জাতির পিতার ভাস্কর্য ভাঙ্গার ঘটনায় বগুড়ায় সরকারী কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সন্মিলিত প্রতিবাদ

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য ভাঙ্গা এবং তার প্রতি অবমাননার ঘটনায় বগুড়ায় জেলার সকল দপ্তরের সরকারী কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা সন্মিলিতভাবে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। ‘জাতির পিতার সম্মান রাখবো মোরা অম্লান’ স্লোগানে শনিবার সকালে শহরের জেলা পরিষদ মিলনায়তনে এক প্রতিবাদ সমাবেশ আয়োজনের মাধ্যমে স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান ঘোষণা করেন জেলা পর্যায়ের নেতৃস্থানীয় কর্মকর্তাবৃন্দ।
বগুড়া জেলা প্রশাসক মো: জিয়াউল হকের সভাপতিত্বে বিভিন্ন দপ্তরের পক্ষে একাত্মতা প্রকাশ করে সমাবেশে পর্যায়ক্রমে বক্তব্য রাখেন জেলা ও দায়রা জজ নরেশ চন্দ্র সরকার, জেলা পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভূঞা বিপিএম (বার), জেলা সিভিল সার্জন ডা: মো: গওসুল আজিম চৌধুরী, জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক আবু সাঈদ মো: কাউছার রহমান, পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান, জনশক্তি অফিসের সহকারী পরিচালক আতিকুর রহমান (লাবু), জেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ডা: মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, জেলা কালচারাল অফিসার শাহাদৎ হোসেন, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স বগুড়ার সহাকারী পরিচালক মো: মানিকুজ্জামান প্রমুখ।
সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে ডিসি জিয়াউল হক বলেন, বঙ্গবন্ধু সোনার বাংলা গড়ার যে স্বপ্ন দেখে আমাদের এনে দিয়েছিল স্বাধীনতা তার সেই ঋণ কখনোই শোধ হবার নয় কিন্তু নিজেদের দায়বদ্ধতা থেকেই তার ভাস্কর্য ভাঙ্গার ঘটনায় তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করে উক্ত প্রতিবাদ সভার আয়োজন করা হয়েছে। তার ভাস্কর্য ভেঙ্গে স্বাধীনতার মহান স্থপতিকে অবমাননা করার ঘটনা সংবিধানকেও আঘাত হেনেছে। সভায় বিচার বিভাগের পক্ষে একাত্মতা ঘোষণা করে বগুড়া জেলা ও দায়রা জজ নরেশ চন্দ্র সরকার তার বক্তব্যে বলেন, জাতির পিতার ভাস্কর্য ভাঙ্গার ঘটনায় সারাদেশের সকলের ন্যায় বিচার বিভাগও উদ্বিগ্ন হয়েছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর প্রতি অবমাননা ছাড়াও স্বাধীনতাবিরোধী একটি গোষ্ঠী ধর্মকে পুঁজি করে দেশকে অস্থিতিশীল করার প্রয়াস করছে যা ঐক্যবদ্ধভাবে সকলকে মোকাবেলা করতে হবে। পৃথিবীর কোন ধর্মই অশান্তির পথ দেখায় না মর্মে তিনি সকলকে দেশপ্রেম এবং ধর্মীয় মর্যাদা যথাযথ অক্ষুন্ন রেখে শান্তির পথে চলার জন্যে আহ্বান জানান। সভায় জেলা পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভূঞা বিপিএম (বার) বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুই সর্বপ্রথম ওআইসি তে ইসলামের পক্ষে বক্তব্য দিয়েছিলেন, তার হাত ধরেই এদেশে নির্মিত হয়েছে সর্ববৃহৎ ইসলাম গবেষণা কেন্দ্র ইসলামিক ফাউন্ডেশন পরবর্তীতে জাতির পিতার কণ্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে আজ দেশের প্রতিটি উপজেলায় নির্মিত হয়েছে মডেল মসজিদ, কওমী মাদ্রাসার সনদ প্রদানসহ মাদ্রাসা ছাত্রদের সরকারি চাকুরী করার স্বীকৃতি প্রদানসহ ধর্ম,বর্ণ, নির্বিশেষে দেশব্যাপী অসাম্প্রদায়িক ইতিবাচক পরিবেশ তৈরি হয়েছে। কিন্তু এত অবদানের পরও যারা বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যকে মূর্তি বলে তার প্রতি অবমাননা করে তা ভাঙ্গার দু:সাহস দেখিয়েছে তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে মুছে দেওয়ার পায়তারা করছে। এই মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি অবশ্যই দেশের শত্রু এবং রাষ্ট্রের শত্রু। সমাবেশে বাকি বক্তারাও তীব্র নিন্দার সাথে উক্ত ঘটনার প্রতিবাদ জ্ঞাপন করেন এবং মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তিতে দৃঢ় অবস্থান নিয়ে সকল অপশক্তি মোকাবেলার প্রতিশ্রুতি প্রদান করেন।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) উজ্জ্বল কুমার ঘোষের সঞ্চালনায় এবং নেজারত ডেপুটি কালেক্টর (এনডিসি) জি এম রাশেদুল ইসলামের ব্যবস্থাপনায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে অনুষ্ঠানে এসময় অন্যান্যদের মাঝে উপস্থিত ছিলেন স্পেশাল জজ ইমরান হোসেন চৌধুরী, নারী ও শিশু ট্রাইব্যুনাল-২ আদালতের বিচারক (জেলা জজ) নূর মোহাম্মদ শাহরিয়ার কবির, চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট রবিউল আওয়াল, এডিসি (রাজস্ব) আব্দুল মালেক, এডিএম সালাহ্উদ্দিন আহম্মেদ, জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার যথাক্রমে আলী হায়দার চৌধুরী (প্রশাসন), আব্দুর রশিদ (অপরাধ), মোতাহার হোসেন (ডিএসবি), ফয়সাল মাহমুদ (সদর সার্কেল), গাজিউর রহমান (শেরপুর সার্কেল), বগুড়া সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা আজিজুর রহমান, এনএসআই বগুড়ার উপ-পরিচালক মাজহারুল ইসলাম মামুন, জেলা শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা শাহ মো: ইসাহাক আলী, সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট আশরাফুর রহমানসহ জেলা প্রশাসনের সকল নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেটগণ, জেলার সকল সরকারী দপ্তরের প্রধানগণ, জেলা পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাবৃন্দ, গোয়েন্দা ও নিরাপত্তা সংস্থার কর্মকর্তাবৃন্দ প্রমুখ।