— এবাদত আলী —
(পুর্ব প্রকাশের পর)
আসলে সাংবাদিক শব্দটার মধ্যে কেমন যেন একটা রোমাঞ্চকর ভাব লুকিয়ে রয়েছে। তাইতো এর প্রতি মানুষের কৌতুহল অনেক বেশি। যাক আটঘরিয়াতে সাংবাদিকদের জন্য একটি প্রেসক্লাব গঠনের বিষয়ে আমিরুল ইসলাম রাঙার প্রস্তাব আমার কাছে একসময় গ্রহণযোগ্য বলে মনে হলো। কারণ এখানে এই মানসিকতার আরো কয়েকজনকে পাওয়া গেল। আটঘরিয়ার রাধাকান্তপুরের আব্দুস সাত্তার মিয়াকে এব্যাপারে উৎসাহিত করা হলো। তিনি ছোট বেলা থেকেই লেখা-লেখির সাথে যুক্ত ছিলেন। তিনি তখন আটঘরিয়া থানা শিক্ষা অফিসের হেডক্লার্ক পদে কর্মরত। অফিসের কাজের ফাঁকে তিনিও খুলনার দৈনিক জনবার্তা নামে একটি পত্রিকায় আটঘরিয়া প্রতিনিধি হিসেবে সংবাদ পাঠাতেন। আরেক জন ছিলেন আটঘরিয়া পশু হাসপাতালের ডাক্তার আব্দুল কাদেরের বড় ছেলে সিরাজুদ দাহার মাতলু ওরফে এস দাহার মাতলু। পিতার চাকরির সুবাদে আটঘরিয়ার দেবোত্তরেই থাকতেন। তিনি ও পত্র-পত্রিকার সাথে যুক্ত ছিলেন। একদিন আমিরুল ইসলাম রাঙা, আব্দুস সাত্তার মিয়া ও এস দাহার মাতলুকে নিয়ে আমার অফিসে এলো এবং আটঘরিয়া প্রেসক্লাব গঠনের বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে অনুরোধ করলো। আমি এতদিনে এই বিষয় নিয়ে বেশকিছু চিন্তা ভাবনা করে রেখেছিলাম। শুধু সময়ের অপেক্ষায় দিন গুনছিলাম। সেদনিই অফিস ছুটির পর পড়ন্ত বিকেলে আমরা দেবোত্তর প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে ঘাসের মধ্যে বসে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেই। পরে দেবোত্তর বাজারের একমাত্র চায়ের দোকান অর্থাৎ মজিবর রহমান ঠান্ডার চায়ের দোকানে বসে আটঘরিয়া প্রেসক্লাব গঠনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়।
১৯৭৮ সালের ৭ মে তারিখে আটঘরিয়া প্রেসক্লাবের যাত্রা শুরু হয়। সর্বসম্মতিক্রমে আমাকে (এবাদত আলী) সভাপতি পদে অধিষ্ঠিত করা হয় এবং আবদুস সাত্তার মিয়া সাধারণ সম্পাদক এবং আমিরুল ইসলাম রাঙা ও এস দাহার মাতলু সদস্য মনোনিত হন।
আটঘরিয়া প্রেসক্লাব গঠনের পর আটঘরিয়ার কয়রাবাড়ির মোহাম্মদ ইয়াছিন যিনি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন তিনি এবং আটঘরিয়া বিআরডিপি অফিসে কর্মরত মো: হাসান আলী সাংবাদিকতার সঙ্গে যুক্ত হন। তাদেরকে প্রেসক্লাবের সদস্য করা হয়। এর পরই আরো দুজন, যেমন এইচ কেএম আবু বকর সিদ্দিক ও মোসলেম উদ্দিনকে সদস্য করা হয়। পরবর্তীকালে অনেকেই এই প্রেসক্লাবের সদস্য পদ লাভ করেন। মজিবর রহমান ঠান্ডার চায়ের দোকানে আটঘরিয়া প্রেসক্লাব গঠন করা হলো কিন্তু সাংবাদিকদের জন্য বসার কোন ব্যবস্থা হলোনা। ঠান্ডার দোকানের উত্তর পাশে কিছুটা ফাঁকা জায়গা পড়ে ছিলো। আমরা প্রস্তাব দিতেই তিনি সেখানে ঢেউ টিনের একটি ছাপড়া ঘর তৈরি করে দিলেন। নামমাত্র ভাড়ায় আমরা সেখানে প্রেসক্লাবের জন্য অফিস ঘর বানালাম। কিন্তু চেয়ার-টেবিল পাবো কোথায়? সকলে মিলে চাঁদা-হারি তুলে ৭৫ টাকা দরে খান কয়েক চেয়ার এবং ১০০ টাকা দরে দুটো টেবিল ক্রয় করে বসার এবং খাতাপত্র রাখার ব্যবস্থা করা হলো। পাটখড়ির বেড়া দেওয়া জানালা বিহীন ভাড়া ঘরে বসেই সংবাদপত্র এবং সাংবাদিকতার বিষয় নিয়ে প্রতিদিন বিকালে আমরা আলাপ আলোচনায় মত্ত হতাম।
প্রেসক্লাব গঠনের পরপরই এলাকায় ব্যাপক সাড়া পড়ে যায়। গণ্যমান্য ব্যক্তিদের মধ্যে অনেকেই সহযোগিতা করার জন্য এগিয়ে আসেন। বিশেষ করে দেবোত্তর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুস সাত্তার মোল্লা, দেবোত্তরের সৈয়দ নাসিরুজ্জামান, রাধাকান্তপুরের জাহাঙ্গীর আলম ঘুটু প্রমুখ ব্যক্তিগণ প্রেসক্লাবের ব্যাপারে দারুনভাবে উৎসাহি হওয়ায় আমরা চেয়ারম্যান আব্দুস সাত্তার মোল্লাকে প্রধান উপদেষ্টা এবং সৈয়দ নাসিরুজ্জামান ও জাহাঙ্গীর আলম ঘুটুকে সদস্য করে একটি উপদেষ্টা পরিষদও গঠন করি। প্রেসক্লাব গঠনের পরপরই অর্থাৎ ১৭ মে,১৯৭৮ তারিখে রাষ্ট্রপতি লেঃ জেঃ জিয়াউর রহমান আটঘরিয়া কলেজে আগমণ করবেন এবং কলেজ মাঠে জনসভায় ভাষণ দিবেন। আটঘরিয়ার রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দেরআলোচনার মাধ্যমে আটঘরিয়া প্রেসক্লাবের পক্ষ হতে প্রেসক্লাবের সভাপতি উক্ত জনসভায় বক্তব্য রেখে রাষ্ট্রপতিকে আটঘরিয়াবাসির অভাব অভিযোগ নিরপেক্ষভাবে তুলে ধরার পাশাপাশি আটঘরিয়া প্রেসক্লাব সম্পর্কে তাঁর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হবে। আমনা আটঘরিয়া পেট্রসক্লাবের সদস্য-সাংবাদিত বৃন্দ মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সান্নিধ্যে যাবার সুযোগ পাবো ভাবতে বেশ ভালোই লাগছিলো। এই বিরোচিত ব্যক্তিকে সংবর্ধনা জানানোর জন্য প্রেসক্লাবের পক্ষ থেকে একটি মানপত্র প্রদানেরও সিদ্ধান্ত হয়। মানপত্র রচনা ছাপানো ও বাঁধাইয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয় আমিরুল ইসলাম রাঙার উপর (ক্রমশ:)। (লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট)
