জসীমউদ্দীন ইতি, ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি :
ঠাকুরগাঁওয়ের ভারী কোন শিল্পকারখানা না খাকায় মাঠে মাঠে শীতকালীন সবজি চাষের প্রতি ঝুকছে কৃষক। অবশ্য কোনো কোনো এলাকার চাষি আগেভাগেই খেতে শীতের সবজি চাষ করেছেন। এরই মধ্যে ফুলকপি, বাঁধাকপি, মুলা, বেগুন, লাউ, করল্লা, পেঁপে, বোরবটি, শিমসহ বেশ কিছু শীতের আগাম সবজি বাজারে উঠেছে।
অন্যদিকে, স্থানীয়দের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি এসব সবজি যাচ্ছে ঢাকাসহ বিভিন্ন অঞ্চলে। এতে লাভবান হচ্ছেন কৃষক ও ব্যবসায়ীরা। আর ভোক্তারা পাচ্ছেন বিভিন্ন ধরনের আগাম সবজি।
ব্যবসায়ী ওহায়েদ মুরাদ ও সুজন মিয়া জানান, সবজির মান ভালো হওয়ায় পাইকারি দরে কিনে রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলায় পাঠাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। এবার আগাম সবজির ফলন বেশি হওয়ায় দৈনিক ৪-৫টা করে সবজির গাড়ি লোড করে ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গায় পাঠাচ্ছেন। গতবার এই সময়ে প্রতিদিন এক থেকে দুইটা ট্রাক লোড হয়েছিল।
বর্তমান সবজির যে বাজার দর, এমন দাম থাকলে লাভবান হবেন বলে আশা করেন কৃষক মো. হানিফ। তিনি বলেন, আমি দেড় বিঘা জমিতে বেগুন আবাদ করেছি। এতে প্রতি সপ্তাহে ১০-১৫ হাজার টাকার বেগুন বিক্রয় করছি। আশা করছি মৌসুম শেষে দেড় বিঘার বেগুনে প্রায় ৫০-৬০ হাজার টাকা লাভ হবে।
সদর উপজেলার নারগুন কহরপাড়া গ্রামের চাষি আব্দুল মালেক চাষ করেছেন বিভিন্ন সবজি। ইতোমধ্যে পালং শাক তুলে বাজারজাত করছেন তিনি। তিনি বলেন, পালং শাক শুধু ৭ কাঠা জমিতে করেছি। খরচ হয়েছে ৩ হাজার টাকা। ৩ কাঠা জমির শাক কেটে বিক্রি করেছি সাড়ে ৬ হাজার টাকা। আরও বাকি যেই শাক আছে, বর্তমান বাজার অনুযায়ী তা প্রায় ১৫ হাজার টাকা বিক্রি করতে পারবো। আর যদি এর থেকে দাম বেশি হয় তাহলে আশা করছি ২০ হাজার টাকা বিক্রয় হবে।
সবজি ব্যবসায়ী মনির হোসেন বলেন, কৃষকদের কাছে পাইকারি দরে ভালো মানের ফুলকপি ৩৫ টাকা, করলা ৩০, বেগুন ২০-২৫, লাউ প্রতি পিচ ২০, মুলা ৭-৮ টাকা কেজি দরে কিনছেন। তবে এবার মুলার দাম না পেয়ে হতাশ চাষিরা।
চাষি আল-আমীন বলেন, এবার ফুলকপি, লাউসহ অন্যান্য সবজির দাম অনেক হলেও মুলার দাম নেই। জমি থেকে মুলা তুলে বিক্রয় করে সেই মজুরির টাকায় হয় না। এখনও আমার ৫ একর জমির মুলা বিক্রি করতে পারিনি। এতে আমরা চাষিরা খুব হতাশায় আছি।
খুচরা বাজারে সবজির অনেক দাম সেই তুলনায় কৃষক পর্যায়ে তারা ন্যায্য ও কাঙ্খিত দাম পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেন কৃষক মনিরুজ্জামন মনির। তিনি বলেন, এবার আমাদের এদিকে প্রচুর সবজির আবাদ হয়েছে ফলনও ভালো। কিন্তু আমরা চাষিরা সেরকম দাম পাচ্ছি না। এদিকে সার কীটনাশক ও মজুরির দাম অনেক বেড়ে গেছে। এছাড়াও টাকা দিয়ে আমরা সার পাচ্ছি না। সেই তুলনায় কৃষরা ন্যায্যমূল্য পাচ্ছি না। বর্তমান সবজির বাজার অনুযায়ী খরচ ও ফলনের দাম সমান সমান হয়ে যাচ্ছে। তাই দামটা যদি আরও একটু বেশি পেতাম, তাহলে কৃষকরা লাভবান হতে পারতাম।
জেলা কৃষি অধিদফতরের উপ-পরিচালক ড. মো. আব্দুল আজিজ বলেন, সবজি চাষে সার্বক্ষণিক কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। আগাম সবজি চাষে কৃষকরা ভালো দাম পাচ্ছেন বলে আগাম সবজি চাষে ঝুঁকছেন অনেক কৃষক। আশাকরি আবহাওয়া ভালো থাকায় সবজি আবাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে।
এছাড়াও ঠাকুরগাঁওয়ে এবার সবজি আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৭ হাজার ৮৯৫হেক্টের জমি। এ পর্যন্ত আবাদ হয়েছে ১ হাজার ৬৩৭ হেক্টর জমি বলে জানান তিনি।