ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন মামলায় প্রধান আসামী নকুল চন্দ্র শর্মাকে জেলহাজতে প্রেরন

নির্মল বড়ুয়া মিলন, রাঙামাটি জেলা প্রতিনিধি :: এক নারীর বিরুদ্ধে অশ্লীল ভিডিও প্রকাশ করে নানাভাবে হয়রানী করার অপরাধে রাঙামাটি বরকল থানায় ডিজিটাল নিরাপত্ত্বা আইনে মামলার প্রায় ৬ মাস পর মামলার প্রধান আসামী নকুল চন্দ্র শর্মাকে আটক করেছে পুলিশ।

গতকাল রবিবার ২৭ ডিসেম্বর বিকাল ৩টায় চট্টগ্রামে কর্ণফুলী থানার মজ্জারটেক এলাকার সনজিত সেলুন থেকে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেষ্টিগেশন(পিবিআই) সদস্যারা নকুল চন্দ্র শর্মা (৩১ কে আটক করে চট্টগ্রামের দক্ষিণ কুলশী পিবিআই কার্যালয়ে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পিবিআই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বরকল থানার সাব ইন্সপেক্টর মো. কামাল হোসেনের কাছে হস্তান্তর করেন।
আজ সোমবার ২৮ ডিসেম্বর বেলা আড়াইটায় রাঙামাটি কোতয়ালী থানায় এনে মামলার নথি প্রস্তুত করে রাঙামাটি চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আসাদ উদ্দীন আসিফ এর আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরন করেন।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আদালতের জিআরও সাব ইন্সপেক্টর নয়ন কান্তি দাশ।

আগামীকাল মঙ্গলবার ২৯ ডিসেম্বর আটককৃত আসামী নকুল চন্দ্র শর্মাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ডের জন্য আদালতে আবেদন করা হবে বলে জানিয়েছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বরকল থানার সাব ইন্সপেক্টর মো. কামাল হোসেন।

এদিকে ভুক্তভোগী ঐ নারীর অভিযোগ অপর চার আসামী পুলিশের নাগের ডগায় প্রকাশ্যে চলাফেরা করলেও অজ্ঞাত কারণে আটক করছেনা পুলিশ। মামলার ঐ আসামীরা হলো- ২। মো. সোহেল ৩। মো. সুমন পারভেজ উভয়ের পিতা- আব্দুল মালেক, গ্রাম- হরিণা বাজার এলাকা (আমতলা), ৪। মো. ইউছুফ রানা, পিতা-মৃত আলি আহম্মদ, গ্রাম- হরিণা বাজার এলাকা (আমতলা), থানা- বরকল, উপজেলা- বরকল ও ৫। অমর শান্তি চাকমা, পিতা- চিরনজীব চাকমা, মাতা- ইন্দ্রদেবী চাকমা, গ্রাম-কুসুমছড়ি, সুভলং, বর্তমান ঠিকানা- গ্রাম-ধনুবাগ-মাষ্টার পাড়া (সূর্যের হাসি ক্লিনিক ছ্টো হরিণা শাখা), থানা- বরকল, উপজেলা- বরকল, জেলা-রাঙামাটি পার্বত্য জেলা।

