ইকবাল কবীর রনজু, চাটমোহর, পাবনা
পাবনার চাটমোহর উপজেলার নিমাইচড়া ইউনিয়নের করকোলা স্নান ঘাটে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রায় চারশত বছরের ঐতিহ্যবাহী বারুণীর গঙ্গা স্নানোৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৭ মার্চ) অনুষ্ঠিত এ স্নানোৎসব ঘিরে এলাকায় বিরাজ করে সাজ সাজ রব। স্নান ঘাটে বসে মেলা। মেলার অদূরে অবস্থিত করকোলা ঋষি পল্লীতে বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ। প্রতি বছরের মতো এবারও ঋষিদের মেয়ে জামাইরা নাইওরে এসেছেন। গঙ্গা স্নান করতে এসেছেন অন্যান্য আত্মীয় স্বজনও।
জানা গেছে, প্রতি বছর দোলের ১২ দিন পর মধুকৃষ্ণ ত্রয়োদশী তিথীতে করকোলা স্নান ঘাটে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের এ উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। গঙ্গার শাখা নদী গুমানীর করকোলা পয়েন্টে স্নান করতে আসেন পাবনা, নাটোর, সিরাজগঞ্জ, বগুড়াসহ আশ পাশের জেলা-উপজেলার সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। মনো বাসনা পূরণ ও পাপ মোচনের উদ্দেশ্যে স্নানোৎসবে অংশ নেন শত শত শিশু, কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণী, যুবক-যুবতী, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা।
বৃহস্পতিবার ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, ঢাক ঢোল বাজছে। উলুধ্বনীতে মুখরিত সমস্ত এলাকা। কেউ মন্ত্র জপছেন। কেউ সূর্য দেবতাকে উদ্দেশ্য করে দুহাত তুলে প্রার্থনা করছেন। কয়েকজন পুরোহিত সাড়ি বেধে বসেছেন নদীর পাড় ঘেষে। কেউ ব্যস্ত অর্ঘ সাজাতে। কেউ স্নান করছেন আবার কেউ স্নান করে তাবুতে কাপড় বদল করে রোদে শুকিয়ে নিচ্ছেন। জামাই পিঠা, ঝুড়ি পিঠা, জিলাপী, পাপড়, আইসক্রিমসহ অন্যান্য খাবার, দা, বটি, খুন্তি, ছুড়ি, মাটির তৈরী হরেক রকম পুতুল, ব্যাংকসহ গৃহকার্যে ব্যবহৃত নানান ধরণের উপকরণের দোকান বসেছে। সনাতন ধর্মাবলম্বী ছাড়াও এলাকার অন্যান্য ধর্মাবলম্বী কিছু মানুষ দূর দূরান্ত থেকে এসে নদীর ঘাটের মেলা থেকে কিনছেন নিত্য ব্যবহার্য জিনিষ পত্র।
গঙ্গা স্নান করতে আসা ভাঙ্গুড়া উপজেলার অষ্টমনিষা গ্রামের ভবেষ কুন্ডু জানান, “আমাদের পূর্ব পূরুষদের কাছে শুনেছি গঙ্গা স্নানের মাধ্যমে পাপ ধুয়ে মুছে যায়। পাপ মোচন ও পূণ্য লাভের আশায় আমরা গঙ্গা স্নান করে থাকি”। পরিবারের সদস্যদের সাথে নিয়ে স্নান করতে এসেছিলেন চৌবাড়িয়া গ্রামের স্বপন চন্দ্র সেন। তিনি জানান,“আমাদের পাপ মোচন ও মনের বাসনা যেন পূর্ণ হয় এ আশায় আমরা গঙ্গা স্নান করে থাকি। নিজেদের শুদ্ধ করি। হিংসা বিদ্বেষ ভূলে আমরা এক কাতারে সামিল হই”।
কয়েকজন পুরোহিত জানান, আমরা চলার পথে, প্রত্যহিক জীবনে জানা অজানায় পাপ করে থাকি। পাপ মোচন ও শুদ্ধ হওয়ার প্রত্যয়ে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা গঙ্গা স্নান করে থাকেন। এক সময় এ এলাকায় সাড়ম্বরে বারুণীর গঙ্গাস্নান অনুষ্ঠিত হলেও নানা কারণে এখন তা জৌলুস হারাতে বসেছে।
করকোলা গ্রামের ঋষি সম্প্রদায়ের প্রধান খিতিশ চন্দ্র দাস বলেন, “প্রায় চারশত বছর যাবত করকোলা গ্রামে গঙ্গা স্নানোৎসব উৎসব অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। অসংখ্য নারী পুরুষ ভক্তবৃন্দ এখানে নিদৃষ্ট দিনে স্নান উৎসবে যোগ দিতে আসেন। মনো বাসনা পূরণে তারা ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করেন। এখানে আমরা গঙ্গা দেবীর পূজা করে থাকি। পাশের ঋষি পল্লীতে তিন দিন ব্যাপী কালী পূজাও অনুষ্ঠিত হয়”।
(ক্যাপশন ঃ পাবনার চাটমোহরের করকোলা স্নান ঘাটে ঐতিহ্যবাহী গঙ্গা স্নান অনুষ্ঠিত।)
