শিমুল, দিনাজপুর প্রতিনিধি :
ঐতিহাসিক তেভাগা আন্দোলনের প্রানপুরুষ চিরঞ্জীব কমরেড গুরুদাস তালুকদার এর ৪১তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে দিনাজপুরে স্মরণ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
২৫ ফেব্রুয়ারী বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দিনাজপুর প্রেসক্লাব মিলনায়তনে কমরেড গুরুদাস তালুকদার স্মৃতি সংসদ দিনাজপুরের আয়োজনে এবং স্মৃতি সংসদের আহবায়ক রঞ্জন কুন্ডু‘র সভাপতিত্বে স্মরণ সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন কমরেড আলতাফ হোসাইন।
অনুষ্ঠানে অন্যানের মাঝে আরো বক্তব্য রাখেন, প্রগতি লেখক সংঘের সভাপতি জলিল আহম্মেদ,সিপিবি সভাপতি এ্যাড: মেহেরুল ইসলাম,সাংবাদিক ও গবেষক আজহারুল আজাদ জুয়েল,উদীচীর কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও দিনাজপুর নাট্য সমিতির সা: সম্পাদক রেজাউর রহমান রেজু,সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট সভাপতি সুলতান কামাল উদ্দীন বাচ্চু,বাংলাদেশের কমিউিনিষ্টলীগ দিনাজপুর সভাপতি আনোয়ার আলী সরকার প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে বক্তারা তার স্মৃতিচারণ করে বলেন,এই পৃথিবীতে কিছু মানুষের আবির্ভাব ঘটে যারা অন্যের জন্য বাঁচে, তাদের নিজেদের কোনো চাওয়া পাওয়া থাকে না – মানুষের জন্য নিজেদের জীবন উৎসর্গ করে দেয়। তাদের জীবনের একমাত্র উদ্দেশ্য থাকে মানব সেবা। তেমনই একজন মানুষ ছিলেন কমরেড গুরুদাস তালুকদার।
জন্মেছিলেন রংপুরের পিরগাছার মন্থনা স্টেটের এক জমিদার পরিবারে, ১৮৯৬ সালে। রংপুর থেকে এন্ট্রান্স (সে সময়কার ম্যাট্রিকুলেশন বা এস,এস,সি) পাশ করার পর তার বাবা তাকে কোলকাতা মেডিকেল কলেজে ভর্তি করে দেন। তিনি যখন সেখানে পড়ছিলেন সে সময় বাংলার অবিসংবাদিত নেতা দেশবন্ধু সি,আর,দাস (চিত্তরঞ্জন দাস) একদিন তাদের মেডিকেল কলেজে এলেন স্বরাজ প্রতিষ্ঠার দাবি নিয়ে।
সেখানকার ছাত্র জমায়েতে দেশবন্ধু ডাক দিলেন, ইংরেজদের কাছ থেকে স্বাধীনতা অর্জনের জন্য তোমরা কি পারবে নিজেদের জীবন উৎসর্গ করতে? সে সময় যে কয়জন ছাত্র এগিয়ে এসেছিলেন তাদের মধ্যে গুরুদাস তালুকদার ছিলেন অন্যতম। সেদিন যে মুষ্টিবদ্ধ প্রতিবাদী হাত তুলেছিলেন, সেটা তিনি আমৃত্যু করে গেছেন – অন্যায়ের বিরুদ্ধে, শোষনের বিরুদ্ধে। শুরু হলো কমরেডের সংগ্রামী জীবন।
১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন হতে ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ – সবখানেই তার বলিষ্ঠ ও নির্ভিক নেতৃত্ব।’ লড়াই করতে হবে’ ছিল তাঁর প্রিয় শ্লোগান। তিনি লড়াই না বলে,বলতেন “লাড়াই “! জীবনের প্রায় অর্ধেক সময় তিনি জেলে কাটিয়েছেন (প্রায় ৩৭ বছর)। তার চিন্তা চেতনায় উদ্ভুদ্ধ হয়ে দিনাজপুরের অনেক তরুণ যুবা তাঁর সহযোদ্ধা হয়েছেন। তিনি ছিলেন আমাদের বাতিঘর।
গত ২২ শে ফেব্রুয়ারি তাঁর তিরোধানের দিন ছিল। ১৯৮০ সালের এই দিনে তিনি লোকান্তরিত হয়েছিলেন। তিনি আজ নেই, কিন্তু তাঁর মহান কর্মযজ্ঞের মধ্য দিয়ে বিপ্লবী গুরুদাস তালুকদার অনন্তকাল আমাদের চিন্তা ও চেতনায় বেঁচে থাকবেন।
বক্তারা কমরেড গুরুদাস তালুকদারের স্মৃতিচারণ করে বলেন আমরা কখনোই তার জীবনী আলোচনা করে শেষ করতে পারবো না। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন কমরেড গুরুদাস তালুকদার স্মৃতি সংসদের সদস্য সচিব রেয়াজুল ইসলাম রাজু।