ইয়ানূর রহমান : যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে সরকারের বিনামূল্যে সরবরাহকৃত সেফটিএক্সোন ইনজেকশন ওয়ার্ডে সরবরাহ বন্ধ করা হয়েছে। মেয়াদ শেষের আগে সেফিপাইম ইনজেকশন শেষ করার জন্য ওয়ার্ডে সরবরাহ করার কারণে কর্মকর্তারা এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এতো দিন স্টোর বন্দি ছিলো সেফিপাইম। কয়েকজন চিকিৎসক জানিয়েছেন, সেফটিএক্সোন ও সেফিপাইম ইনজেকশনের কাজ অনেকটা আলাদা। সব রোগীর শরীরে সেফিপাইম প্রয়োগ করা যায়না। ফলে রোগীর জন্য বাইরে থেকে সেফটিএক্সোন কিনতে হচ্ছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে হাসপাতালের একজন সিনিয়র চিকিৎসক জানিয়েছেন, সেফটিএক্সোন ও সেফিপাইম দুটো ইনজেকশনই সিফালোস্পরিন এন্টিবায়োটিক। ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ চিকিৎসায় দুটো ব্যবহার করা যায়। কিন্তু সেফটিএক্সোন সব রোগীর শরীরের প্রয়োগ করা গেলেও সেফিপাইমের ক্ষেত্রে ভিন্ন। কারণ হিসেবে তিনি জানান, সেফিপাইম ফোর জেনারেশনের আর সেফটিএক্সোন হলো থার্ড জেনারেশনের ইনজেকশন। যে কারণে সেফিপাইমের পাওয়ার বেশি। ওই চিকিৎসক আরো জানান, সেফটিএক্সোন মহিলা প্রজনন অঙ্গের সংক্রমণ (গনোরিয়া), পেলভিক প্রদাহ রোগ,ফুসফুসের সংক্রমণ ,চামড়া, রক্ত হাড় ও পেটের ব্যাকটেরিয়ার ক্ষেত্রে সচরাচার ব্যবহার হয়। আর সেফিপাইম নিউমোনিয়া, ত্বক, কিডনি এবং মূত্রনালীর সংক্রমণে আক্রান্ত রোগীর ক্ষেত্রে অহরহ ব্যবহার হয়ে থাকে। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে সেফটিএক্সোন ও সেফিপাইম ইনজেকশনের কাজ প্রায় এক। তার পরেও সেফিপাইমের পাওয়ার বেশি হওয়ায় চিকিৎসকরা রোগীর জন্য প্রথম অবস্থায় সেফটিএক্সোন ইনজেকশন লেখেন। এতে কাজ না হলে দ্বিতীয় ধাপে সেফিপাইমের ব্যবহার করা হয়। একাধিক
রোগীর ব্যবস্থাপত্রে দেখা গেছে চিকিৎসক সেফটিএক্সোন ইনজেকশন লিখেছেন। ফলে ওয়ার্ডে দায়িত্বরত সেবিকারা বাইরে থেকে ইনজেকশন কেনার জন্য কাগজ ধরিয়ে দিচ্ছেন। রোগীর স্বজন শিমুল জানান, প্রতিদিন ২৮০ টাকা দিয়ে বাইরে থেকে দুটি করে সেফটিএক্সোন ইনজেকশন কিনে আনতে হচ্ছে। শিমুলের মতো অনেকেই এধরণের কথা জানিয়েছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন সেবিকা জানান, প্রায় ১ মাস হলো সেফটিএক্সোন ইনজেকশন স্টোর থেকে সরবরাহ করা হচ্ছে না। চাহিদাপত্র দিলেই সেফটিএক্সোন না দিয়ে সেফিপাইম দেয়া হচ্ছে। চিকিৎসক না লিখলে তারা রোগীকে সেফিপাইম দিচ্ছেন না।
স্টোর থেকে বলা হয়েছে, সেফিপাইম শেষ না হওয়া পর্যন্ত সেফটিএক্সোন সরবরাহ করা হবে না। তাই বাইরে থেকে সেফটিএক্সোন কিনে আনতে বলা হচ্ছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে আরেক সেবিকা জানিয়েছেন, মেয়াদ শেষের কয়েক মাস আগেই বেশি বেশি সেফিপাইম সরবরাহ করা হচ্ছে। কিন্তু চিকিৎসক রোগীর ব্যবস্থাপত্রে খুব বেশি লিখছেন না । তাই দেয়া হচ্ছে না। ফলে রোগীর শরীরে প্রয়োগ না হয়ে ইনজেকশনের মেয়াদ শেষ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। শুরু থেকে অল্প পরিমাণে সেফিপাইম ওয়ার্ডে সরবরাহ করা হলে এমনটা হতো না। ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, সরকারি এ হাসপাতালে নি¤œবিত্ত ও মধ্যবিত্ত রোগীরাই ভর্তি হয়। আর্থিক সঙ্কটের কারণে তারা বেসরকারি হাসপাতালে যান না। তাদের ভরসা থাকে স্বল্প খরচে সরকারি হাসপাতালে সঠিক চিকিৎসা পাবেন। ওই সব রোগিরা হাসপাতালে ভর্তির পর পড়েন বেকায়দায়। মূল্যবান ওষুধ কিনতে গিয়ে রোগীর স্বজনেরা হাফিয়ে উঠছেন।
হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. আরিফ আহমেদ জানান, স্টোরে পর্যাপ্ত পরিমাণে সেফটিএক্সোন আছে। কিন্তু সেফিপাইম শেষ করার জন্য সেফটিএক্সোন সাপ্লাই বন্ধ রাখা হয়েছে।
ওষুধ আসার প্রথম থেকে সরবরাহ করা হয়নি কেনো জানতে চাইলে তিনি জানান, স্টোরে গিয়ে পর্যাপ্ত পরিমাণে সেফিপাইম দেখতে পায়। তাই মেয়াদ শেষের আগে শেষ করার জন্য বলা হয়েছে।
আরএমও আরো জানান, দুটো ওষুধের কাজ পুরোপুরি এক না। তবে যে রোগী সেফটিএক্সোন পাবে তাকে সেফিপাইম দেয়া যায়।