জসীমউদ্দীন ইতি ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি
প্রথমবারের মতো ঠাকুরগাঁও সদরের আকচা ইউনিয়নে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী তন্ত্র-মন্ত্রের মধ্য দিয়ে পাতাখেলা প্রতিযোগিতা।
গ্রাম বাংলার চমৎকার এই খেলা দেখতে উপচেপড়া ভিড় ছিল দর্শকদের। হারিয়ে যেতে বসা এ খেলা নিয়মিত আয়োজনের অনুরোধ তাদের। সহযোগিতা পেলে প্রতি বছর এ ধরনের খেলা আয়োজনের কথা বলছেন আয়োজকরা। স্থানীয় আদিবাসী জনগোষ্ঠির আয়োজনে শনিবার (৬ নভেম্বর) বিকেলে ওই ইউনিয়নের সর্দারপাড়া শাপলা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এ পাতাখেলা অনুষ্ঠিত হয়। এসময় মাঠজুড়ে ছিল দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড়। সেইসঙ্গে এলাকাজুড়ে ছিল উৎসবের আমেজ। বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা ৯টি তান্ত্রিক দল তাদের তন্ত্রমন্ত্র দিয়ে পাতারূপী সাপকে মাঠের মাঝখান থেকে চারদিকে টানার প্রতিযোগিতা করে। প্রতিযোগিতায় যার পয়েন্ট বেশি হয় সেই তান্ত্রিক দলকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। বিজয়ী দলকে পুরস্কার হিসেবে দেওয়া হয় ১০ হাজার টাকা। এমন খেলা দেখে বিমোহিত ও খুশি দর্শকরা। সবার দাবি, প্রতি বছর আয়োজন হোক এমন খেলার। খেলা দেখতে আসা তান্নি নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, আমি কখনো এই পাতাখেলা দেখিনি। আজকে প্রথম দেখলাম। আমার অনেক ভালো লাগল। শুধু আমি না, আমার অনেক বান্ধবী এই পাতাখেলা দেখতে আসছে। আমি আয়োজকদের কাছে অনুরোধ করব যেন এই খেলাটি প্রতি বছর তারা আয়োজন করেন।
রমজান নামে এক বৃদ্ধ বলেন, আমরা যখন যুবক ছিলাম প্রতিনিয়তই এ খেলাগুলো হতো। কালের বির্বতনে খেলাগুলো হারিয়ে গেছে। আসলে এগুলো আবারও ফিরিয়ে আনা দরকার। কারণ এগুলো মানুষকে বিনোদন দেয়। আজ অনেকদিন পর আবারও পাতাখেলা দেখতে পেরে আমি খুব খুশি। খেলা দেখতে আসা নুরজাহান বেগম নামে একজন বলেন, আমরা এই খেলা অনেক আগে দেখেছি মাঝখানে ছিল না। আজকে আমাদের গ্রামের যুবকরা এ খেলার আয়োজন করেছে। আমাদের দেখতে খুব ভালো লাগতিছে। তবে সবচেয়ে আনন্দের বিষয় আমরা আগের মানুষ দিয়ে পাতা খেলা দেখেছি আজকে প্রথম আমরা সাপ দিয়ে পাতাখেলা দেখলাম। খুব ভালো লাগল। খেলায় অংশগ্রহণকারী মলিন চন্দ্র রায় নামে এক তান্ত্রিক জানান, তান্ত্রিকদের মতে, প্রাচীনকাল থেকে গুণীকরা খেলত এই পাতাখেলা। আর এজন্য যে মন্ত্র প্রয়োজন তা অতি কঠিন। তবে খেলায় পুরস্কার পাবার আশায় নয়, মানুষকে বিনোদন দিতে এবং নিজেও আনন্দ উপভোগ করতে খেলায় অংশ নিয়েছি। খেলার আয়োজক কমিটির সভাপতি কানাই চন্দ্র জানান, আমরা এলাকার মানুষকে আনন্দ দিতে এবং হারিয়ে যাওয়া গ্রাম বাংলার এই খেলাটি নতুন
প্রজন্মকে জানান দিতেই আমাদের এই আয়োজন। খেলায় বিভিন্ন এলাকা থেকে ৯টি তান্ত্রিক দল অংশ নিয়েছে এবং খেলাটিও বেশ জমজমাট হয়েছে।