জসীমউদ্দীন ইতি ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি
নাজমা ওরফে ছুটুনি বুড়ির দাবি, স্বপ্নে স্বর্ণের পুতুলের সন্ধান পেয়েছেন। ঐ পুতুল রয়েছে তাঁর বসতঘরে। এটি তুলতে হলে মসজিদে দিতে হবে ২ লাখ ২০ হাজার টাকা। এভাবে পুতুল তোলা নিয়ে প্রতারণা করে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে নাজমা টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ঘটনাটি ঘটেছে ঠাকুরগাঁও জেলার রাণীশংকৈল উপজেলায়। এদিকে বিষয়টি থানায় জানিয়েও কোনো প্রতিকার মিলছে না অভিযোগকারীদের। অভিযোগ থেকে জানা গেছে, নাজমা রাণীশংকৈল উপজেলার লেহেম্বা ইউনিয়নের কোচল এলাকার আব্দুল বারেকের স্ত্রী। তিনি সম্প্রতি রানীশংকৈল উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নের মহারাজাহাট এলাকায় মোজাফফর রহমানের বাড়িতে গিয়ে অবস্থান নেন। সেখানে গিয়ে তাঁর অভাব-অনটনের বিষয় মোজাফ্ফরকে বলেন। একপর্যায়ে তাঁকে ধর্মের ছেলে বানিয়ে আত্মীয়তা তৈরি করেন। ১০ নভেম্বর রাতে মোজাফ্ফর স্ত্রী সহ নাজমার বাড়িতে গেলে নাজমা বলেন, তাঁর ঘরে ‘জিনের পুতুল’সহ বিভিন্ন স্বর্ণালংকার রয়েছে। এগুলো মাটি থেকে তুলতে জিনের নির্দেশনা অনুযায়ী দুই মসজিদে মোট ২ লাখ ২০ হাজার টাকা দান করতে হবে। তাঁর তো এত টাকা নেই। তিনি যদি ধার দিতেন তাহলে দেওয়ার এক ঘণ্টা পরই পুতুল সহ স্বর্ণালংকার তুলে বিক্রি করে তাঁকে টাকাটা ফেরত দেবেন। এরপর মোজাফ্ফর তাঁকে ঐ টাকা ধার দেন।
অভিযোগ থেকে আরও জানা গেছে, টাকা নেওয়ার পর মোজাফ্ফর ও তাঁর স্ত্রীকে বাড়িতে বসতে বলেন। একপর্যায়ে বাড়িতে কয়েকজন এসে বলেন, ‘আপনারা এত রাতে এখানে কী করেন। এখান থেকে চলে যান, না হলে সমস্যা আছে। অবস্থা বেগতিক দেখে মোজাফ্ফর তাঁর স্ত্রীকে নিয়ে সেখান থেকে চলে আসেন। পরে স্থানীয় সচেতন ব্যক্তিদের পরামর্শে পরদিন নাজমা সহ ৮ জনকে আসামি করে রানীশংকৈল থানায় লিখিত অভিযোগ দেন মোজাফ্ফর। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, নাজমা প্রায় সময়ই মানুষের সঙ্গে স্বপ্নে পাওয়া পুতুলের প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণা করে আসছেন। তাঁকে সহায়তায় তাঁর বাড়ির আশপাশজুড়ে রয়েছে একটি চক্র। রাণীশংকৈল উপজেলার ধর্মগড় ইউনিয়নের শাহানাবাদ এলাকার রশিদুল ইসলাম জানান, তাঁকেও জিনের পুতুলের কথা বলে ১ লাখ টাকা প্রতারণা করেছেন নাজমা। একইভাবে রানীশংকৈল উপজেলার রাতোর ইউনিয়নের রাঘবপুর গ্রামের ভম্বল বানিয়া বলেন, জিনের পুতুলের স্বর্ণ তাঁর কাছে বিক্রি করবেন এমন প্রলোভন দেখিয়ে নাজমার বাড়ি কোচলে ডেকে নিয়ে ১ লাখ ১৭ হাজার টাকা নিয়ে নেন। পরে তাঁকে ভয়ভীতি দেখিয়ে সেখান থেকে পাঠিয়ে দেন নাজমার লোকজন। এদিকে অভিযোগ দেওয়ার ৬ দিন পর গত বৃহস্পতিবার রাণীশংকৈল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদ ইকবাল ও সহকারী পুলিশ সুপার (রাণীশংকৈল সার্কেল) কামরুল হাসান জানান, ঘটনাস্থল তাঁদের এলাকায় নয়, তা ছাড়া এ ঘটনার কোনো সাক্ষী-প্রমাণ নেই। এ কারণে তাঁরা মামলাটি নিতে পারছেন না। মোজাফ্ফর জানান, অভিযোগ দেওয়ার এক ঘণ্টা পর সহকারী উপ-পরিদর্শক (এ,এস,আই) নুরে আলম মোজাফ্ফরের এক আত্মীয়কে মোবাইল ফোনে বলেন, ‘ওসি অভিযোগটি তাঁকেই দেখার দায়িত্ব দিয়েছেন। তিনি কিছু সময়ের মধ্যেই নাজমার বাড়িতে যাবেন। তবে ঐ দিন তাঁর বাড়িতে যাননি।’ পরদিন ১২ নভেম্বর দুপুরে এ,এস,আই নুরে আলমকে ফোন দিয়ে অভিযোগের তদন্ত বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ ঘটনায় মামলা হলে ভালো হতো। এরপরও তিনি থাকলে যেতেন; কিন্তু তিনি ঠাকুরগাঁও পুলিশ লাইনে খেলতে এসেছেন এজন্য যেতে পারেননি। পরে কয়েক দফা খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, কোনো ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি।
মোজাফ্ফরের বাড়িতে গিয়ে নাজমা নিজের অভাব-অনটনের বিষয় তাঁকে বলেন। এক পর্যায়ে ছেলে বানিয়ে আত্মীয়তা তৈরি করেন। ১০ নভেম্বর রাতে মোজাফ্ফর স্ত্রী সহ নাজমার বাড়িতে গেলে নাজমা বলেন, তাঁর ঘরে ‘জিনের পুতুল’সহ বিভিন্ন স্বর্ণালংকার রয়েছে।