ঈশ্বরদী (পাবনা) সংবাদদাতাঃ
‘পবিত্র ঈদুল ফিতর’ সবচেয়ে আনন্দময় ধর্মীয় উৎসব। কিন্তু ঈশ্বরদী জংশন ষ্টেশনের ভাসমান ও ছিন্নমূল মানুষের জীবনে ঈদের আনন্দ বয়ে আনে না। এখানকার শতাধিক ছিন্নমূল ও ভাসমান মানুষ এবারও ঈদের কোনো ছোঁয়া লাগেনি।
সোমবার (৩১ মার্চ) ঈদের দিনও গোটা ঈশ্বরদী জংশন ষ্টেশন, রেলওয়ে বুকিং অফিস, মালগুদাম ও বাসটার্মিনাল এলাকায় এদের বিচ্ছিন্নভাবে দেখা গেছে। এই স্থানগুলোতে এ ধরনের মানুষকে দল বেঁধে থাকতে দেখা যায়। ভাসমান এসব মানুষের স্থানীয় আইডি না থাকায় সরকারি সাহায্য বা ভিজিএফ সাহায্য পাননি। ফলে উৎসবের দিনও হয়ে গেছে বর্ণহীন।
বিত্ত বৈভবের আড়ালে থাকা এসব হতদরিদ্র মানুষরা জানান, প্রতিনিয়তই তাদের ব্যস্ত থাকতে হয় জীবন বাঁচিয়ে রাখার সংগ্রামে। আর বড় বড় স্যারদের কাছে হাত পেতে টাকা পেলেই তা দিয়ে কিনে খাওয়া হয় খাবার।
রেলওয়ে বুকিং অফিসের পাশে ওভারব্রিজে চলাচলরত সবার কাছে সাহায্য চাচ্ছিলেন ষাটোর্ধ বৃদ্ধ মোবারক হোসেন। তিনি বলেন, ছেলেরা বিয়ে করে যার যার মতো সংসার পেতেছে। ছোট মেয়েটাও অসুস্থ। ওদের মা মারা গেছে দশ মাস আগে। তাই এখন সবার সাহায্য নিয়েই চলতে হয়। আমাদের ঈদে নেই আনন্দ।
ঈশ্বরদী জংশনের ৩-৪ নম্বর প্লাটফর্মের দক্ষিণ পাশে ময়লা আর ছেঁড়া কাপড় পরে বসেছিলেন বৃদ্ধা রোমেলা বেগম। কান্ত, শ্রান্ত, বিষন্ন মুখ। রোমেলা বেগম বলেন, ভিক্ষা করে নিজের জীবন বাঁচানোর চেষ্টা করছি। কিন্তু এভাবে কী আর চলে। ঈদের দিনে সকালে কিছু সেমাই ও রুটি পেয়ে ওইগুলাই খাইছি। এটাই আমার ঈদ।
নাটোরের সিংড়া এলকার সাজ্জাদ আলী (৬৫) সঙ্গে প্লাটফর্মের ওইস্থানেই কথা হয়। গ্রামের বাড়িতে পৈত্রিক কয়েক শতক জমি যা ছিল, তাই বেঁচে রোগের চিকিৎসা করিয়েছেন। ভিটে-মাটি না থাকায় চলে এসেছেন ঈশ্বরদীতে। সেই থেকে ষ্টেশনেই জীবন কাটে। ভিক্ষাবৃত্তি করেই চলছে জীবন। রমজান আর ঈদ মিলিয়ে ভিক্ষা অন্য সময়ের চেয়ে বেশি পাওয়া যায় বলে জানালেন তিনি। কিন্তু ঈদ উপলক্ষে সরকারি কোনো সহায়তা তিনি পাননি।
অবহেলা আর বঞ্চনার শিকার চাটমোহরের জোঁকাদহ গ্রামের লতিফুর রহমানের জীবনে ঈদ বয়ে আনতে পারেনি নিরলস আনন্দ। তিন সন্তানের মধ্যে ১২ ও ১৪ বছরের দুটি ছেলেকে চা ষ্টল ও গ্যারেজে কাজে দিয়েছেন। স্ত্রী ও ছোট ছেলেকে নিয়ে বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে ভিক্ষা করেন। দশদিন আগে এসেছেন ঈশ্বরদীতে। থাকছেন বুকিং অফিস ও প্লাটফর্ম এলাকায়। ফিতরা ও জাকাত তোলার সাথে সাথে ভিক্ষা করেছেন। তিনি বলেন, কয়েকদিনে বেশকিছু সহযোগিতা পেয়েছি। সকালে সেমাই-রুটি বাড়ি বাড়ি ঘুরে চেয়ে এনে খেয়েছি। দুপুরে আবার বের হবো। আজকে ভালো জিনিষ খেতে পাইছি। তবে সমস্যা হচ্ছে থাকা নিয়ে। ষ্টেশনের পুলিশ বার বার চলে যেতে বলছে। আজকে ট্রেন চলছে না। কোথায় কিভাবে যাব বুঝতে পারছি না।
তবুও অল্পতেই তুষ্ট থাকতে চাওয়া এ মানুষগুলো ঈদ এলে উচ্ছাসিত হতে পারেন না। ছিন্নমূল শিশুদের শরীরে নতুন জামা ভাগ্যে জোটেনি। এসব ভাসমান পরিবারের কাছে ঈদ মানে যেন অন্ধকার। কেননা ঈদ উৎসবের তার পরিবারের শিশুদের যে বায়না থাকে, তা মেটাতে পারেন না তারা। যেখানে তাদের দিনের খাবার জোগাতেই অনেক কষ্ট, সেখানে ঈদের আনন্দে পরিবারের চাহিদা মেটাতে না পেরে উৎসবের দিনও তাদের কাছে বর্ণহীন। ##