উল্লেখ্য, মামলার বিবরনে জানা যায়, গত ২০১৬ সালের ১লা অক্টোবর মাসে রাঙামাটি জেলার বরকল উপজেলায় ছ্টো হরিণায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে বাদি চাকুরীতে যোগদান করেন। কর্মস্থলে থাকার সুবাদে ১১ ডিসেম্বর ২০১৭ সালে ছোট হরিণা বাজারের ব্যবসায়ী নকুল চন্দ্র শর্মা, পিতা-মৃত সুধন চন্দ্র শর্মা, গ্রাম- হরিণা বাজার এলাকা, থানা- বরকল, উপজেলা- বরকল, জেলা-রাঙামাটি পার্বত্য জেলা এর সাথে বাদির পরিচয় ঘটে। সেই সুবাদে নকুল চন্দ্র শর্মা বাদির অফিসে প্রায় সময় যাতায়াত করিত, এক পর্যায়ে তার সাথে বাদির ঘনিষ্ঠতার মাধ্যমে বন্ধুত্ব সর্ম্পক গড়ে উঠে। পরিচয় হওয়ার কারণে রাঙামাটি জেলার বরকল উপজেলায় ছ্টো হরিণা শাখায় বসে গত ১০ জুলাই-২০১৮ সালে ব্যবসায়ী নকুল চন্দ্র শর্মা তার ব্যবসার পুজির জন্য প্রথম কিস্তিতে নগদ সত্তর হাজার টাকা লোন হিসাবে বাদির নিকট থেকে গ্রহন করে। সত্তর হাজার টাকা লোন নেয়ার একমাস পর বিকাশের মাধ্যমে নকুল চন্দ্র শর্মা বাদির নিকট থেকে আবার ২২ আগষ্ট-২০১৮ সালে বিকাশের মাধ্যমে ২য় কিস্তিতে ত্রিশ হাজার টাকা লোন হিসাবে গ্রহন করে এবং বাদির পাওনা একলক্ষ টাকা দুই মাসের মধ্যে ফেরত দিবে বলে মৌখিক শর্ত দেয় । পরবর্তীতে বেশ কয়েকমাস পরে বাদি তার নিজের মুঠোফোন নাম্বার থেকে নকুল চন্দ্র শর্মার মুঠোফোন নাম্বার ০১৮৬৬৬৭০০২৫ ও ০১৮৬৬৬৭০০২৬ লোন নেয়া মোট এক লক্ষ টাকা ফেরৎ চান। নকুল চন্দ্র শর্মার কথা মত এক সপ্তাহ পর তার কাছ থেকে পাওনা টাকার জন্য মুঠোফোন ০১৮৬৬৬৭০০২৫ ফোন দিলে সে বাদির নিকট থেকে আরো সময় চায়, এভাবে সময় ক্ষেপন করে নকুল চন্দ্র শর্মা বিভিন্ন অজুহাত দেখাতে থাকে অনেক সময়ে তার ০১৮৬৬৬৭০০২৫ ও ০১৮৬৬৬৭০০২৬ দুইটি নাম্বারই বন্ধ রাখে।
বাদির পারিবারিক কাজে টাকার প্রয়োজনে নকুল চন্দ্র শর্মাকে তার নিকট থেকে বাদির পাওনাা একলক্ষ টাকার জন্য চাপ প্রয়োগ করিলে নকুল চন্দ্র শর্মা গত ১১ জানুয়ারি-২০১৯ তারিখ ০১৮৬৬৬৭০০২৫ ও ০১৮৬৬৬৭০০২৬ ইমু নাম্বার থেকে বাদির ইমু নাম্বারে একটি পর্ণো ভিডিও পাঠায়।
নকুল চন্দ্র শর্মা বাদিকে ফোন করে বলে যে, বাদি যেন তার পাঠানো পর্ণো ভিডিও টি দেখেন। বাদি এক পর্যায়ে নকুল চন্দ্র শর্মার পাঠানো পর্ণো ভিডিও ক্লিপ দেখার পর হতভম্বব হয়ে পড়েন।
বাদি পর্নেগ্রাফি ভিডিও ক্লিপটি দেখার পর কৌশলে তাকে এধরনের অসামাজিক ভিডিও ক্লিপ মুছে ফেলতে (ডিলেট করিতে) অনুরোধ জানান। নকুল চন্দ্র শর্মার নিকট থেকে লোন বাবদ বাদির পাওনা একলক্ষ টাকা ফেরৎ চাইলে সে অসামাজিক ভিডিও ক্লিপটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনলাইনে প্রকাশ করার হুমকি দেয় এবং বাদির নিকট থেকে আরো নকুল চন্দ্র শর্মা পঞ্চাশ হাজার টাকা দাবি করে। বাদি তাকে অনুরোধ করেন যে, তার স্বামী অসুস্থ্য। নকুল চন্দ্র শর্মার কথা মতো টাকা না দেওয়াতে সে বাদির নিকট থেকে তার ব্যবসার জন্য লোন নেয়া একলক্ষ টাকা ফেরৎ না দিয়ে বাদির ইচ্ছার বিরুদ্ধে গোপনে ধারন করা পর্নেগ্রাফি ভিডিও ক্লিপ দেখিয়ে বাদিকে বার বার ব্যাক্লমেইলিং করিতে থাকে। সে বাদিকে মোবাইলের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের ভয়-ভীতি দেখায়।
