ইচ্ছে পূরণ- ছোট গল্প

সাইলা ইয়াসমিন আজ খুব সকালে ঘুম থেকে উঠেছেন। তাকে আজ স্কুলে একটু আগেই যেতে হবে।   তিনি একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চাকুরি করেন। তার উপর দায়িত্ব পড়েছে ছোট্ট শিশুদের নিয়ে একটি শিক্ষা সফরে যেতে হবে। তিনি দারুণ খুশি। শিশুদের আনন্দেরও যেন বাধ মানছে না। কিন্তু ছোট্ট শিশু সাদিয়ার মনে আনন্দ নেই। শিক্ষা সফরে তার সব বন্ধুরা যাবে কিন্তু সে যেতে পারবে না। সাদিয়ার বাবা একজন দিন মজুর। কিছুদিন যাবত সে অসুস্থ। সংসারের খাবার জোগাড় করতেই সে হিমসিম খাচ্ছে, সাদিয়ার ইচ্ছে পূরুণ কিভাবে করবে। কিন্তু ছোট্ট সাদিয়ার মনতো মানে না। সে সবার সাথে শিক্ষা সফরে যেতে চায়। শিক্ষা সফরে যেতে হলে তাকে ৪০০ টাকা দিতে হবে। ক্লাশে সাইলা ইয়াসমিন এলো। তার হাতে কিছু চকলেট। সব বাচ্চারা তাকে ঘিরে ধরলো। সবাই খুব মজা করতে লাগলো। তিনি এক এক করে সবাইকে চকলেট দিলেন। চকলেট দেয়া শেষ হলে তিনি শিক্ষা সফর নিয়ে কথা বলা শুরু করলেন। সব শিশুরা আনন্দে লাফালাফি করতে লাগলো। কিন্তু শুধু সাদিয়া চুপ করে রইলো। ভীষণ মন খারাপ সাদিয়ার। সাইলা ইয়াসমিনের নজর গেলো সাদিয়ার দিকে। সে সাদিয়ার কাছে এগিয়ে গেলো। সাদিয়ার চোখে জল টলমল করছে। সাইলা ইয়াসমিন সব শুনলো সাদিয়ার কাছ থেকে। সে সাদিয়াকে আদর করে বললো তুমিও সবার সাথে যাবে। সবার সাথে খেলবে ও আনন্দ করবে। সাদিয়া এখন খুব খুশি। তার ম্যাডাম তাকে বলেছে এতেই তার সব কষ্ট দূর হয়ে গেছে। কিন্তু তার টাকা কোথা থেকে জোগাড় হবে এ চিন্তা আর তার নেই। সাইলা ইয়ামমিন ভাবলো সে নিজে সাদিয়ার টাকাটা দিয়ে দিবে। কিন্তু তার মাথায় একটি দারুণ আইডিয়া এলো। সে ভাবলো সাদিয়ার বিষয়টিকে কেন্দ্র করে সে ক্লাশের বাকি শিশুদের মাঝে সহযোগিতার মনোভাব তৈরি করকে। কিভাবে একে অপরকে উপকার করা যায় এই মনোভাব তৈরি করবে। সে সব বচ্চাদেরকে জিজ্ঞাসা করলো সাদিয়া তোমাদের কেমন বন্ধু?  সবাই হাত উঠিয়ে উত্তর দিল খুব ভাল বন্ধু ম্যাম। সাইলা বললো ঠিক আছে, হাত নামাও। সাদিয়ার যদি কোন সমস্যা হয় তোমরা ওকে সহায়তা করবে না?সবাই একযোগে বললো হ্যাঁ ম্যাম আমরা সবাই সহায়তা করবো। সাইলা বললো, তোমরাতো জানো সাদিয়ার বাবা অসুস্থ। সাদিয়ার শিক্ষা সফরের জন্য ৪০০ টাকা লাগবে। তোমার সবাই সহায়তা করলে সাদিয়া তোমাদের সাথে যেতে পারবে।তোমরা যদি সবাই ১০ টাকা করে দাও তবে সাদিয়ার টাকাটি পরিশোধ হবে। সাইলা জানে শিশুদের কাছে ১০ টাকা নাও থাকতে পারে। তাছাড়া সবাইকে তাদের বাবার কাছ থেকে অানতে হবে। সাইলা বললো, তোমরা সবাই তোমাদের টিফিনের টাকা থেকে ২ টাকা করে জমা করবে। এভাবে পাঁচ দিনে দেখবে তোমাদের প্রত্যেকের কাছে ১০ টাকা হয়ে গেছে। পাঁচ দিন পর আমাকে তোমরা ১০ টাকা করে দিবে। ঐ ক্লাসে মোট ৪৫ জন শিশু আছে। পাঁচ দিন পর সবাই ১০ টাকা করে সাইলার কাছে জমা করলো। ৪৪০ টাকা জমা হল। সাদিয়ার জন্য লাগবে ৪০০ টাকা। বাকি চল্লিশ টাকা দিয়ে সবার জন্য চকলেট আনা হলো। টাকা হাতে নিয়ে সাইলা সবাইকে বললো, দেখ সাদিয়ার সমস্যা কত সহজে সমাধান হল। সবাই সহযোগিতা করলে একটি কাজ কত সহজ হয়ে যায়। দশে মিলে কাজ করলে কোন সমস্যাই সমস্যা নয়। শিশুরাও সাইলার এই অভিনব কৌশলকে খুব উপভোগ করলো। সবার ক্ষুদ্র সহযোগিতায় সাদিয়ার অনেক বড় ইচ্ছে পূরুণ হল।