ছাত্র রিয়াজ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন করে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) ও জেলা পুলিশের মিডিয়া মুখপাত্র শরাফত ইসলাম।
এর আগে গত ৫ ফেব্রুয়ারি রোববার সন্ধ্যায় বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার একটি ভুট্টা ক্ষেত থেকে রিয়াজের ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে রিয়াজের মা আরজি খাতুন বাদী হয়ে শাজাহানপুর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
মঙ্গলবার আয়োজিত প্রেস ব্রিফিং এ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) শরাফত ইসলাম বলেন, লাশ উদ্ধারের পর থেকেই পুলিশের একাধিক টিম তদন্তে নামে। বিভিন্ন তথ্যের ভিত্তিতে তারা দ্রæততম সময়ে ঘটনার সাথে জড়িত তিনজনকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হন। তবে আরো একজন হত্যাকান্ডে জড়িত রয়েছে যিনি এখনো পলাতক আছে বলে জানান এই কর্মকর্তা। তদন্তের স্বার্থে তার নাম পরিচয় প্রকাশ না করলেও আসামীরা প্রত্যেকেই একে অপরের ঘনিষ্ঠ বন্ধু বলে জানান তিনি।
শরাফত ইসলাম আরো জানান, গ্রেফতার আসামীদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য থেকে তারা জানতে পেরেছেন নিহত রিয়াজ গ্রেফতার কাউছারকে একটি কাজ করে দেয়ার জন্য ৪০০ টাকা দিয়েছিল। কাউছার ওই টাকা মাহমুদুলের কাছে রাখলে সে টাকা খরচ করে ফেলে। এদিকে কাউছার কাজটি না করলে রিয়াজ তার কাছ থেকে টাকা ফেরত চান। এ সময় কাউছার টাকা দিতে তালবাহানা শুরু করে। এতে রিয়াজ এলাকার এক কথিত বড় ভাইকে দিয়ে কাউছার এবং সাহানকে টাকা ফেরত দেয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করে। এরপরেও টাকা না দিলে হত্যার দু’দিন আগে গ্রেফতার কাউছারের সাথে নিহত রিয়াজ টাকার জন্য মারমুখী আচরণ করে। এ কারণে কাউছার তার বন্ধুদের সাথে পরামর্শ করে রিয়াজকে হত্যার পরিকল্পনা করে।
তিনি আরো বলেন, গ্রেফতাররা প্রাথমিকভাবে স্বীকার করেছে তারা রিয়াজকে ধারালো চাকু দিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের পর গলা এবং পায়ের রগ কেটে হত্যা করে। পরে উপজেলার আমরুল ইউনিয়নের রামপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন ভুট্টাক্ষেতে লাশটি ফেলে পালিয়ে যায়। আসামী কাউছার এবং মাহমুদুল এর কাছ থেকে দুইটি ধারালো চাকু উদ্ধার করা হয়েছে। আসামীদের অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডের আবেদন করা হবে বলে জানান এই কর্মকর্তা। প্রেস ব্রিফিং এসময় উপস্থিত ছিলেন শাজাহানপুর থানার অফিসার ইনচার্জ আব্দুল কাদের জিলানী, ইন্সপেক্টর লুৎফর রহমান, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আরিফুল ইসলামসহ পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাবৃন্দ।
এদিকে বগুড়ায় হঠাৎ বেড়ে যাওয়া এই ধরনের অপরাধমূলক কর্মকান্ড প্রতিরোধে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শরাফত ইসলাম বলেন, তুচ্ছ বিষয়ে রিয়াজের মতো একটা তাজা প্রাণ ঝড়ে যাওয়া সত্যি দুঃখজনক। এই অপরাধগুলো প্রতিরোধে সমাজের সকলকে নিজ অবস্থান থেকে সচেতন হতে হবে যার শুরু হতে হবে প্রতিটি পরিবারে। তিনি বলেন, অপরাধীদের তালিকাভুক্ত করে তারা গ্রেফতারের চেষ্টা করছে তবে অপরাধ যে করুক না কেন আইনের হাত থেকে কেউ শেষ রক্ষা পাবেনা মর্মে কঠোর হুশিয়ারি দেন এই কর্মকর্তা।