নকুল চন্দ্র শর্মার ব্যাক্লমেইলিং বাদি বুঝিতে পারিয়া ভয়ে বাদি তার সাথে সকল ধরনের যোগ যোগ বন্ধ করে দেয়। এর পর নকুল চন্দ্র শর্মা তার নতুন মুঠোফোন নাম্বার ০১৬৪৩১৭০২০, ০১৬৩১৯৯৩৬৩৭, ০১৮২৮৮০১৪২৯ থেকে ফোন দিয়ে বাদিকে বিরক্ত করে এবং তার সাথে কথা বলতে বাদিকে বাধ্য করে তার কথা মেনে বাদিকে চট্টগ্রাম যেতে বলে।
বিশ^াস ঘাতক ও প্রতারক নাপিত নকুল চন্দ্র শর্মার কথা মতো শেষে বাদি চট্টগ্রাম না যাওয়াতে এবং তার দাবিকৃত টাকা না পাঠানোর প্রেক্ষিতে পর্নেগ্রাফি ভিডিও ক্লিপটি হরিণা বাজারে তার বন্ধু মোবাইল দোকানদার মো. সোহেল (মুঠোফোন নাম্বার-০১৮৪৫৮০৬৯০৬, ০১৬৩৫৪৭৭৭৬৮, ০১৬২৪০৯০৩১৯) ও মো. সুমন পারভেজ (মুঠোফোন নাম্বার-০১৬৮৭৫৯৩০৪৪, ০১৬১৬৪২৮৫২৮, ০১৬১৮৯০০৮৮০), উভয়ের পিতা- আব্দুল মালেক, গ্রাম- হরিণা বাজার এলাকা (আমতলা), থানা- বরকল, উপজেলা- বরকল, জেলা-রাঙামাটি পার্বত্য জেলা নিকট পাঠিয়ে দেয়।
চক্রটি মুঠোফোন নাম্বার থেকে ফোন করে তাদের দাবি মত টাকা দিতে বলে অন্যতায় গোপনে ধারণকৃত পর্নেগ্রাফি ভিডিও ক্লিপটি অনলাইনে ছেড়ে দেয়ার হুমকি দেয়।
বাদি আর্থিক সংকটে থাকার পরও বিকাশের মাধ্যমে গত ৮ জানুয়ারি-২০২০ তারিখ প্রথম কিস্তিতে দশ হাজার, ১১ ফেব্রুয়ারি-২০২০ তারিখ ২য় কিস্তিতে দশ হাজার, ৭ মার্চ-২০২০ তারিখ দশ হাজার, মো. সোহেল ও মো. সুমন পারভেজকে তিন কিস্তিতে ত্রিশ হাজার টাকা বিকাশের মাধ্যমে পাঠিয়ে দেয়। এর পরও বাদির সাথে নকুল চন্দ্র শর্মা প্রতারক চক্রের ব্যাক্লমেইলিং বন্ধ হয়নি।
নতুন করে মো. ইউছুফ রানা (মুঠোফোন নাম্বার-০১৮২০৩৩০৮০১, পিতা-মৃত আলি আহম্মদ, গ্রাম- হরিণা বাজার এলাকা (আমতলা), থানা- বরকল, উপজেলা- বরকল, ও অমর শান্তি চাকমা (মুঠোফোন নাম্বার-০১৬৩২৬৮৩৭০৯,০১৬৩৮৫৬০৭৯২), পিতা- চিরনজীব চাকমা, মাতা- ইন্দ্রদেবী চাকমা, গ্রাম-কুসুমছড়ি, সুভলং, বর্তমান ঠিকানা- গ্রাম-ধনুবাগ-মাষ্টার পাড়া (সূর্যের হাসি ক্লিনিক ছ্টো হরিণা শাখা), থানা- বরকল, উপজেলা- বরকল, জেলা-রাঙামাটি পার্বত্য জেলা নকুল চন্দ্র শর্মার ধারণকৃত পর্নেগ্রাফি ভিডিও ক্লিপটি দেখিয়ে বাদির নিকট থেকে পঞ্চাশ হাজার চাঁদা দাবি করে। তাদের দাবি কৃত চাঁদা না দিলে নকুল চন্দ্র শর্মার ধারণকৃত পর্নেগ্রাফি ভিডিও ক্লিপটি স্থানীয়দের মাঝে প্রচার করে দেয়ার হুমকি দেয় এবং অস্ত্রধারীদের কাছে নকুল চন্দ্র শর্মার ধারণকৃত পর্নেগ্রাফি ভিডিও ক্লিপটি পৌছে দিয়ে বাদিকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। প্রতি নিয়ত নকুল চন্দ্র শর্মা প্রতাররক চক্র বাদিকে অনলাইনে যৌন হয়রানি ও মানষিক নির্যাতন করতে থাকে।