নাটোর প্রতিনিধি
নাটোরের লালপুরে সাড়ে তিন বছরের শিশু ইরিন সুলতানা ঈশা হত্যা রহস্য উৎঘাটন করেছে পুলিশ। পিতার অনৈতিক কার্যকলাপের সময় বিরক্ত করায় থাপ্পড়ে মারা যায় ঈশা। এ ঘটনায় তিনজনের নামে চার্জশীট দিয়েছে পুলিশ।গত বছর ১৫ মার্চ উপজেলার দুড়দুড়িয়া ইউনিয়নের সাধুপাড়া গ্রামের একটি ডোবা থেকে ওই শিশুর বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার করা হয়। সে ওই গ্রামের আনসার সদস্য মো. ইলিয়াস হোসেনের একমাত্র সন্তান। ওই দিন রাতে নিহতের বাবা বাদি হয়ে অজ্ঞাতদের বিরুদ্ধে লালপুর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।
শনিবার (৪ ফেব্র“য়ারি ২০২৩) লালপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহা. মোনোয়ারুজ্জামান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। আসামিদের দুইজন পলাতক ও একজন জামিনে রয়েছেন।ঘটনার সাথে জড়িত আসামিরা হলেন, আড়বাব ইউনিয়নের সাধুপাড়া গ্রামের নিহত ঈশার বাবা মো. ইনছার আলীর ছেলে মো. ইলিয়াস আলী (৩১), প্রতিবেশি মো. নূর উদ্দিনের স্ত্রী মোছা. শোভা খাতুন (৩৫) এবং মো. ইসলাম আলী মোল্লার স্ত্রী মোছা. শেফালী বেগম (৪৮)।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক হীরেন্দ্রনাথ প্রামানিক ও এসআই মোল্লা সোহেল মাহমুদ বলেন, মামলার বাদি (তদন্তে প্রাপ্ত অভিযুক্ত আসামী) নিহতের বাবা আনসার বাহিনীতে কর্মরত মো. ইলিয়াস আলী (৩১) ও অপর আসামী প্রতিবেশি মো. নূর উদ্দিনের স্ত্রী মোছা. শোভা খাতুন (৩৫) স¤পর্কে পর¯পর চাচী ও ভাতিজা। অর্থাৎ মোছা. শোভা খাতুনেরর আপন চাচাতো ভাসুরের ছেলে। শোভা খাতুনের স্বামী কিডনী রোগে আক্রান্ত হওয়ায় গত ২০২১ সালের জুন মাসে কিডনী অপারেশন করে দুর্বল হয়ে যান। শোভা খাতুন শারীরিক চাহিদা মেটানোর জন্য এক পর্যায়ে ইলিয়াস আলীর সাথে স¤পর্কে জড়িয়ে পড়েন।ঘটনার দিন ১৫ মার্চ ২০২২ ইলিয়াস আলী এক সাথে নাস্তা করে মেয়ে ইরিন সুলতানা ঈশাকে কোলে নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে শোভা খাতুনের বাড়িতে যান। মেয়েকে বাড়ির বারান্দায় সিড়ির উপর দাঁড় করিয়ে তারা শারীরিক স¤পর্ক স্থাপন করার চেষ্টাকালে মেয়ে ঈশা বাবাকে ধরে টানাটানি শুরু করে। এ সময ইলিয়াস আলী উত্তেজিত হয়ে ঈশাকে থাপ্পর মারেন। ঈশা মাটিতে পড়ে কান্নার চেষ্টা করলে ইলিয়াস আলী শোভা খাতুনের শরীরের উপর বসে থাকা অবস্থায় মেয়ের গলা চেপে ধরে শ্বাসরোধে হত্যা করে। এরপর ইলিয়াস আলী মেয়ে ঈশার মৃতদেহ কোলে নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে পার্শ্ববর্তী মো. ইসলাম আলী মোল্লার স্ত্রী মোছা. শেফালী বেগমের (৪৮) বাড়ির সামনে বেলকোনির সিঁড়ির উপর ফেলে রাখেন। ওই সময় শেফালী বেগম বের হয়ে দেখেন বাড়ির মুরগি ঈশার মাথায় ঠোকর দিলেও কোন সাড়া দিচ্ছে না। তখন তিনি এগিয়ে গিয়ে ঈশাকে মৃত অবস্থায় দেখে মৃতদেহ বাড়ির বাইরে টয়লেটের মধ্যে রেখে দেন। কিছুক্ষণ পর ঈশার মা তার মেয়েখে ডাকাডাকি ও খোজাখুজি করিতে থাকলে শেফালী বেগম ভয় পেয়ে মৃতদেহ বস্তায় ভরে বসতবাড়ির পশ্চিম পার্শ্বে সামান্য পানি থাকা ডোবার মধ্যে ফেলে দেন।এরপর ঈশার মা মোছা. আখি খাতুন (২৫) খোজাখুজি করে মেয়েকে না পেয়ে স্বামী ইলিয়াস আলীকে মোবাইলে জানান। ইলিয়াস আলী বাড়িতে এসে ঘটনার বিষয়টি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে স্থানীয় মসজিদের মাইকে প্রচারনা করে চালান ও সাধারন ডায়রী করার জন্য থানায় আসেন। এ দিকে প্রতিবেশী কয়েকজন বিষ দেওয়ার জন্য আমবাগানে যাওয়ার সময় ডোবায় বস্তায় মৃত দেহ দেখতে পেয়ে থানায় খবর দেন। পুলিশ মৃতদেহ উদ্ধার করে সুরতহাল করে মৃত্যুর সঠিক কারণ নির্নয়ে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠায়।
লালপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহা. মোনোয়ারুজ্জামান বলেন, মামলার বাদি (তদন্ত প্রাপ্ত আসামী) নিহতের বাবা মো. ইলিয়াস আলী (৩১) ও অপর আসামি মোছা. শোভা খাতুন (৩৫) পর¯পর যোগসাজসে ঈশাকে হত্যা করায় তাদের বিরুদ্ধে ১৮৬০ সালের পেনাল কোড ৩০২/৩৪ ধারার অপরাধ এবং তদন্তে প্রাপ্ত আসামী মোছা. শেফালী বেগম (৪৮) মৃতদহ গুম করার লক্ষে বস্তাবন্দি করে ঘটনাস্থলে ফেলে দেওয়ায় তার বিরুদ্ধে ১৮৬০ সালের পেনাল কোড ২০১ ধারার অপরাধ প্রাথমিকভাবে সত্য বলিয়া প্রমাণিত হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, ঘটনার দিন আটক মোছা. শোভা খাতুন জামিনে মুক্ত রয়েছেন। অপর দুই আসামি ঈশার বাবা মো. ইলিয়াস আলী ও মোছা. শেফালী বেগম পলাতক রয়েছেন। তাদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে।