প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা প্রথম যখন ক্ষমতায় আসি তখন প্রথম সৈয়দপুরে ইপিজেড গড়ে তুলি। বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ। আমাদের কৃষিজমি রক্ষা করতে হবে, পাশাপাশি শিল্পায়ন ঘটাতে হবে।
তিনি বলেন, দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর আমরা শিল্পাঞ্চল গড়ার সিদ্ধান্ত নেই, যাতে কৃষিজমি নষ্ট না হয়। অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলতে সারা বাংলাদেশে যে সকল জমিতে ফসল কম হয় এমন একশ জায়গা ৬৪ জেলায় বেছে নেওয়া হয়েছে। এতে মানুষের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে।
মঙ্গলবার (৬ ডিসেম্বর) নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে বাংলাদেশ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের (জাপানি অর্থনৈতিক অঞ্চল) আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনীতে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এ কথা বলেন তিনি।
এ সময় আড়াইহাজার প্রান্ত থেকে বক্তব্য রাখেন জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি, জাপানের সুমিতমো করপোরেশনের প্রেসিডেন্ট ও সিইও মাসাইউকি হিওদো, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ ইউসুফ হারুন, সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম বাবু ও জেলা প্রশাসক মঞ্জুরুল হাফিজসহ আরও অনেকে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, অর্থনৈতিক অঞ্চলে আমাদের নারী উদ্যোক্তাদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা রয়েছে। এখানে চার থেকে পাঁচ বিলিয়ন ডলার আমরা উপার্জন করছি। অনেক মানুষ এখানে কাজ করছে। সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা রেখেই আমরা এ অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো গড়ে তুলছি।
তিনি বলেন, ২০১৪ সালে আমি যখন জাপানে যাই তখনই জাপানের প্রয়াত প্রধানমন্ত্রীর সাথে এ চুক্তি স্বাক্ষর হয়। এছাড়া জাপান আমাদের আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে দিচ্ছে। আমাদের পঞ্চাশ বছরের বন্ধুত্বের এটি একটি নিদর্শন। আমাদের বন্ধুত্ব অটুট। জাতির পিতা যখন জাপান গিয়েছিলেন তখনই তিনি পদ্মা সেতুসহ নানান বিষয়ে আলোচনা করেন। পদ্মা সেতু আমরা নিজস্ব অর্থায়নে করেছি, কিন্তু এখানে জাপানের অনেক অবদান রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আমরা বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধা দিচ্ছি। আমাদের গভীর সমুদ্রবন্দর হচ্ছে। নৌপথ ও সড়কপথেও উন্নয়ন হয়েছে। ফলে বাংলাদেশে বর্তমানে বিনিয়োগের চমৎকার পরিবেশ বিরাজ করছে। তরুণরা যেন বিনিয়োগ করতে পারে সেজন্য আমরা নানা কর্মসূচি ও স্বল্প সুদে ঋণের ব্যবস্থ করছি। পৃথিবীতে বাংলাদেশ বিনিয়োগের সবচেয়ে আকর্ষণীয় জায়গা। বিনিয়োগবান্ধব আইন ও নীতিমালা করেছি বিনিয়োগকারীদের জন্য ওয়ান স্টপ সার্ভিসও চালু করা হয়েছে।
বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ জায়গা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা তারপরেও জনগণের ক্রয় ক্ষমতা বাড়াতে পেরেছি। বাংলাদেশে বিনিয়োগ করলে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এমনকি পশ্চিমা দেশগুলোতেও পণ্য পরিবহনের সুযোগ সৃষ্টি হবে। বিনিয়োগের জন্য সবচেয়ে উত্তম জায়গা বাংলাদেশ। আমাদের দেশের মানুষ আরও বেশি নিজের দেশে বিনিয়োগ করতে উৎসাহিত হবে আশা করি।
তিনি বলেন, আমাদের শিল্পাঞ্চলগুলো যাতে পরিবেশবান্ধব হয়, সেজন্য নানা ব্যবস্থা নিচ্ছি। বর্জ্য পরিশোধনের জন্য আমরা সেন্ট্রাল বর্জ্য পরিশোধনাগার করে দিচ্ছি। পাশাপাশি প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব বর্জ্য পরিশোধনগার রাখাও বাধ্যতামূলক করেছি। জাপানের এই উদ্যোগ অন্যান্য দেশকেও আমাদের দেশে বিনিয়োগ করতে উৎসাহিত করবে বলে আশা করি।
সরকারপ্রধান বলেন, বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। ২০৪১ সালের মধ্যে আমরা বাংলাদেশকে উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তুলবো। আমাদের দুই দেশের পতাকার মাঝেও মিল রয়েছে। জাপানকে আমি বাংলাদেশের জনগণের পক্ষ থেকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।
প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রীর জাপান সফরের মাধ্যমে বাংলাদেশে জাপানিজ অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মাণের পথচলা শুরু হয়। ২০১৬ সালে জাইকা বাংলাদেশে একটি জাপানিজ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনে সম্ভাব্যতা সমীক্ষার কাজ হাতে নেয় এবং একই বছর দেশটির সরকার বিশ্ববিখ্যাত প্রতিষ্ঠান সুমিতোমো করপোরেশনকে ডেভেলপার হিসাবে নিয়োগ করার জন্য সুপারিশ করে। ২০১৮ সালে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা শেষে জাইকা নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে জাপানিজ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের পক্ষে মত দেয়। পরবর্তীতে যৌথ উদ্যোগে জাপানিজ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনে ২০১৯ সালে বেজা ও সুমিতোমো করপোরেশনের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।