তৃণমূলের নেতা রাসেল নৌকা পাওয়ায় ভাঙ্গুড়ায় চলছে উৎসব

পাবনার ভাঙ্গুড়া পৌরসভা নির্বাচনে বর্তমান মেয়র গোলাম হাসনাইন রাসেল দ্বিতীয়বারের মতো আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়ায় উপজেলা জুড়ে মিষ্টি খাওয়ানোর ধুম পড়ে গেছে। পৌরসভা ছাড়াও উপজেলার ৬ টি ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগসহ অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতারা সাধারণ মানুষের মধ্যে মিষ্টি বিতরণ করছেন। শুক্রবার রাতে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের আনুষ্ঠানিক ঘোষণার পর থেকেই উপজেলা জুড়ে এই মিষ্টি বিতরণের উৎসব চলছে। আগামী ১৬ জানুয়ারি ভাঙ্গুড়া পৌরসভা নির্বাচনে ব্যালটের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। ভোটার ও দলীয় নেতাকর্মীদের মতে ভাঙ্গুড়া পৌরসভা নৌকার মনোনয়ন পাওয়া মানেই নিশ্চিত জয়। কেননা ১৯৯৯ সালে ভাঙ্গুড়া পৌরসভা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে গত চারটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতা মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। এ অবস্থায় মেয়র রাসেল আজ রবিবার মনোনয়নপত্র উপজেলাা রিটার্নিং অফিসারের নিকট দাখিল করেন। এসময় উপজেলা পরিষদ চত্বরে দলীয় নেতাকর্মীসহ সর্বস্তরের জনগণের ঢল নামে।
দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পাবনার ভাঙ্গুড়া পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম হাসনাইন রাসেল পৌরসভার মেয়র ভাঙ্গুড়া উপজেলার দলীয় নেতাকর্মীসহ সকল শ্রেণী-পেশার মানুষের কাছে জনপ্রিয় নেতা। পাবনা-৩ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব মকবুল হোসেনের জৈষ্ঠ্য সন্তান রাসেল পৌরসভার নেতা হলেও উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের বিভিন্ন গ্রামে দলীয় নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষের বিপদে-আপদে সবসময় পাশে দাঁড়ান। অত্যন্ত সাদামাটা জীবনে অভ্যস্ত রাসেল ভাঙ্গুড়া উপজেলায় গরীবের নেতা বলে পরিচিত। উপজেলার প্রত্যেকটি গ্রামের শিশু থেকে বয়স্ক মানুষ পর্যন্ত রাসেল নামে তাকে এক ডাকে মেয়র হিসেবে চেনে। মানুষের বিপদে-আপদে আর্থিক সহযোগিতা ছাড়াও বিভিন্ন এলাকায় দরিদ্র মানুষদের ন্যায্য বিচার পাইয়ে দিতে রাসেলের ভূমিকা এই উপজেলায় অদ্বিতীয়। এরওপর গত নির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পরে ভাঙ্গুড়া পৌর এলাকায় রাস্তাঘাটের উন্নয়ন, প্রতিটি মহল্লায় পয়নিস্কাশন ব্যবস্থা করা, শহর আলোকিতকরণ, সৌন্দর্য বৃদ্ধি, শিশু পার্ক নির্মাণ, নিজে অভিযান পরিচালনা করে মাদকসেবীদের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে সোপর্দ করা এবং করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে নিরন্তর জনসেবা দেয়ায় পৌরবাসীর মনে শক্ত জায়গা করে নেন রাসেল। তাই দ্বিতীয় মেয়াদে পৌর নির্বাচনে নৌকার মনোনয়ন পাওয়ায় শুক্রবার দিনভর উপজেলার প্রত্যেক গ্রামে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সাধারণ মানুষের মধ্যে মিষ্টি বিতরণ করছেন। এছাড়া ইউনিয়নের নেতাকর্মী এবং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও মেম্বাররা মিষ্টি নিয়ে রাসেলের কার্যালয়ে এসে  আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মিষ্টি খাওয়ান। 
