পাবনা প্রতিনিধি
মুক্তিযোদ্ধা সাইফুল ইসলাম বাবলু চক্র কর্তৃক হয়রানি ও চাঁদাবাজির প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করেছেন ভুক্তভোগী অর্ধশত মুক্তিযোদ্ধারা। এছাড়া পাবনা সদর উপজেলার মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা যাছাই-বাছাই কমিটি থেকে সাইফুল ইসলাম বাবলুকে প্রত্যাহারেরও দাবি জানিয়েছেন তারা।
রবিবার (০৬ নভেম্বর) দুুপুরে পাবনা প্রেসক্লাব মিলনায়তনে ‘বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ ও হয়রানি প্রতিরোধ কমিটি’ এই সংবাদ সম্মেলন করে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত অভিযোগে তারা বলেন, ‘একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদ-প্রাপ্ত জামায়াতের সাবেক আমীর মতিউর রহমান নিজামীর ভাগ্নে সাইফুল ইসলাম বাবলু পাবনায় প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্নভাবে হয়রানি করছেন। ২০১৬ সালের পর থেকে বাবলু মুক্তিযোদ্ধাদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করে আসছে। তার দাবিকৃত চাঁদা প্রদানে ব্যর্থ হওয়ায় পাবনার প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের নামে মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের গেজেট ও সনদ বাতিলসহ নানাভাবে হয়রানী করছেন।’
তারা আরও বলেন, ‘সাইফুল ইসলাম বাবলু কখনই মুক্তিযোদ্ধা সংসদের পাবনা জেলা ও উপজেলা ইউনিট কমান্ডের নির্বাচিত কমিটির নেতৃত্বে ছিলেন না। এখনও তার কোনও পদ নেই। কিন্তু প্রয়াত সাবেক একজন প্রভাবশালীর মন্ত্রীর স্ত্রীর ভাই হওয়ায় মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন জনের নাম ব্যবহার করে জামুকায় প্রভাব বিস্তার করেছেন, সেখানে মুক্তিযোদ্ধাদের নামে মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করছেন। এছাড়াও তিনি পাবনা জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি হিসেবে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা যাছাই-বাছাই কমিটিতে রয়েছেন। ওই কমিটিতে তিনি নানাভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের নামে মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে হয়রানি করছেন।’
মুক্তিযোদ্ধাদের দাবি, ‘যেসব মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা বন্ধ করা হয়েছে তাদের অধিকাংশ জনেরই লাল মুক্তিবার্তা, মুক্তিবার্তাসহ অন্যান্য গেজেট রয়েছে। এছাড়াও অনেকের নামে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক প্রত্যায়নপত্রও রয়েছে। তারা দীর্ঘ ৫০ বছর ধরে নিয়মিত ভাতা পেয়ে আসছেন। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা সাইফুল ইসলাম বাবলু চক্র তাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে তাদের ভাতা বন্ধ করে দিয়েছে।’
মুক্তিযোদ্ধারা আরও অভিযোগ করেন, ‘সাইফুল ইসলাম বাবলু দীর্ঘদিন ধরে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের নিয়ন্ত্রণ নিতে নানা অপকর্ম করে আসছেন। তার মতের বিরুদ্ধচারণ করলেই তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে লেগে পড়েন এবং অসত্য অভিযোগ করে নানা ভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের হয়রানি করেন। একই সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের বিড়ম্বনায় ফেলে তা সমাধান করে দেয়ার জন্য মোটা অংকের টাকা উৎকোচ নেন। তার এই অপকর্ম পাবনায় প্রকাশ্য ঘটনা। ভুক্তভোগী মুক্তিযোদ্ধারাও সাইফুল ইসলাম বাবলুর ষড়যন্ত্রের শিকার বলে দাবি করেন তারা। একই সাথে সাইফুল ইসলাম বাবলুর শাস্তিও দাবি করেন তারা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন আয়োজক কমিটির আহবায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. মেজর (অব:) মীর্জা মনছুর। উপস্থিত ছিলেন যুগ্ম-আহবায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা নাসির উদ্দিন, সদস্য সচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা শামসুল আলম পানচের, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রশিদ (সাংগঠনিক), বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল জব্বার (প্রচার), বীর মুক্তিযোদ্ধা তোফাজ্জল হোসেন হেলাল (কোষাধ্যক্ষ), বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. সোহরাব উদ্দিন (দফতর), সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট তোরাব আলী, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল লতিফ সেলিম, বীর মুক্তিযোদ্ধা মোস্তফা কফিল, বীর মুক্তিযোদ্ধা রেজাউল করিম রেজা, বীর মুক্তিযোদ্ধা শফিউল আলম রাজা প্রমুখ।
এর আগে একই দাবিতে গত মঙ্গলবার (১ নভেম্বর) পাবনা জেলা প্রশাসক বিশ্বাস রাসেল হোসেনের কাছে স্মারকলিপি প্রধান করেন তারা। পরে গত বৃহস্পতিবার (৩ নভেম্বর) দুপুরে পাবনা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে একই দাবিতে বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন মুক্তিযোদ্ধারা।