ভাঙ্গুড়া পৌরসভার এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী গোলাম হাসনাইন রাসেল ও বিএনপির প্রার্থী আব্দুল কাদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। এই দুই প্রার্থীর বাইরে অন্য কোনো প্রার্থীর নির্বাচনে অংশ নেয়ার ব্যাপারে আগ্রহ বা প্রচারণা দেখা যাচ্ছেনা। যদিও বিষয়টি আজ বিকালে নিশ্চিত হয়ে যাবে। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী আরো দুই নেতা থাকলেও এরইমধ্যে আজাদ খান গোলাম হাসনাইন রাসেলকে সমর্থন দিয়েছেন। আর বিএনপি থেকে দলের একমাত্র প্রার্থী হওয়ায় বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আবদুল কাদেরকে দলীয় প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হয়। তবে গোলাম হাসনাইন রাসেল ছাড়া মনোনয়ন প্রত্যাশী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার আব্দুর রহমান প্রধান অথবা সাংগঠনিক সম্পাদক আজাদ খান দলীয় মনোনয়ন পেলে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক প্রার্থী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু রাসেল আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়ায় ঘোষণা দেওয়া এসব প্রার্থীরা নির্বাচন থেকে নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ভাঙ্গুড়া পৌরশহরের প্রায় ৭০ শতাংশ ভোটার স্বাধীনতার পর থেকেই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে সমর্থন দিয়ে আসছে। আওয়ামী লীগ অধ্যুষিত এলাকা হওয়ার কারণে ২০০১ সালে ভাঙ্গুড়া পৌরসভার প্রথম নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতা ওসমান গনি, ২০০৬ সালে আওয়ামী লীগ নেতা বাকী বিল্লাহ, ২০১১ সালে আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুর রহমান ও সর্বশেষ ২০১৫ সালে আওয়ামী লীগ নেতা গোলাম হাসনাইন রাসেল মেয়র নির্বাচিত হন। ২০১১ সালের নির্বাচন ছাড়া বিএনপির প্রার্থীরা অন্য তিনটি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাই করতে পারেননি। ফলে এই পৌরসভায় আওয়ামী লীগের সমর্থন পাওয়াকে মেয়র নির্বাচিত হওয়ার একমাত্র যোগ্যতা হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

ভাঙ্গুড়া উপজেলা ও পৌর আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা বলেন, ভাঙ্গুড়া পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সমর্থন পেলে অনেকটাই নিশ্চিত হয়ে যায় মেয়র নির্বাচিত হওয়া। এরপর বর্তমান সময়ে রাসেলের মত জনপ্রিয় নেতা নৌকা পাওয়াতে প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন ভোটে নির্বাচিত হবেন তিনি। রাসেল পৌরসভার দলীয় নেতাকর্মী ছাড়াও উপজেলা আওয়ামী লীগের দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে সাংগঠনিকভাবে সর্বদা যোগাযোগ রাখেন। উপজেলায় আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের যেকোনো প্রয়োজনে আশা ভরসার জায়গা হচ্ছে রাসেল। তাই রাসেল দ্বিতীয় মেয়াদে পৌর নির্বাচনে নৌকা পাওয়ায় পৌরসভা সহ উপজেলার সর্বস্তরের দলীয় নেতাকর্মীদের মাঝে আনন্দের বন্যা বয়ে যাচ্ছে। 
মেয়র গোলাম হাসনাইন রাসেল বলেন, গত ৫ বছর সর্বদা চেষ্টা করেছি পৌরবাসীকে সকল প্রকার সেবা দিতে। শহরের প্রধান সড়কগুলো প্রশস্ত করার পাশাপাশি বিভিন্ন মহল্লায় নতুন নতুন সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। প্রতিটি মহল্লায় পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নতি করায় মানুষের ভোগান্তি লাঘব হয়েছে। করোনার সময় মানুষকে ঘরে রাখার পাশাপাশি কর্মহীন মানুষদের খাবার যোগান দিয়েছি। একসময় ভাঙ্গুড়া পৌরশহরে মাদকের ব্যাপক বিস্তার ছিল। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতা নিয়ে অনেক মাদক ব্যবসায়ীকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে এনেছি। আনন্দ বিনোদনের জন্য শিশু পার্ক করে দিয়েছি। পৌরবাসীর পাশাপাশি উপজেলার সকল এলাকায় সাধ্যমত মানুষকে সেবা দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছি। দলীয় নেতাকর্মীদের সাংগঠনিকভাবে একত্রে রেখে দলকে আরও সুসংগঠিত করার প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। তাই আমি আবারও আওয়ামী লীগের সমর্থন পাওয়ায় নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষ আমাকে ভালোবেসে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছে। দ্বিতীয় মেয়াদে আমাকে নৌকার প্রার্থী করায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছে আমি এবং আমার পরিবার কৃতজ্ঞ।